ক্ষতিগ্রস্ত কামরা। — নিজস্ব চিত্র।
ভোর চারটে। কারশেড থেকে ঢোকার সময়ে সোজা প্ল্যাটফর্মে উঠে গেল লোকাল ট্রেন। রবিবার শিয়ালদহ স্টেশনে এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও দু’টি কামরা ও প্ল্যাটফর্মের কিছু অংশের ক্ষতি হয়েছে। কিছু দিন আগে মুম্বইয়ের চার্চগেট স্টেশনেও লোকাল ট্রেন প্ল্যাটফর্মে উঠে গেলে এক মহিলা জখম হন।
রেল সূত্রের খবর, এ দিন লোকাল ট্রেনটিকে শানটিং করার পরে ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকানো হচ্ছিল। সেই সময়ে তিন ও চার নম্বর কামরার দু’টি ট্রলি থেকে দু’টি করে চাকা লাইনচ্যুত হয়। ওই অবস্থায় ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে ঢুকে সোজা বাফারে ধাক্কা মারে। বাফারের দুটি খুঁটিই এই আঘাতে বেঁকে গিয়েছে। এ দিকে, বাফারে ট্রেনটি সজোরে ধাক্কা মারার প্রতিক্রিয়ায় ৩ ও ৪ নম্বর কামরাও একে অপরের গায়ে ধাক্কা মারে। সেগুলিও অনেকটা করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে গিয়েছে প্ল্যাটফর্মের বেশ কিছুটা অংশও।
খবর পেয়ে পৌঁছন শিয়ালদহ ডিভিশনের অফিসার ও কর্মীরা। আসে অ্যাক্সিডেন্ট রিলিফ ভ্যানও। শুরু হয় কামরাগুলিকে বার করে আনার কাজ। রবিবার হওয়ায় যাত্রীর চাপ অনেকটাই কম ছিল। তাই ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ রেখেই কাজ করতে পেরেছেন রেলকর্মীরা। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে আবার স্বাভাবিক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
কী কারণে দুর্ঘটনা?
রেলকর্তারা কেউ কেউ বলছেন, ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে স্টেশনের মধ্যে। ফলে লাইনের ত্রুটি বলা যাবে না। কারণ, স্টেশনে সর্বক্ষণ নজরদারি থাকে। ফলে এটা ট্রেনেরই যান্ত্রিক ত্রুটি। ওই কর্তাদের মতে, সে ক্ষেত্রে কারশেডে ট্রেনগুলি ভাল করে দেখভাল করা হয়নি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। রেল অফিসারেরা তদন্ত শুরু করছেন। তার পরেই কারণ স্পষ্ট হবে।’’ যদিও প্রাথমিক ভাবে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রেলকর্তারা চালকের ঘাড়েই দায় চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, চালক নির্দিষ্ট গতির চেয়ে বেশি গতিতে ট্রেন চালানোয় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তবে অনেকের মতে, তদন্তের পরে কারণ যা-ই উঠে আসুক না কেন, ইদানীং শিয়ালদহ ডিভিশনে কর্মসংস্কৃতি যে শিকেয় উঠেছে এই দুর্ঘটনা তারই জের। নিত্যদিন ট্রেনের গোলমাল, যখন-তখন মাঝপথে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা, সময়ে ট্রেন চালাতে না পারা, এমনকি প্ল্যাটফর্মগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার প্রচেষ্টাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।
কেন এমন হচ্ছে শিয়ালদহে?
রেলকতার্দের একাংশ বলছেন, শিয়ালদহে দফতরগুলির মধ্যে চুড়ান্ত সমন্বয়ের অভাব ঘটছে। কর্তাদের কথা কর্মীরা শুনছেন না, এমনও ঘটছে। কর্তাদের একাংশের আরও দাবি, রেলও পরিচ্ছন্ন পরিষেবার বিষয়টি নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। পরপর ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। উল্টে সবাই ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। মুখে বলছেন, ‘ছোট ঘটনা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy