Advertisement
E-Paper

‘টার্গেট’ পূরণে জরিমানায় অতিসক্রিয় ট্রাফিক পুলিশ

নবান্নে কর্মরত এক আমলার গাড়িকে আইন ভাঙার জন্য জরিমানা করেছে কলকাতা পুলিশ। অথচ, সেটি ছিল ছুটির দিন। তাই ওই আমলা সে দিন সরকারি গাড়ি ব্যবহারই করেননি! কয়েক মাস আগে গাড়ি বিক্রি করেছিলেন দক্ষিণ শহরতলির এক বাসিন্দা। পরে গাড়ির শো-রুম থেকে তাঁকে ফোন করে বলা হয়, কিছু জরিমানা জমে রয়েছে। সেগুলি মিটিয়ে দিতে হবে। খোঁজ নিতে গিয়ে ওই যুবক দেখেন, উত্তর কলকাতার এমন কিছু রাস্তায় তিনি আইন ভেঙেছেন, যেখানে তিনি গত কয়েক বছরে যাননি!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৫

নবান্নে কর্মরত এক আমলার গাড়িকে আইন ভাঙার জন্য জরিমানা করেছে কলকাতা পুলিশ। অথচ, সেটি ছিল ছুটির দিন। তাই ওই আমলা সে দিন সরকারি গাড়ি ব্যবহারই করেননি!

কয়েক মাস আগে গাড়ি বিক্রি করেছিলেন দক্ষিণ শহরতলির এক বাসিন্দা। পরে গাড়ির শো-রুম থেকে তাঁকে ফোন করে বলা হয়, কিছু জরিমানা জমে রয়েছে। সেগুলি মিটিয়ে দিতে হবে। খোঁজ নিতে গিয়ে ওই যুবক দেখেন, উত্তর কলকাতার এমন কিছু রাস্তায় তিনি আইন ভেঙেছেন, যেখানে তিনি গত কয়েক বছরে যাননি! শুধু তা-ই নয়, সেই মামলাগুলির কথা জানিয়ে কোনও চিঠিও পাননি ওই যুবক!

এ দু’টি নেহাতই হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বাস্তবে শহরবাসীর অভিযোগ বলছে, সিগন্যাল ভাঙা-সহ খুচরো জরিমানার ঘটনা গত কয়েক মাসে লাগামছাড়া ভাবে বেড়েছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কারও নামে ২০টি মামলা হয়েছে, কারও ৩৫টি! অনেক ক্ষেত্রে এমন রাস্তায় চলার নামে জরিমানা করা হচ্ছে, যেখানে ওই গাড়িগুলির যাওয়ারই কথা নয়। বস্তুত, একই অভিযোগ করেছেন ট্যাক্সিচালকদের একাংশও। তাঁরা বলছেন, যাত্রী-প্রত্যাখ্যানে লাগাম টানার অজুহাতে ইচ্ছেমতো জরিমানা করছে পুলিশ। পাশাপাশি অন্য মামলাও দেওয়া হচ্ছে। ট্যাক্সিচালকদের একাংশ বলছেন, যাত্রী-প্রত্যাখ্যান তাঁরাও সমর্থন করেন না। কিন্তু সেই ঘটনায় লাগাম টানতে গিয়ে পুলিশ যে ভাবে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁদের।

সম্প্রতি এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে এক ট্যাক্সিচালকের। লিন্ডসে স্ট্রিটের সামনে তিনি এক যাত্রীকে নামান। তার পরে সোজা চলে গিয়েছিলেন পার্ক স্ট্রিটের দিকে। সেখানেই এক পুলিশকর্মী তাঁকে পাকড়াও করে বলেন, তিনি এক যাত্রীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবং সেই কারণে তাঁকে তিন হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। ট্যাক্সিচালকের অবশ্য বক্তব্য, সেখানে বহু ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখেই তিনি দাঁড়াননি। লালবাজারেরই এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, “গত এক মাসে ৩০০টিরও বেশি ট্যাক্সিকে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, ট্রাফিক আইন ভাঙা থেকে জরিমানা আদায়ের ব্যাপারে তাঁদের উপরে চাপ রয়েছে। তাই রাস্তাঘাটে আইনভঙ্গকারী গাড়ি ধরতে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তাঁরা। জরিমানা থেকে ভাঁড়ার ভরানোর চাপ থাকায় সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাও। রীতিমতো সেলস্ম্যানের মতো ‘টার্গেট’ ভরাতে হচ্ছে তাঁদের। আর তা করতে গিয়েই অনেক সময়ে সেই সক্রিয়তার কোপে নিরীহ গাড়িচালকেরাও পড়ছেন সে কথাও মেনে নিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের একাংশ। কেমন সেই টার্গেট?

লালবাজার সূত্রের খবর, এখন প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার খুচরো জরিমানার মামলা বা কেস দেওয়া হয়। বছর দুয়েক আগে প্রতি মাসে গড়ে ২৫-২৮ হাজার করে এই ধরনের মামলা হত। কনস্টেবল বা হোমগার্ডেরাও এই মামলা দায়ের করতে পারেন। এর বাইরেও রয়েছে গুরুতর ট্রাফিক আইন ভাঙার মামলা। গুরুতর জরিমানার মামলা রুজু করতে গেলে সার্জেন্ট অথবা ইনস্পেক্টরের প্রয়োজন হয়। ট্রাফিক গার্ড সূত্রের খবর, এখন এক জন সার্জেন্টকে দিনে অন্তত ১০টি মামলা করতেই হয়। একই রকম লক্ষ্যমাত্রা থাকে হোমগার্ড ও কনস্টেবলদেরও। এবং মামলার এই লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হলে রীতিমতো ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের। কী রকম?

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে একটি ট্রাফিক গার্ড মামলার লক্ষ্যপূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। মাসিক বৈঠকে সেই গার্ডের ওসিকে রীতিমতো ধমকেছিলেন ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ কর্তারা।

কিন্তু মামলার সংখ্যা এত বেড়ে গেল কেন?

কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নিশাকুমার বলছেন, ইদানীং ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীর সংখ্যা বেড়েছে। তাই মামলাও বেড়েছে। যাত্রী প্রত্যাখ্যান কমাতেই কড়াকড়ি করা হচ্ছে। তবে লালবাজার সূত্রে বলা হচ্ছে, খুচরো জরিমানার ক্ষেত্রে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের কিছু ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। সেগুলি শীর্ষকর্তাদের নজরেও এসেছে। সেগুলি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পুলিশেরই আর একটি অংশ অবশ্য বলছে, আদতে ভাঁড়ার পূরণেই এ রকম সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। যার উদাহরণ হিসেবে লোক আদালতের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন লালবাজারের এক পুলিশকর্তা। তিনি বলছেন, জরিমানা দ্রুত আদায়ে লোক আদালতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে জরিমানার উপরে ছাড়ের ব্যবস্থাও থাকে। এত কিছু করার পরেও গত ছ’মাসে লোক আদালত থেকে দেড় কোটি টাকা আয় করেছে কলকাতা পুলিশ। “কত মামলা হলে এত জরিমানা আদায় করা যায়!”বলছেন ওই পুলিশকর্তা।

fine kuntak chattopadhyay traffic police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy