Advertisement
E-Paper

পড়ার চাপে পালিয়ে ট্রেনে উদ্ধার দুই ছাত্রী

শুক্রবার, রাত প্রায় ১১টা। হাওড়া স্টেশনে তন্ন তন্ন করে দুই কিশোরীর খোঁজ করছিল পুলিশ। সিসি টিভি-র ফুটেজ ঘেঁটেও হদিস মিলছিল না তাদের। তল্লাশি চলাকালীন হঠাৎ স্টেশনের ওয়েটিং রুমে মিলল একটি স্কুলের বই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫২

শুক্রবার, রাত প্রায় ১১টা। হাওড়া স্টেশনে তন্ন তন্ন করে দুই কিশোরীর খোঁজ করছিল পুলিশ। সিসি টিভি-র ফুটেজ ঘেঁটেও হদিস মিলছিল না তাদের। তল্লাশি চলাকালীন হঠাৎ স্টেশনের ওয়েটিং রুমে মিলল একটি স্কুলের বই। বইটি ওই দুই কিশোরীরই হবে বলে নিশ্চিত হল পুলিশ। তল্লাশি আরও বাড়ল। বেশ কিছু ক্ষণ বাদে লখনউ যাওয়ার একটি ট্রেন ঢুকল হাওড়া স্টেশনে। টানা অত ক্ষণ তদন্ত চালানোর পরে পুলিশের অনুমান ছিল, ওই ট্রেনে চেপেই লখনউ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে ওই দুই স্কুলপড়ুয়া।

সেই ট্রেনে তল্লাশি চালিয়ে রাত দুটোর পরে অবশেষে খোঁজ পাওয়া যায় তাদের। শনিবার সকালে দুই কিশোরীকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।

শুক্রবার রাতে দুই পরিবারের তরফে বিধাননগর পুলিশে জানানো হয়, স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফেরেনি ওই দুই ছাত্রী। সল্টলেকের এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া তারা। এক জনের বয়স ১৪, অন্য জনের ১২ বছর। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কিছু দিন আগে ক্লাসে বসে লখনউ যাওয়ার গল্প করেছিল দুই কিশোরী। সেই মতো ট্রেনের সময়সূচি বার করে ফেলে পুলিশ। দেখা যায়, হাওড়া থেকে লখনউ যাওয়ার বেনারস এক্সপ্রেস ছাড়ার সময় রাত সাড়ে আটটা।

পুলিশ খোঁজ করে জানতে পারে, ট্রেনটি ৬ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। ফলে রাত আড়াইটের আগে হাওড়া ছাড়বে না ট্রেন। হাওড়া স্টেশনে গিয়ে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তার মধ্যে কিশোরীদের নাম ও স্কুলের নাম লেখা পাঠ্যপুস্তক হাতে পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, দুই কিশোরী ওই স্টেশনেই এসেছে। এর পরে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, বেনারস এক্সপ্রেসের টিকিটও কেটেছে তারা। রাত দুটো নাগাদ ট্রেন হাওড়া স্টেশনে ঢোকে। তত ক্ষণ অপেক্ষাই করছিল পুলিশ। তারা ট্রেনে উঠলে সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় দুই কিশোরীকে।

কিন্তু লখনউ যাচ্ছিল কেন তারা?

কিশোরীদের সল্টলেকে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারীদের। পুলিশ সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া ওই দুই কিশোরীর দাবি, স্কুলে পড়াশোনার চাপ খুব বেশি। তারা আর চাপ নিতে পারছিল না। গুগল ঘেঁটে নাকি তারা জানতে পেরেছে, লখনউতে পড়াশোনার চাপ তুলনায় কম। সেখানে কাজের সুযোগও বেশি। যদিও যুক্তি দিয়ে সেই কথা মানতে পারেননি তদন্তকারীরা। ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তা জানতে সব দিক খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু তেমন কোনও গ্রহণযোগ্য সূত্র মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

দুই কিশোরীর কাছে পুলিশ জানতে পারে, শুক্রবার আলাদা পোশাক, জুতো নিয়েই স্কুলে গিয়েছিল তারা। স্কুল ছুটির পরে রিকশা করে বাসস্টপ, সেখান থেকে বাসে করে হাওড়া স্টেশন যায় দু’জন। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছিল। ধানবাদে যাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনিই ওই দু’জনের টিকিট কাটার ফর্ম ভরে দেন বলে পুলিশকে জানিয়েছে ওরা। স্টেশনেই তারা পোশাক বদলে নেয়। এ সবের মধ্যেই স্কুলের বই তারা ওয়েটিং রুমেই ফেলে যায়। রাতে স্টেশন চত্বরের দোকান থেকে খাওয়াদাওয়া করে ওই এলাকাতেই ঘুরে বেড়াতে থাকে ট্রেনের অপেক্ষায়।

শনিবার পরিবারের হাতে ওই দুই কিশোরীকে তুলে দেওয়ার পরে হাঁফ ছাড়ে পুলিশ। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘ভাগ্যিস ৬ ঘণ্টা দেরিতে চলছিল ট্রেন, তাই ওদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হল।’’ তবে দুই কিশোরীর এত সব কাণ্ড দেখে এখনও ঘোর কাটছে না তদন্তকারীদের।

Students Recovered
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy