Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষিকা নিগ্রহে দুই ‘বহিরাগত’ ধৃত ঢাকুরিয়ায়

বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষিকা-নিগ্রহে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব খাড়া করেছিল কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:২০
Share: Save:

বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষিকা-নিগ্রহে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব খাড়া করেছিল কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।

এ বার কার্যত তাতেই সিলমোহর পড়ল। শিক্ষিকা-নিগ্রহের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের নাম রাহুল হালদার ও বিজয় চৌধুরী। দু’জনেই ঢাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা ওই স্কুলের কোনও পড়ুয়ার অভিভাবক নন। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত তাঁদের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ঝর্না সরকার শুরুতেই অভিভাবকদের ক্ষোভ সামলাতে পারলেন না কেন, এ বার সে-দিকে নজর পড়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের। স্কুল সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার গোলমাল শুরুর আগেই সকালে অভিভাবকদের একটি দল স্কুলের ভিতরে পৌঁছে গিয়েছিল! সেখানে ঝর্নাদেবীর সামনেই অভিযুক্ত শিক্ষক দীপক কর্মকারের সঙ্গে কয়েক জন অভিভাবকদের তুমুল বাদানুবাদ হয়। হে‌নস্থার আশঙ্কায় ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে কোনও ভাবে একটি ঘরের মধ্যে আটকে দেন কয়েক জন শিক্ষিকা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখেও কসবায় জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরে কাউকে খবর দেওয়া হয়নি। স্কুলে পৌঁছেও নিরাপত্তা কমিটির কাছে অভিযোগ না-জানিয়ে থানায় যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করে নিগৃহীত শিশুটির পরিবার। এই গোটা ঘটনায় ঝর্নাদেবীর ভূমিকা কী ছিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘জনস্রোত আটকানো যায় না। আমি এর থেকে বেশি কিছু বলব না।’’

ওই স্কুলে মঙ্গলবারের গোলমালকে প্রথম থেকেই সংগঠিত বলে মনে করছেন স্কুলশিক্ষা দফতর ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর পিছনে কাদের মদত রয়েছে, তার সন্ধান চলছে। ২০১৭ সালেও স্কুলে এক বার গোলমাল হয়েছিল। সে-বার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের দুই প্রধান শিক্ষিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব সামনে আসে। তা সামলাতে স্কুলে যেতে হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীকে। তার পরে স্কুলকে ‘ইন্টিগ্রেটেড’ বা সুসংহত করে গোটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা করা হয় দীপান্বিতা রায়চৌধুরীকে। প্রাথমিক স্তরের প্রধান শিক্ষিকার পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা করা হয় ঝর্নাদেবীকে। তার পরেও কি সমস্যা মেটেনি, চলতি সপ্তাহের ঘটনার পরে উঠছে এই প্রশ্ন।

আপাতত নিরাপত্তা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। গোটা স্কুলকে সিসি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এখন ৩৬টি ক্যামেরা রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও ১০টি ক্যামেরা। বাইরের দিকে দু’টি ক্যামেরা রাখা হবে। যে-ঘরে হেনস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ, ক্যামেরা বসছে সেই ১০ নম্বরেও। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না-হলেও বৃহস্পতিবারে উপস্থিতির হার কিছুটা বেড়েছে। পুরুষ শিক্ষক না-রাখা ও নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে স্কুলে লিখিত আবেদন করেন এক দল অভিভাবক। আজ, শুক্রবার মধুসূদন মঞ্চে স্কুলের যে-অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, গোলমালের জেরে তা বাতিল করা হয়েছে। এ দিন স্কুলে এসেছিলেন নিগৃহীত দুই শিক্ষিকা রূপা ভট্টাচার্য ও শ্যামলী চৌধুরী। তাঁরা জানান, মনের জোরেই স্কুলে এসেছেন। এ দিনও স্কুলের বাইরে পুলিশি প্রহরা ছিল। থমথমে ভাব পুরোটা কাটেনি।

যে-শিশুকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে, তার মা জানান, তাঁর সন্তান এখনও ভয়ে ভয়ে আছে। আপাতত তাকে স্কুলে পাঠানোর পরিকল্পনা নেই তাঁদের। তাকে বিনোদিনী স্কুলে আর পাঠানো হবে কি না, পুজোর ছুটির পরে তাঁরা সেটা ভেবে দেখবেন। ‘‘এখন এ-সব ভাবার মতো অবস্থায় নেই আমরা। মেয়ে অসুস্থ। আমিও অসুস্থ,’’ বলেন শিশুটির মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Outsider teacher Harassment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE