E-Paper

বিদ্যুৎহীন বহু আবাসনে এখনও দাঁড়িয়ে জল

ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের একটি আবাসন, বেহালার কয়েকটি এলাকাতেও এ দিন দুপুর পর্যন্ত জল নামেনি বলেই অভিযোগ। আবাসিকদের অভিযোগ, পুরসভা যদি তৎপর হত, তা হলে জল নামতে তিন দিন লাগত না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
জল-যোগ: এখনও নামেনি জল। দক্ষিণ কলকাতার সার্ভে পার্ক এলাকার একটি আবাসনের জমা জলে দাঁড়িয়ে বিকল হয়ে যাওয়া একাধিক গাড়ি। বৃহস্পতিবার।

জল-যোগ: এখনও নামেনি জল। দক্ষিণ কলকাতার সার্ভে পার্ক এলাকার একটি আবাসনের জমা জলে দাঁড়িয়ে বিকল হয়ে যাওয়া একাধিক গাড়ি। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

সোমবার রাতের একটানা প্রবল বর্ষণের পরে কেটেছে তিন দিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে খটখটে রোদের মধ্যে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার ই এম বাইপাসের ধারে একটি আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক জন বাসিন্দা জমা জল পেরিয়ে রাস্তায় উঠছেন। আবাসনের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে তখনও পাম্প বসিয়ে জল বার করা হচ্ছে। শুধু সার্ভে পার্ক এলাকার ওই আবাসনই নয়, ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের একটি আবাসন, বেহালার কয়েকটি এলাকাতেও এ দিন দুপুর পর্যন্ত জল নামেনি বলেই অভিযোগ। আবাসিকদের অভিযোগ, পুরসভা যদি তৎপর হত, তা হলে জল নামতে তিন দিন লাগত না। জল পুরোপুরি নামেনি বলে অনেক আবাসনে এ দিন দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎও আসেনি। এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।

সার্ভে পার্কের ওই আবাসনের পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের সামনে জমে থাকা জল পাম্পের সাহায্যে বার করা হচ্ছিল। আবাসনের পূর্ব দিকের প্রবেশপথের সামনে বালির বস্তা দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। কারণ, ওই বালির বস্তা না দিলে আবাসনের বাইরে সার্ভিস রোডের জল ফের আবাসনের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবাসনের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, অধিকাংশ রাস্তায় এখনও জল। এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘২৪ বছর এই আবাসনে রয়েছি। এমন পরিস্থিতি কখনও হয়নি। জল ঢুকে অধিকাংশ গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। অনেকেই বাড়ি ছেড়েআত্মীয়স্বজনের বাড়ি, অতিথিশালায় গিয়ে উঠেছেন। বয়স্ক মানুষেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’ রাজীব দত্ত নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘জল বার করার জন্য আমাদের নিজস্ব পাম্প রয়েছে। কিন্তু টানা বিদ্যুৎ না থাকায় সেই পাম্পও চালানো যাচ্ছে না। আবাসনের অনেক গাড়িই বিকল হয়ে গিয়েছে।’’

ওই আবাসনের হাউজ়িং বোর্ডের সদস্য শকুন্তলা চন্দ বলেন, ‘‘এক অসহনীয় পরিস্থিতি। ফোনে কথা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। কারণ, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ফোনের চার্জ শেষ। আশা করেছিলাম, বুধবার বিদ্যুৎ এসে যাবে। কিন্তু জল না নামায় বিদ্যুৎ আসেনি। আমরা বুধবার বিকেল পর্যন্ত পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনও সহযোগিতা পাইনি। পরে ওরা পাম্প চালিয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, প্রতিটা টাওয়ারের বাসিন্দাদের জন্য জল, মোমবাতি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে খাবার কিনেও দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কয়েকটি ব্লকে আলো এসেছে। কিন্তু তিন দিন পরেও জল পুরোপুরি নামল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

বালিগঞ্জ এলাকার কর্নফিল্ড রোডের আবাসনে জল নামলেও এখনও বিদ্যুৎ আসেনি বলে অভিযোগ। চার্বাক রায় নামে ওই আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘জল নেমে গিয়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ না আসায় মারাত্মক ভোগান্তি চলছে।’’ বালিগঞ্জের ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের একটি আবাসনের বেসমেন্টে, গ্যারাজে, কমিউনিটি হলে এ দিন সকালেও জল জমে ছিল। আবাসিকেরা পাম্প ভাড়া করে, জেনারেটরের মাধ্যমে জল বার করছিলেন। আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমাদের পুজো মণ্ডপে এখনও জল। মণ্ডপে ঢাক, পুজোর নানা সামগ্রীজলে পড়ে রয়েছে। আবাসনের ৯০ শতাংশ ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ নেই। জল ঢুকে বেশির ভাগ গাড়ি খারাপ। একতলার বাসিন্দাদের আসবাবপত্র বার করে সিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছে। কবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরব, জানি না।’’

তিন দিন পরেও কেন জল নামল না? মেয়র ফিরহাদ হাকিম আগেই বলেছিলেন, ‘‘বহু আবাসন নিজস্ব নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করেনি।’’ এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে,অধিকাংশ আবাসনের বেসমেন্ট নিচু করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে জল সেখানে গিয়ে জমে যাচ্ছে। তবে পুরসভা লাগাতার পাম্প চালিয়ে জল বার করছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Drainage Trouble Survey park

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy