Advertisement
E-Paper

নিউ গড়িয়া হত্যাকাণ্ড: বাইরে সঙ্গীকে দাঁড় করিয়ে একা হাতে গৃহকর্ত্রীকে খুন আয়ার, ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতে পুরুষসঙ্গীও

বাড়ির কর্তা এমনিতেই শয্যাশায়ী। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কথাবার্তাও সে ভাবে বলতে পারেন না। মূলত তাঁর দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছিল আশালতাকে। শুক্রবার সেই আয়াই বৃদ্ধকে বিছানা থেকে নীচে নামিয়ে দিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে দিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৫৬
New Garia Murder Case

সঙ্গীর পরিকল্পনা, খুন এবং লুট করেন আয়া! নিউ গড়িয়া হত্যাকাণ্ডে মিলল নানা তথ্য। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বৃদ্ধ দম্পতির দেখাশোনার কাজ নিয়েছিলেন ৩৬ বছরের আশালতা সর্দার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাটে বাসিন্দা ওই যুবতীর কাজের সূত্রে থাকতেন নরেন্দ্রপুরে ভাড়াবাড়িতে। সেখান থেকে নিউ গড়িয়া আসতেন সকাল সকাল। বেরিয়ে যেতেন রাতে। কাজ পেয়েছিলেন মাত্র পাঁচ দিন আগে। সেই তিনিই পুরুষসঙ্গীকে নিয়ে এসে লুট করলেন বাড়ি। খুন করেন ৭৯ বছরের গৃহকর্ত্রীকে। সেটাও আবার একা হাতে। শুক্রবার সকাল থেকে খুনের তদন্তে নেমে শনিবার বিকেল পর্যন্ত এমনই কিছু তথ্য পেল কলকাতা পুলিশ। এ-ও জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনার পরিকল্পনা করেছিলেন আশালতার পুরুষসঙ্গী মহম্মদ জালাল মীর। পুলিশ সূত্রে খবর, মীরের বাড়িও ঢোলাহাটে।

আয়াকে জেরা করে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৭টার খানিক পরে তিনি পঞ্চসায়র থানার নিউ গড়িয়া এলাকায় ৮২ বছরের প্রশান্তকুমার দাস ওরফে পিকে দাস এবং ৭৯ বছরের বিজয়া দাসের বাড়িতে ঢোকেন। তবে ওই দিন তিনি একা ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মীর। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে পুলিশ। তাতে দেখা যাচ্ছে, পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে আশালতা পিকের বাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। তাঁর পাশে হাঁটছেন সাদা শার্ট এবং ধূসর ট্রাউজার্স পরা দোহারা গড়নের এক যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, আশালতা পিকের বাড়িতে ঢুকে গেলেও তাঁর সঙ্গীটি দাঁড়িয়ে ছিলেন বাড়ির বাইরে, খানিক দূরে।

কিছু ক্ষণ কেটে যায়। সকাল ৮টার খানিক আগেই নিউ গড়িয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় আয়াকে। তবে পরনের শাড়ি তখন বদলে গিয়েছে। তখনও বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ৪১ বছরের মীর। পুলিশ জানিয়েছে, লুটের পরিকল্পনা যুবকের হলেও বাড়ি থেকে জিনিসপত্র নেওয়া থেকে বৃদ্ধের হাত-বাঁধা থেকে বৃদ্ধাকে খুন, সবটাই একা করেছেন আয়া।

বাড়ির কর্তা এমনিতেই শয্যাশায়ী। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কথাবার্তাও সে ভাবে বলতে পারেন না। মূলত তাঁর দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছিল আশালতাকে। শুক্রবার সকালে বৃদ্ধকে যখন পুলিশ উদ্ধার করে তখন তিনি বিছানায় ছিলেন। ওই আয়াই তাঁকে খাট থেকে নীচে নামিয়ে দিয়েছিলেন কি না তদন্তসাপেক্ষ। তবে কর্তা নয়, আয়ার ‘টার্গেট’ ছিলেন গিন্নি। বিজয়ার মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে বেঁধে দেন আয়া। তার পর হাত তিনেক লম্বা একটি কাঠের টুকরো দিয়ে সজোরে মাথায় মারেন। চেপে ধরেছিলেন গলাও। বৃদ্ধা নিস্তেজ হয়ে পড়লে একে একে তাঁর গা থেকে গয়না খুলে নেন।

বাড়ি থেকে ঠিক কত টাকার জিনিসপত্র লুট করেছেন, তার পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। কারণ, বাড়ির দুই সদস্যের এক জন খুন হয়েছেন। অন্য জন বলার মতো অবস্থায় নেই। বাড়ির কর্তার কাছে পুলিশ বিশেষ কিছু জানতে পারেনি। অসুস্থ ওই বৃদ্ধ এ টুকু বলতে পেরেছেন যে, শুক্রবার সকালে কেউ এক জন তাঁকে খাট থেকে নীচে নামিয়ে দিয়েছিলেন।

ভাড়াবাড়ি থেকে আশালতা এবং তাঁর সঙ্গী মীরকে গ্রেফতারের পর শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ। দু’জনকেই ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর আবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হবে। মামলার সরকারী আইনজীবী জানিয়েছেন,অভিযুক্তদের কাছ থেকে বেশ কিছু গয়না উদ্ধার হয়েছে। হাতের বালা, ঘড়ি, দেবতার মূর্তি ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ জরুরি। তা ছাড়া ওই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, জানতে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করবেন তদন্তকারীরা।

Crime Murder Case Kolkata Police New Garia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy