কেষ্টপুরে বসে আমেরিকা, কানাডা-সহ কয়েকটি দেশের বাসিন্দাদের ঠকিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতাচ্ছিল তারা। এক বার নয়, একই গ্রাহককে ঠকানো হতো পরপর দু’বার। ছ’মাস ধরে এই কারবার চালিয়ে শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল দুই দুষ্কৃতী। ধৃতদের জেরা করে মিলল এক আন্তর্জাতিক চক্রের হদিস।
এক পুলিশকর্তা জানান, এ রাজ্যের এক বাসিন্দার এক বন্ধু লন্ডনে থাকেন। তাঁর মাধ্যমে আসা একটি তথ্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে ওই চক্রের কারবার সম্পর্কে জানা যায়। এর পরেই বিধাননগর সাইবার ক্রাইম শাখা ও বাগুইআটি থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। অনলাইন জালিয়াতির অভিযোগে শনিবার কেষ্টপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় সঞ্জয় মণ্ডল ও স্যাঙ্কি জায়সবাল নামে ওই দু’জনকে। সঞ্জয় মুর্শিদাবাদ ও স্যাঙ্কি আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা। কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির এ-ই ২৫ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকত তারা। ধৃতদের কাছ থেকে ৮টি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, মানি সোয়াইপ মেশিন, একটি ল্যাপটপ ও তিনটি মোবাইল উদ্ধার হয়। তাদের জেরা করে একটি এনজিও এবং মানি ট্রান্সফার কোম্পানি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের।
কী ভাবে এ দেশে বসে ভিন্দেশের বাসিন্দাদের ঠকাত ওই দুই দুষ্কৃতী?
তদন্তকারীরা জানান, সঞ্জয় ও স্যাঙ্কি সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা থেকে অর্থের বিনিময়ে বিদেশি গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করত। এর পরে নিজেকে ড্যানিয়েল নামে পরিচয় দিয়ে স্যাঙ্কি সেই গ্রাহকদের ফোন করত। তাঁদের বলত, কম্পিউটারে জাঙ্ক ফাইল রয়েছে। সেগুলি ঠিক করে দেওয়ার জন্য তাকে দিতে হবে মাত্র ১০০ ডলার। গ্রাহকেরা রাজি হলে জাঙ্ক ফাইল ঠিক করার নামে তাঁদের কম্পিউটারে টিম ভিউয়ার অন করে রাখতে বলত স্যাঙ্কি। ফলে সেই গ্রাহকের সমস্ত তথ্য কেষ্টপুরে বসেই দেখা যেত। এরই সুযোগে ওই সুরক্ষিত তথ্য হ্যাক করত সঞ্জয়। এর পরে গ্রাহককে তাঁর দেশেই নির্দিষ্ট এক রিসিভারের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে বলত ডানিয়েল অর্থাৎ স্যাঙ্কি।
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। এর পরে আসরে নামত সঞ্জয়। দ্বিতীয় দফায় একই গ্রাহককে ফোন করে নিজেকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিত সে। বলত, একটি সংস্থা জাঙ্ক ফাইল দূর করার নামে ওই গ্রাহককে ঠকিয়েছে। সেই টাকা ফেরত পেতে হলে রেজিস্ট্রেশন বাবদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ফলে একই গ্রাহক দু’বার করে জালিয়াতির শিকার হতেন। এ দিকে, বিদেশে রিসিভারের কাছ থেকে মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে এ দেশে বসেই টাকা পেয়ে যেত ওই দুই দুষ্কৃতী।
ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, আমেরিকা, কানাডা এবং লন্ডনের একাধিক বাসিন্দাকে ঠকিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার করেছে ওই দুই দুষ্কৃতী। সেই টাকার একটি অংশ চলে যেত একটি এনজিওতে, একটি অংশ সংশ্লিষ্ট রিসিভারের কাছে, বাকিটা দুই দুষ্কৃতীর মধ্যে ভাগাভাগি হতো। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সঞ্জয় ও স্যাঙ্কি অন্যতম মূল চক্রী হলেও আরও বেশ কয়েক জন এতে যুক্ত ছিল। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy