এত দিন নিরীহ যাত্রীরাই অটোচালকদের কোপে পড়তেন। এ বার তাঁদের ‘দাদাগিরি’র শিকার হতে হল খোদ শাসক দলের এক নেতাকে। নিয়ম ভেঙে অটোয় বেশি যাত্রী তোলা এবং হেডলাইট নিভিয়ে অটো চালানোর প্রতিবাদ করায় সৃজন বসু নামে ওই নেতাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে এলাকার বেশ কিছু অটোচালকের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সিঁথিতে। সৃজনবাবু কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সিঁথি, দমদম রোড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অটোরাজ। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া পুলিশের সামনে শাসক দলের মদতে প্রচুর বেআইনি অটো চলে সেখানে। আরও অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে বেশি যাত্রী তোলার পাশাপাশি রাতে হেডলাইট নিভিয়েও অটো চালান এক শ্রেণির বেপরোয়া চালক। প্রতিবাদ করলেই যাত্রীদের উপরে চড়াও হন ওই অটোচালকেরা। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই চালকদের বেশির ভাগই তৃণমূল সদস্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বেশ কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে ওই অটোচালকদের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করে আসছেন সৃজনবাবু। স্থানীয় নেতা হওয়ার সুবাদে তাঁর প্রতিবাদে কিছুটা সুফলও মেলে বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু সোমবার ফল হল ঠিক উল্টো।
কী হয়েছিল ওই রাতে? সৃজনবাবু জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ আর জি কর থেকে দমদম রোড ধরে একটি অটো বেদিয়াপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। হেডলাইট নেভানো ওই অটোটি কাছে আসতেই তিনি দেখেন, তাতে সাত জন যাত্রী রয়েছেন। চালককে তিনি অটো থামাতে বলেন। এ নিয়ে অটোচালকের বচসা বাধলে যাত্রীরাও নেমে যান। এর পরে আর জি কর-৩০এ বাসস্ট্যান্ড রুটের ওই অটোটিকে কাছের তৃণমূল পার্টি অফিসে নিয়ে যেতে বলেন সৃজনবাবু। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন ধরেই অটোরাজের প্রতিবাদ করে আসছি। এই অটোটিকে পার্টি অফিসে নিয়ে এসে ট্রাফিক পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ আইন ভাঙার অপরাধে ওই চালককে একটি কেসও দেয়। বিষয়টি সাময়িক ভাবে মিটেও যায়।”
কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরে ফের গোলমাল বাধে। সৃজনবাবুর অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরে ওই অটোচালক প্রচুর লোকজন নিয়ে পার্টি অফিসের চত্বরে আসেন। তাঁকে যথেচ্ছ গালিগালাজ করা হয়। এমনকী, প্রতিবাদ করায় তাঁকে চূড়ান্ত হেনস্থাও করা হয় বলে ওই নেতার অভিযোগ। সৃজনবাবু বলেন, “আমায় হেনস্থা করা হয়। শুধু তা-ই নয়, পার্টি অফিসের অদূরে রাখা আমার গাড়িতেও ইট ছোড়া হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ইউনিয়নের নাম ভাঁড়িয়ে বেআইনি ভাবে এই অঞ্চলে বেশ কিছু অটো চলছে।”
আইএনটিটিইউসি নেতা মেঘনাদ পোদ্দার বলেন, “এই এলাকায় বেশ কিছু অটো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই রাস্তায় চলছে। এ ব্যাপারে পুলিশকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। ওই চালকেরা কোনও ভাবেই আমাদের সংগঠনের সদস্য নন। তবে, আমাদের ইউনিয়নের তরফ থেকে অটোচালকদের কোনও রকম অশালীন ব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না। আমরা সে কথা আমাদের সমস্ত ইউনিয়নের সদস্যদের জানিয়েছি। যাঁরা অন্যায় করছেন, তাঁদের বরদাস্ত করা হবে না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা যাঁকে ওই এলাকার অটো ইউনিয়ন সামলাতে দেখেন, সেই তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেন বলেন, “সৃজনবাবুর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যে ইউনিয়নই এটা করে থাকুক, কোনও ভাবেই তা বরদাস্ত করা যাবে না। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy