Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
language

Language: বাংলার হাত ধরে ক্লাসঘরে ভারতের স্পর্শ

উর্দুভাষীদের অনেকেই মনে করেন, এ রাজ্যে ডব্লিউবিসিএস থেকে শুরু করে নানা চাকরির পরীক্ষার জন্য বাংলা পড়া, বোঝা, লেখা রপ্ত হলে সুবিধা হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:৫২
Share: Save:

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির আমেজে এ কথাগুলো খুব একটা মনে পড়ে না। ‘জাতির জনক’ গান্ধী তখন রোজ সকালে নিয়ম করে বাংলা শিখছিলেন। ‘আমি মনে করি আমি এক জন ভারতীয়, তাই আমি এক জন বাঙালি’— সগর্বে ঘোষণা করে নোয়াখালি, কলকাতা, দিল্লি করে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।

আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু আবার তাঁর আদর্শের নির্যাস বোঝাতে উর্দু লব্জকে আপন করেন। ইত্তেহাদ, ইতমাদ, কুরবানি (ঐক্য, আস্থা, বলিদান)-র বার্তাতেই তাঁর বাহিনীর হিন্দু, মুসলিম, শিখ বা পাঠান, তামিল, বাঙালিদের তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। “আজকের ভারতে কিন্তু ভাষাকেই ভাঙনের হাতিয়ার করা হচ্ছে”— আক্ষেপ এ শহরের একটি নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক মহম্মদ আনোয়ারের। বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে জায়গার নামেও উর্দু, ফার্সি থাকলেই তার মধ্যে ইসলামিকরণের ঘ্রাণ পেয়ে ফাটল ধরাতে চাইছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একাংশ। আনোয়ারের কথায়, “আমরাও পাল্টা ভাষাকেই ঐক্যের সূত্র হিসেবে দেখতে চাই। খিদিরপুর, তালতলা, ট্যাংরায় কত জন উর্দুতে রবীন্দ্রনাথের ভাল অনুবাদ না-পেয়ে হা-হুতাশ করেন। বলেন, ইংরেজিতে না-পড়ে মূল বাংলায় রবীন্দ্রনাথকে পড়তে পারলেই আরাম হত! এমন অনেকের কথা ভেবেই কম সময়ে আকর্ষক ভঙ্গিতে বাংলা শেখানোর কোর্স চালুর কথা মনে হল।” বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতিতে উর্দু, ফার্সি, আরবি-যোগ জানতে ইচ্ছুক বঙ্গভাষীদের জন্য ওই তিন ভাষা শিক্ষার আয়োজন করেছে ‘নো ইয়োর নেবার’ নামের একটি মঞ্চ। এই ফেব্রুয়ারিতে প্রধানত অবাংলাভাষীদের জন্য বাংলা শেখার পাঠ্যক্রমও শুরু করছেন ওঁরা।

উর্দুভাষীদের অনেকেই মনে করেন, এ রাজ্যে ডব্লিউবিসিএস থেকে শুরু করে নানা চাকরির পরীক্ষার জন্য বাংলা পড়া, বোঝা, লেখা রপ্ত হলে সুবিধা হয়। কিন্তু বাংলায় অনেকেই প্রাণের যোগও খুঁজে পান। সদ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশ, পার্ক সার্কাসের মেয়ে ফৈজা সিরাজ বলছিলেন, “আমি সব ফেলুদা ইংরেজিতে পড়েছি। ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমাটাও খুব প্রিয়। স্কুলের নিচু ক্লাসে অল্পস্বল্প বাংলা পড়া আছে। বাংলা পড়ার একটা সুযোগ পেয়ে তাই ছাড়তে চাই না।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, গোলপার্কের ইনস্টিটিউট অব কালচার থেকে শুরু করে বিক্ষিপ্ত উদ্যোগে অবাংলাভাষীদের জন্য বাংলা শেখার সুযোগ রয়েছে কলকাতায়। কিন্তু একটি ভাষার মাধ্যমে অপরকে চেনা বা বহুত্বের চর্চার সূত্র সচরাচর অনেকের মাথায় থাকে না। কর্নাটকি সঙ্গীতের শিল্পী টি এম কৃষ্ণ তাঁর অনুষ্ঠানে এ দেশের চিরকালীন আদর্শের খোঁজে রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, তুলসীদাস, ফৈজ আহমেদ ফৈজ থেকে তামিল, মালয়ালমের মরমি কবিদের সৃষ্টির কাছে হাত পেতেছেন। মুম্বইয়ের বাসিন্দা লোপামুদ্রা মোহান্তির উদ্যোগে ঠিক এখনই নেটমাধ্যমে চলছে ৩০টি ভারতীয় ভাষা পাঠের আসরের এক উৎসব। চলবে ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পর্যন্ত। ‘‘এ ভাবে দেশের বিভিন্ন পড়শি ভাষার রসটুকু সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আলাদা গুরুত্ব’’— মত ছোটদের গল্পের লেখিকা সুদেষ্ণা মৈত্রের। তিনিই অনলাইনে বাংলার এই ক্লাস সামলাবেন। সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘নীরস ব্যাকরণের বদলে ছড়া, গল্প, আড্ডায় পড়ুয়াদের বাংলা শেখাতে চাই।’’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মধ্যযুগের বাংলা নিয়ে আলিগড়ে গবেষণারত কানিজ সিদ্দিকী উৎসাহিত, “বাংলায় আর একটু সড়গড় হলে গবেষণায় সুবিধা হবে।” এ রাজ্যে স্কুলে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা চর্চায় সর্বত্র সমান সুবিধা নেই। তপসিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক খালিদ হোসেন বা পার্ক সার্কাসের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মহম্মদ নাসিমেরা তাই বাংলা ক্লাসে নাম লেখাচ্ছেন। পার্ক সার্কাসে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী
প্রতিবাদের মাঠে ফৈজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন রবি-নজরুলও। খালিদের কথায়, “তখনই বুঝি, ঠিকঠাক ভারতীয় হতে মিষ্টি ভাষা বাংলাও শেখা চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

language 21 February
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE