কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ দেশের শীর্ষে বলে ঘোষিত হয়েছে সংসদে। এ রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কাছে তা বড় সম্মান। কিন্তু শহুরে দরিদ্রদের জন্য পুরসভাগুলির যে নিজস্ব ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প রয়েছে, তাতে শ্রমিকদের বেতন গত সাত বছরে এক পয়সাও বাড়েনি। যা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে কলকাতা-সহ একাধিক পুর বোর্ড। এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভায় ১০০ দিনের কাজে কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এক মেয়র পারিষদ জানান, ২০১০ সালে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে কাজ দেওয়া হয়েছিল। এখন ২০১৮ সালেও তাঁদের মজুরি ১০০ টাকাই রয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকায় এখন ১০০ দিনের কাজে কর্মীরা পাচ্ছেন দৈনিক ১৮০ টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই বৈষম্য? কেন্দ্রের প্রকল্পের সঙ্গে মজুরিতে এতটা তফাত কি যুক্তিসঙ্গত? পুর প্রশাসনের সাফাই, টাকা দেয় রাজ্য সরকার। তাই মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্তও সরকার নেবে। তাদের কিছু করার নেই। তবে এত কম বেতন দেওয়া যে ঠিক হচ্ছে না, তা মেনে নিচ্ছেন পুরকর্তারাও। যদিও এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্প’ (এমজিএনআরইজিএ) শুরু করেছিল। যা ১০০ দিনের কাজ বলেই বেশি পরিচিত। ২০১০ সালে ওই প্রকল্পে এক জন কর্মীর দৈনিক মজুরি ছিল ১২০ টাকা। ওই বছরই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আর্বান এমপ্লয়মেন্ট স্কিম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে। পুরসভায় তা ১০০ দিনের কাজ বলেই পরিচিত হয়। দৈনিক মজুরি ধার্য হয় ১০০ টাকা। কলকাতা পুরসভার নথি থেকে জানা গিয়েছে, সাধারণের পাশাপাশি তফশিলি জাতি, উপজাতি-সহ বিভিন্ন শ্রেণির দরিদ্র বেকারদের জন্য শুধু কলকাতা শহরে বছরে ১০০ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। সেই টাকা দিয়েই মজুরি দেওয়া হয় ওই কর্মীদের। শহরের জঞ্জাল পরিষ্কার থেকে শুরু করে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি— বিভিন্ন রকম কাজ করতে হয় ওই প্রকল্পে। পুরসভার একাধিক কাউন্সিলর জানান, মজুরি কম হওয়ায় ইদানীং কাজের প্রতি উৎসাহ কমে গিয়েছে কর্মীদের। ফলে শহরে পরিষেবার কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আর পুর অফিসারদের কারও কারও অভিযোগ, পুরসভার চেয়ে ওই শ্রমিকদের রাজনৈতিক কাজে অনেক বেশি করে ব্যবহার করা হয়। তাঁদের ক্ষোভের সেটাও একটা কারণ।
কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের দায়িত্বে রয়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ওটা আদৌ ১০০ দিনের প্রকল্প নয়। পুরসভার লোকেরা ভুল বলে। শহরের গরিব বেকারদের রোজগারের জন্য প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। কর্মীরাও মন দিয়ে কাজ করে না।’’ যদিও কলকাতার মেয়র থেকে একাধিক মেয়র পারিষদ ওই কর্মীদের ১০০ দিনের কাজের কর্মী বলেই মনে করেন। একাধিক মেয়র পারিষদের বক্তব্য, প্রতি ১০০ দিন অন্তর কর্মীদের পাঁচ দিন করে বসিয়ে রাখা হয়। তার পরে আবার কাজে নিযুক্ত করা হয়। গত আট বছরে মজুরি না বাড়ায় ক্ষোভ বাড়ছে তাঁদের। কমছে কাজ করার ইচ্ছেও।
পুরসভা সূত্রের খবর, মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পুরসভায় ১০০ দিনের এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ রামপিয়ারি রামের কথায়, ‘‘মজুরি বাড়ানো উচিত। সরকার দেখছে। আমিও পুর প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy