Advertisement
E-Paper

দু’ভাই ওঠে না এত ভোরে, দাবি ঘনিষ্ঠদের

তেতলা বাড়িটা খাস জোড়াসাঁকো থানার উল্টো দিকে। প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল, ভেতরে কেউ নেই। কাঠের সদর দরজার বাইরে কোল্যাপসিবল গেট। সেই গেটে ঝুলছে পেল্লায় তালা। বাইরে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের ভিড়ের ফাঁক দিয়েই হঠাৎ এক যুবক এসে তালাটা খুলে দিলেন।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৬
নিজের বাড়ির সামনে তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের বাবা হাজি মহম্মদ রুস্তম। বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকোয়। — নিজস্ব চিত্র।

নিজের বাড়ির সামনে তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের বাবা হাজি মহম্মদ রুস্তম। বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকোয়। — নিজস্ব চিত্র।

তেতলা বাড়িটা খাস জোড়াসাঁকো থানার উল্টো দিকে। প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল, ভেতরে কেউ নেই। কাঠের সদর দরজার বাইরে কোল্যাপসিবল গেট। সেই গেটে ঝুলছে পেল্লায় তালা। বাইরে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের ভিড়ের ফাঁক দিয়েই হঠাৎ এক যুবক এসে তালাটা খুলে দিলেন। খুলে গেল কাঠের দরজাও। আর এক যুবকের কাঁধে হাত দিয়ে বেরিয়ে এলেন বৃদ্ধ।

এবং বাইরে ভিড়টাকে দেখেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘‘একদম বিরক্ত করবেন না!’’ ক্যামেরা দেখে পুরোপুরি মেজাজ হারানোর আগে বৃদ্ধ নিজের পরিচয়টাও অবশ্য দিলেন। তিনিই তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের বাবা— হাজি মহম্মদ রুস্তম।

কিন্তু তাঁর ছেলে কোথায়? দুই নাতি আম্বিয়া ও সাম্বিয়া সোহরাবই বা কোথায়?

কোনও সদুত্তর নেই। এক দিকে জোড়াসাঁকোয় এই নাটক, অন্য দিকে রিপন স্ট্রিটে সোহরাবদের বাংলো ধাঁচের অন্য বাড়িটায় নিরাপত্তারক্ষীর সজাগ পাহারা। কিন্তু দুই বাড়িতে বৃহস্পতিবার সারা দিন হত্যে দিয়েও শাসক দলের দুঁদে নেতা বা তাঁর ছেলেদের কোনও দেখা মিলল না। তাঁদেরই পারিবারিক সংস্থা ‘মুসাডি বিজনেস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর নামে কেনা একটি বেপরোয়া অডি গাড়ি বুধবার ভোরে রেড রোডে ব্যারিকেড ভেঙে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়ায় ঢুকে পড়ে। গাড়িতে পিষ্ট হয়ে মারা যান বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়। সোহরাবের বড় ছেলে আম্বিয়া ওই গাড়িটি কিনে তাঁর ভাই সাম্বিয়াকে উপহার দিয়েছিলেন বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ। কিন্তু গাড়িতে দু’ভাইয়ের কেউ ছিলেন কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন আম্বিয়া-সাম্বিয়া। দেখা নেই সোহরাবেরও।

জোড়াসাঁকোর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৃণমূল হকার ইউনিয়নের নেতা তথা সোহরাবের খুড়তুতো ভাই বলে পরিচয় দেওয়া যুবক নুশি রাজন বললেন, ‘‘সোহরাব ও তাঁর ছেলেরা সময় হলে ঠিক সামনে আসবেন।’’ যত বার এই তিন জনের কথা তোলা হল, তত বারই প্রায় রে রে করে উঠলেন পরিজনেরা। সোহরাব-পরিবারের এক সুহৃদ জোর গলায় বললেন, ‘‘সাম্বিয়া-আম্বিয়াদের ফালতু ফাঁসানো হচ্ছে। ওরা তো কেউ বেলা দশটার আগে ঘুম থেকে ওঠেই না। অত সকালে ওরা রেড রোডে যাবে কী করে?’’ আর এক ঘনিষ্ঠ বললেন, ‘‘ভাববেন না সোহরাব ভাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন! এটা খুন নয়। বড়জোর দুর্ঘটনা। ওঁরা সব কলকাতাতেই আছেন।’’

তা হলে ওঁরা গা-ঢাকা দিয়ে আছেন কেন?

সোহরাব-ঘনিষ্ঠদের জবাব, ‘‘রাজনীতির ঝামেলা পছন্দ নয় বলেই ওঁরা বেরোচ্ছেন না।’’ দিন কয়েক আগে সাম্বিয়ার বিয়েতে এসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ-জায়া নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সুলতান আহমেদ, মন্ত্রী জাভেদ খান প্রমুখ। কিন্তু দলের একাংশও সোহরাবের পেছনে লেগেছে বলে এ দিন অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। এক তুতো ভাই বললেন, ‘‘গত বছর পুরভোটে নয়নাদির হয়ে ভোটে খাটার সময়ে দলের লোকেরা কেউ কেউ সোহরাব ভাইকে অপছন্দ করতে শুরু করে। এখন তারাই বদনাম দিচ্ছে!’’

সোহরাবের ‘বদনাম’ হওয়া অবশ্য নতুন কিছু নয়। জোড়াসাঁকো ফলমান্ডিতে কান পাতলে শোনা যায় বহু ফিসফাস। সাধারণ ফলবিক্রেতা থেকে জোড়াসাঁকোর ফলমান্ডির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবে সোহরাবের উত্থান চমকপ্রদ। ২০০২ সালে ফলমান্ডির আর এক মাথা তাজ মহম্মদ খুন হওয়ার পর সোহরাবের দিকে আঙুল তুলেছিলেন অনেকে। তাঁর গাড়ি ভাঙচুরও হয়েছিল। পরে বাম সমর্থনে আরজেডি-র বিধায়ক হন সোহরাব। রাজ্যে পালাবদলের পরে যোগ দেন তৃণমূলে। ফলমান্ডির পোড়খাওয়া কারবারিদের কারও কারও দাবি, রাতভর পার্টি ও সুরাপানে অভ্যস্ত সোহরাবের পুত্রেরা। সূত্র মারফত নৈশ-পার্টির তত্ত্বও পেয়েছে পুলিশ। তবে এখনও কোনও গ্রেফতারি নেই।

এর আগে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বার কয়েক ধরা পড়েও বাবার প্রভাবে ছাড়া পেয়েছেন আম্বিয়া। পুলিশের এখনও তাঁদের নাগাল না পাওয়ার নেপথ্যেও কি কাজ করছে কোনও ‘প্রভাব’? জল্পনা থামছে না!

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy