Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
TMC

TMC: কেউ পেলেন ‘পুরস্কার’, কেউ ‘শাস্তি’, জেলায় জেলায় সংগঠনে রদবদল ঘটালেন মমতা

চার জেলার সংগঠনের রদবদলের পর কেউ উচ্ছ্বসিত, কেউ আবার মনমরা। যদিও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না তাঁরা।

নজরুল মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নজরুল মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি- ফেসবুক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ১৯:০৬
Share: Save:

আচমকাই পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান ও সভাপতি পদে রদবদল ঘটালেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চের সভা থেকে মমতা জানান, পূর্ব মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ তমলুক সাংগঠনিক জেলার দুই প্রথমসারির দায়িত্বে রদবদল করা হচ্ছে। এই সাংগঠনিক জেলার মধ্যেই রয়েছে তাম্রলিপ্ত পুরসভা ও হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকা।

এত দিন তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন পূর্ব পাঁশকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী। তাঁর জায়গায় আনা হল তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন ও সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। পাশাপাশি, হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবপ্রসাস মণ্ডলকে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে ওই জায়গায় আনা হল সুতাহাটার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তুষার মণ্ডলকে।

আচমকাই তমলুক সাংগঠনিক জেলার দুই প্রভাবশালী নেতার পদবদল করলেন মমতা। তা নিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে জোরদার জল্পনা। জেলা তৃণমূলের অন্দরের খবর, আসলে নেত্রীর কাছে পুরস্কৃত হলেন সৌমেন মহাপাত্র। সদ্য সমাপ্ত তাম্রলিপ্ত পুরসভা নির্বাচনে ২০টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে তৃণমূলের জয়লাভের পেছনে মূল কাণ্ডারী ছিলেন সৌমেন। এ ছাড়াও ‘অধিকারীবিহীন’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের দায়িত্বে এসে খুব কম সময়েই দলের অন্দরের বিবাদ মিটিয়ে বিধানসভা নির্বাচনেও ভাল ফল এনে দিয়েছিলেন সৌমেন।

অনেকের মতে, এই মুহূর্তে জেলা তৃণমূলের রাশ ধরার মতো উপযুক্ত নেতার অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে শীঘ্রই শেষ হচ্ছে হলদিয়া ও পাঁশকুড়া পুরসভার মেয়াদ। এরপর সেখানকার নির্বাচনে সামনে থেকে একজোট হয়ে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সৌমেনের কাঁধেই দায়িত্ব তুলে দিলেন দলনেত্রী। সুতাহাটার প্রবীণ নেতা তুষার মন্ডল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন। দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্বে আসার পর মন্ত্রী সৌমেন আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, “দলনেত্রী যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি। আজ আমি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। এর আগে সংগঠনের কোনও দায়িত্বে ছিলাম না। তাই দলের কোনও অন্তর্বর্তী বিষয়ে আমার জানা ছিল না।”

অন্য দিকে আবার রদবদল হলো কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদের। গিরীন্দ্রনাথ বর্মণকে সরিয়ে কোচবিহার জেলা তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল পার্থপ্রতিম রায়কে। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পার্থের বাড়ির সামনে উল্লাসে মেতে ওঠেন অনুগামীরা। দিনের বেলাতেই শুরু হয় আতশবাজি পোড়ানো। পার্থ বলেন, ‘‘আগামিদিনে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র দলনেত্রীর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।’’

তাঁর নাম নেত্রী চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করলেও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন গিরীন্দ্র নাথ বর্মণ। মমতা জানান,‘‘গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ দলের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি চেয়ারম্যান থাকছেন।’’ কিন্তু গিরীন্দ্র কোনওদিন দলের চেয়ারম্যান ছিলেন না। তিনি ছিলেন জেলা সভাপতি। আর চেয়ারম্যান ছিলেন উদয়ন গুহ। তাঁদের নেত্রী কোথাও বলতে বা বুঝতে ভুল করেছেন কিনা তা নিয়েই ধোঁয়াশায় তিনি। এখন এ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টায় তিনি।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদ থেকে আলোরানি সরকারকে সরিয়ে গোপাল শেঠকে নিয়ে এসেছেন মমতা। এই ঘোষণার পরেই গোপালকে সংবর্ধনা দেন স্থানীয় নেতৃত্ব। মমতা জানান, বনগাঁতে নানা অভিযোগ এসেছে। সেই মতো গোপালকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কারও জিনিস কখনও কেড়ে নিতে দেব না।’’ ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবেই কাকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য তা অবশ্য পরিষ্কার করেননি তিনি।

নদিয়ার কৃষ্ণনগর উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হলেন খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ। কৃষ্ণনগর পুরভোটকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহা ও শহর তৃণমূলের সভাপতি শিশির কর্মকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যাওয়া এবং টিকিট বন্টণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল এই জয়ন্ত সাহার বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অন্দরেই শোনা যায়, এক দিকে জয়ন্ত সাহা ও উজ্জ্বল বিশ্বাসের শিবির, অন্য দিকে মহুয়া মৈত্র ও শিশির কর্মকারদের শিবির আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে। সে কারণেই তৃণমূল নেত্রী জয়ন্তকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee trinamool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE