Advertisement
E-Paper

মিষ্টি-মুখে মিষ্টি হাতিয়ে পগারপার দুই ডাকাত

ঠিক যেন কোনও সিনেমার দৃশ্য অথবা কোনও মজার গল্পের বই। বাঙালি ডাকাতদের হরেক কাণ্ডকারখানা নিয়ে জনশ্রুতি আছে বিস্তর। কিন্তু এ যে অতি ভদ্র এবং পেটুক ডাকাত! মিষ্টির দোকানে ঢুকে আপনি-আজ্ঞে করে কথা বলে শেষে রিভলভার দেখিয়ে চেটেপুটে মিষ্টি খেয়ে চম্পট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৩:৩০
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

ঠিক যেন কোনও সিনেমার দৃশ্য অথবা কোনও মজার গল্পের বই।

বাঙালি ডাকাতদের হরেক কাণ্ডকারখানা নিয়ে জনশ্রুতি আছে বিস্তর। কিন্তু এ যে অতি ভদ্র এবং পেটুক ডাকাত! মিষ্টির দোকানে ঢুকে আপনি-আজ্ঞে করে কথা বলে শেষে রিভলভার দেখিয়ে চেটেপুটে মিষ্টি খেয়ে চম্পট।

কোনও গল্প নয়, শনিবার রাতে হাওড়ার নরসিংহ দত্ত রোডে একটি মিষ্টির দোকানে এমনটাই ঘটল। রবিবার ব্যাঁটরা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

ঘটনাটা ঠিক কী? পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ার ঘনবসতিপূর্ণ নরসিংহ দত্ত রোডে একটি ফ্ল্যাটবাড়ির নীচে মিষ্টির দোকান। অজয়দার মিষ্টির দোকান নামেই পরিচিত সেটা। শনিবার রাত তখন ১২টা। মিষ্টির দোকানে তখন ঝাঁপ বন্ধের তোড়জোড় চলছে। আশপাশের দোকান ততক্ষণে বন্ধ। মিষ্টির দোকানের ভিতরে ভিয়েনে গরম রসগোল্লা তৈরির কাজও প্রায় শেষের মুখে।

এমন সময়ে মোটরবাইকে এসে দোকানের সামনে দাঁড়াল দুই যুবক। দোকানে ঢুকে জল খেতে চাইল তাঁরা। জল খাওয়া হলে দোকানমালিক অজয়বাবু জিজ্ঞাসা করেন ‘‘আপনাদের কিছু চাই?’’ এক যুবক চারটে রসগোল্লা চায়। দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টপাটপ মুখে পুরে ফেলে দুই ‘অতিথি’।

মালিক তখন ভাবছেন, শেষ বেলায় আরও কিছু মিষ্টি বিক্রি হয়ে যাবে হয়তো। লাভের আশায় উৎসাহী হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনাদের আর কী কী লাগবে?’’ আচমকা এক জন পকেট থেকে রিভলভার বার করে সোজা মালিকের দিকে তাক করে। ভয়ে সিঁটিয়ে যান অজয়বাবু। সেই দুষ্কৃতী তখন রিভলভার তাঁর মাথায় ঠেকিয়েই বলতে থাকে, ‘‘দোকানে যা যা আছে, বার করে দিন।’’ গলা থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না অজয়বাবুর। কোনও মতে নিজেকে সামলে তিনি বলেন, ‘‘যা আছে নিয়ে যান, দয়া করে মারবেন না।’’ এক দুষ্কৃতী তখন দোকানের হেঁসেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে ভিয়েনে তখন কারিগরেরা রসগোল্লা তৈরি করছিলেন। ওই দুষ্কৃতী সোজা জিতেন্দ্র শর্মা নামে এক কারিগরের সামনে গিয়ে ব্যাগ থেকে ভোজালি বার করে তাঁর গলায় ঠেকিয়ে ক্যাশবাক্সের খোঁজ করে।

ক্যাশব্যাক্সে নগদ হাজার টাকা ছিল। পাশেই একটি বাক্সে ২০০ টাকার খুচরো পয়সা ছিল। ওই খুচরোর মধ্যে রাখা একটি চার আনা অবশ্য নেয়নি দুষ্কৃতীরা।

এক দফা লুঠপাটের পরে মালিককে এক দুষ্কৃতী হুকুম করে,‘‘গরম রসগোল্লা হচ্ছে। যান, কিছু রসগোল্লা নিয়ে আসুন।’’ শুরু হয় দুই দুষ্কৃতীর ভোজন-পর্ব। এক জন রিভলভার তাক করে, অন্য জন ভোজালি উঁচিয়ে খেতে বসে। ফরমায়েশ মতো চলে আসে গরম রসগোল্লা। কর্মীদের কথায়, ‘‘যে ভাবে রসগোল্লা খাচ্ছিল, তাতে মনে হচ্ছিল, বেশ কিছু দিন পেটে কিছু পড়েনি।’’ রসগোল্লাতেও খিদে মেটেনি। এর পরে তারা মিষ্টি দই খায়। এক দুষ্কৃতী আবার ফ্রিজ খুলেও কিছু মিষ্টি খেয়ে নেয়। ওই দোকানের দানাদার ও বোঁদে এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। সে কথা মাথায় রেখে যাওয়ার আগে দুই ডাকাত হুকুম করে, ‘‘দানাদার নিয়ে আসুন। আর বোঁদে আছে?’’ প্যাকেটে করে দানাদার নিয়ে আসেন এক কর্মী। কিন্তু তর সয়নি ডাকাতদের। ওই কর্মীর থেকে দানাদারের প্যাকেট আর বোঁদে ভর্তি ট্রে নিয়ে মোটরবাইকে চেপে পগারপার হয় তারা।

এমন অভিযোগ শুনে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গত ২৫ বছরে লুঠপাটের ঘটনায় এমন ভাবে পেটপুজোর কথা শুনিনি।’’ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা মত্ত অবস্থায় ছিল। তারা এলাকার না বহিরাগত, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তবে ক্ষতি হলেও মিষ্টির দোকানের মালিক থেকে কর্মীদের কথায়, ‘‘বাবার জন্মেও এমন ডাকাতের কথা শুনিনি!’’

sweet plundering howrah narsingha dutta road howrah sweet shop sweet dacoity sweet shop sweet snatched
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy