Advertisement
১৬ মে ২০২৪
কলকাতা ও হাওড়া

দুই কলেজে মারামারি, অভিযুক্ত টি এম সি পি

ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীনতার অভিযোগ ঘিরে সোমবার গোলমাল বাধল দুই কলেজে। দু’টিতেই অভিযোগের আঙুল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিকে। হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই দুই গোষ্ঠীর মারামারিতে উত্তেজনা ছড়ায় বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজে টিএমসিপি-র দুই ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে চার প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে।

হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে সংঘর্ষ। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে সংঘর্ষ। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীনতার অভিযোগ ঘিরে সোমবার গোলমাল বাধল দুই কলেজে। দু’টিতেই অভিযোগের আঙুল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিকে। হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই দুই গোষ্ঠীর মারামারিতে উত্তেজনা ছড়ায় বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজে টিএমসিপি-র দুই ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে চার প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে। তাঁরাও তৃণমূলের কর্মী বলেই পরিচিত।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ নরসিংহ দত্ত কলেজের ইউনিট সভাপতি অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় অধ্যক্ষের কাছে ডেপুটেশন জমা দিতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, গত ১০ জুলাই কলেজে একটি অনু‌ষ্ঠানের আয়োজন করেন সান্ধ্য বিভাগের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোহিত রাউত। সেই অনুষ্ঠানে নেশা করার পাশাপাশি কয়েক জন ছাত্রীর সঙ্গেও অশালীন আচরণ করা হয়েছে। অভিষেকের অভিযোগ, ডেপুটেশন দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে তাঁদের উপর হামলা চালান রোহিত ও তাঁর দলবল। যাঁরা অধিকাংশই বহিরাগত বলেও তাঁর অভিযোগ।

কলেজ সূত্রের খবর, দুই গোষ্ঠীর বচসা মারামারিতে গড়ায়। কলেজ চত্বর থেকে তা রাস্তায় ছড়িয়ে পরে। এ দিন কলেজে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি কম দ্বিতীয় বর্ষের বাংলা পরীক্ষা ছিল। তার মধ্যেই এই গণ্ডগোল শুরু হয়। অভিযোগ, কলেজে পুলিশের সামনেই দু’দল মারামারি শুরু করে। পুলিশ তাতে বাধা দেয়নি। কিন্তু ক্রমশ গণ্ডগোল বাড়তে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়েরা। খবর পেয়ে ব্যাঁটরা থানার বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরীক্ষার জন্য কয়েক জন পুলিশ কর্মী কলেজে ডিউটিতে ছিলেন। তবে গণ্ডগোলের খবর পেয়েই থানা ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে।’’

এ দিন ওই গোলমালে মোট ছ’জন আহত হন। এক ছাত্রের মাথা ফেটে যায়। সংবাদমাধ্যমের উপরেও চড়াও হন কেউ কেউ। অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের দলের ছেলেরাই অশান্তি করছে। বহিরাগতদের কলেজে ঢোকাচ্ছে। অনুষ্ঠানের নামে নেশা-নোংরামি করছে। এর প্রতিবাদেই অধ্যক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণ ভাবে ডেপুটেশন দিতে গিয়েছিলাম।’’

সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে রোহিত দাবি করেন, ‘‘অনুষ্ঠানে এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। মিথ্যা রটানো হচ্ছে। আজও ওরাই আমাদের মারধর করেছে।’’

কলেজের অধ্যক্ষ প্রশান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘এত বড় ক্যাম্পাস। কখন কোথায় কী ঘটছে, তা সব সময়ে জানা সম্ভব নয়। তবে অনুষ্ঠানে মদ্যপান হয়েছে শুনেছি। বিষয়টি দেখছি।’’

তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘কলেজে অশান্তি হচ্ছে। কিন্তু অধ্যক্ষ কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’’

অন্য দিকে, জয়পুরিয়া কলেজের সান্ধ্য বিভাগের সিএস তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অয়ন ভট্টাচার্য জানান, বৃহস্পতিবার কলেজে ঢুকে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে বহিরাগত কয়েক জন প্রাক্তন ছাত্র। যার জেরে শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ করা হয়।

এর পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় টিএমসিপি-র অঙ্কন দত্ত ও সৌম্যদীপ মণ্ডল নামে দুই ছাত্রকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বটতলা থানায় অভিযোগ করা হলে রাত একটা নাগাদ খন্নার মোড় থেকে ওই দুই ছাত্রকে উদ্ধার করে পুলিশ। অঙ্কন পুলিশকে জানিয়েছেন, শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছিল। তা অস্বীকার করায় মারধর করা হয়। পরে তাঁদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায় ওই কলেজেরই চার প্রাক্তন ছাত্র। যাঁরা তৃণমূলের কর্মী বলেই পরিচিত। অয়নের দাবি, অভিযুক্তদের নাম জানালেও সোমবার পর্যন্ত কেন গ্রেফতার করা হল না, সেই দাবিতে এ দিন অধ্যক্ষের ঘরের বাইরে অবস্থান করেন তাঁরা। যদিও কলেজের তরফে জানানো হয়েছে, এটা পুরোপুরিই পুলিশের এক্তিয়ারে। কলেজের এখানে কিছুই করার নেই। তবে কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাত্রদের তরফ থেকে এ রকম কোনও দাবিপত্র পাইনি। পেলে বিবেচনা করে দেখা হবে।’’ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE