এমনিতেই করোনা সংক্রমণের ওঠানামা নিয়ে আতঙ্কিত মানুষ। তার উপরে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হওয়ায় চোখ রাঙাচ্ছে মশাবাহিত রোগ, বিশেষত ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া। এ সবের মধ্যে আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে উৎসব। সেই সময়ে মশাবাহিত রোগ যাতে পুর প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, তাই আগেভাগে সতর্ক হতে চাইছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। এখনও পর্যন্ত মশাবাহিত রোগে কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর না এলেও মশা নিয়ন্ত্রণে ফাঁক রাখতে চাইছেন না পুর কর্তৃপক্ষ। তারই অঙ্গ হিসেবে ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে প্রতি সপ্তাহে ওয়ার্ডভিত্তিক ভাবে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে যুক্ত পুরকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে পুরসভা। সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের প্রশ্ন, নিয়মমাফিক কাজ হলে এবং তার প্রতি নজর থাকলে আলাদা করে পুর কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি ওয়ার্ডে এমন বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিতে হল কেন? তা হলে কি নিয়মিত কাজ হচ্ছে না? অভিযোগ উড়িয়ে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বছরভর নিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মশাবাহিত রোগ, বিশেষত ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তাই আরও নিবিড় ভাবে কাজ করা ও কাজের তদারকিতে জোর দিতে এমন পরিকল্পনা।
পুরসভা সূত্রের খবর, তাদের আওতাধীন এলাকায় ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দৈনিক মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে যুক্ত থাকেন ১৫ জন কর্মী। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ দেখেছিলেন, কোথাও অপরিষ্কার জলাশয়, কোথাও আবার চৌবাচ্চায় জল জমে থাকায় সেখানে মশার লার্ভা জন্মেছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা আবর্জনার স্তূপে এবং থার্মোকলের পাত্রে জমে থাকা জলেও আস্তানা গেড়েছে মশা।
পুরসভা সূত্রের খবর, এমন সব অভিজ্ঞতা থেকেই ঠিক হয়েছে, ওয়ার্ডভিত্তিক কোথাও জল জমছে কি না, নিয়মিত মশার তেল ছড়ানো হচ্ছে কি না— সে সবে নজরদারি বাড়ানো হবে। তা ছাড়া পুর এলাকার বিভিন্ন জলাশয় নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় জলের প্রবাহ আটকে রয়েছে। ওই সব জলাশয় সংস্কারে নগরোন্নয়ন দফতরে খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছিল পুরসভা। পুরসভার দাবি, প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। জলাশয় সংস্কারে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।
যদিও বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় কয়েক লক্ষ মানুষের বাস। পুরকর্মীরা মশার তেল স্প্রে করার কাজ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বিশেষত খাল সংলগ্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই মশার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্য প্রশাসক জানান, করোনা প্রতিরোধের সঙ্গে একযোগে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। অতীত অভিজ্ঞতার কথা ভেবেই কাজে জোর বাড়ানো হচ্ছে। তাই প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে কাজের অগ্রগতি দেখা হবে। পরামর্শ ও নির্দেশও দেওয়া হবে।