সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয় অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু গাছেদের চিকিৎসায়?
শীঘ্রই কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে তাদের জন্যও শুরু হতে চলেছে বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। পুর উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, শহর কলকাতার কোথাও গাছ হেলে পড়লে বা রুগ্ণ গাছকে বাঁচাতে প্রয়োজনে কোনও নাগরিক পুর কন্ট্রোল রুমে ফোন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে ‘ট্রি অ্যাম্বুল্যান্স’।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। তাঁর বিধায়ক তহবিলের টাকায় এই গাড়ি কিনতে আগেই দরপত্র ডেকেছিল পুরসভার মেকানিক্যাল বিভাগ। একটি বেসরকারি সংস্থার সোনারপুরের শোরুমে ‘ট্রি অ্যাম্বুল্যান্স’ তৈরির কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘পরিবেশের স্বার্থে গাছ বাঁচানো আমাদের প্রত্যেকের আশু কর্তব্য। সারা ভারতের মধ্যে কলকাতায় প্রথম ট্রি অ্যাম্বুল্যান্স চালু হতে চলেছে।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ট্রি অ্যাম্বুল্যান্স তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে যেমন মানবসেবায় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ, যন্ত্রপাতি থাকে, তেমনই ট্রি অ্যাম্বুল্যান্সে থাকবে দক্ষ মালি, গাছ বাঁচানোর উন্নত সার, ওষুধ, গাছের ডাল ছাঁটাইয়ের (ট্রিমিং) যন্ত্রপাতি।’’ পুর উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, সবুজ বাঁচাতে গাছ লাগানোর কাজ করবেন ট্রি অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা উদ্যান বিভাগের কর্মীরা।
পরিবেশকর্মীদেরপর্যবেক্ষণ, শহর কলকাতায় আগামী দিনে গাছ বাঁচানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। গাছ না রক্ষা করলে মানুষের বিপদ আসন্ন। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘এ রকম সঙ্কটের মুহূর্তে এমন পুর উদ্যোগকে সাধুবাদ। কারণ, কোনও গাছ হঠাৎ মাটি উপড়ে পড়ে গেলে সেটিকে দ্রুত তুলে অন্যত্র রোপণ করে ঠিকঠাক পরিচর্যা করলে বেঁচে যাবে। এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার ট্রি অ্যাম্বুল্যান্স সেই কাজ করলে শহরের সবুজ রক্ষা পাবে। সবুজের স্বার্থে কলকাতা পুরসভার সহযোগিতায় মানুষ সজাগ হলে তা শহরবাসীর পক্ষে বড় আশীর্বাদ তো বটেই।’’
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই শহরে ৪৫ লক্ষ লোকের অক্সিজেনের জোগান দিতে গাছ বাঁচানো অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার ট্রি অ্যাম্বুল্যান্স চালু ভীষণ ভাল উদ্যোগ। আমফানের সময়ে রবীন্দ্র সরোবরে অনেক বড় গাছ পড়ে গিয়েছিল। কেএমডিএ-র তরফে সেই সমস্ত গাছ পুনরায় রোপণ করায় বেঁচে গিয়েছে। কংক্রিটের শহরে গাছগুলির শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে, গাছ হেলে পড়ে। পুরসভার সঠিক পরিচর্যায় হেলে পড়া গাছও সোজা হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)