প্রতীকী ছবি
রাস্তায় দিকে জানলা রয়েছে, এমন ঘরের খোঁজ চলছে থানায় থানায়। কারণ, ছোঁয়াচ বাঁচাতে সেই জানলা দিয়েই অভিযোগ জানাতে আসা ব্যক্তির কথা শুনছেন পুলিশকর্মীরা। আর বাকি কর্মীদের অনেককেই বলা হয়েছে, রাস্তায় টহল দিয়ে ডিউটি করতে। একান্ত প্রয়োজন না হলে তাঁদের থানায় ঢোকার দরকার নেই!
পুলিশ সূত্রের খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে কলকাতার থানাগুলিতে চলছে এমনই অলিখিত নিয়ম। ছোঁয়াচ বাঁচাতে বন্দর এলাকার এক থানায় অভিযোগ লেখার আলাদা আলাদা খাতা ব্যবহার করছেন আধিকারিকেরা। রয়েছে আলাদা স্ট্যাম্পও। কসবা থানায় মূল ভবনের সামনে আবার টেবিল পেতে বসছেন পুলিশকর্মীরা। ইস্টার্ন সাব-আর্বান ডিভিশনের এক থানায় লকআপে রাখতে হলে প্রথমেই স্নান করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। থানার শৌচাগারে এ জন্য হয়েছে স্নানের আলাদা ব্যবস্থা। এন্টালি থানায় বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক গেট। মানিকতলা থানায় ঢোকার মুখে কোলাপসিবল গেট বন্ধ রেখে সেখানেই টেবিল পেতে বসছেন পুলিশকর্মীরা। অভিযোগ জানাতে আসা ব্যক্তিদের হাত ধোয়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে।
এত রকমের বন্দোবস্ত সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যা চিন্তায় রেখেছে লালবাজারের কর্তাদের। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার পর্যন্ত বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯১৯ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন প্রায় ৬৩০ জন। তবে বেশির ভাগ থানা সূত্রেই খবর, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন সেখানে পুলিশকর্মীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। রবীন্দ্র সরোবর থানায় যেমন কাজ চলছে মাত্র চার জনকে নিয়ে। তাঁদের মধ্যে এক জনকে আবার জরুরি পরিস্থিতিতে বেনিয়াপুকুর থানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বেহালা থানায় বসেছে কাচ এবং প্লাস্টিকের ব্যারিকেড। কাচের অপর প্রান্তে বসে এক পুলিশকর্মী বললেন, “তবু নিস্তার নেই। আমাদের কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি। এর মধ্যেই এক জনের করোনা ধরা পড়েছে।”
বেলেঘাটা থানার এক আধিকারিকের দাবি, এত দিন সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করে সেরেস্তার জানালা দিয়ে অভিযোগ শোনা হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি দু’জন এএসআই এবং দু’জন সাব-ইনস্পেক্টরের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। শ্যামপুকুর থানায় দু’জন সার্জেন্ট, একজন এএসআই, দুই কনস্টেবল এবং হোমগার্ড-সহ কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন। ওই থানার এক পুলিশকর্মী বলছেন, “জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তো কাউকে থানার ভিতরে ঢোকাতেই হচ্ছে। কিছুতেই ছোঁয়াচ বাঁচানো যাচ্ছে না।”
বড়তলা থানায় ছোঁয়াচ বাঁচাতে থানার প্রবেশপথের সামনে ব্যারিকেড করে এক এক জনের অভিযোগ শোনা হচ্ছে। ওই থানার করোনা আক্রান্ত এক পুলিশকর্মী ফোনে বললেন, “মূল শত্রু হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাজারের ডিউটি। চিৎপুর, চারু মার্কেট, লেক-সহ বহু থানা এলাকা যেখানে বড় বাজার রয়েছে, সেখানে অন্তত দশ-বারো জন আক্রান্ত।”
এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পথ কী? লালবাজারের পুলিশকর্তারা কেউই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা শুধু বলেন, “সব দিক সামলে সকলে মিলে কাজ চালাতে হবে।”
তবে আতঙ্ক তাতে কাটছে না। কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগে নতুন করে করোনায় মৃত্যুর খবর শুনে কালীঘাট থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, “কোনও করোনা হওয়া থানায় বদলি করে দেবে কি না, সেই ভয়ে আছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy