Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

বাংলার গ্রামের প্রধান উপেক্ষিত ঐশ্বর্য বাংলার টেরাকোটা মন্দির।’ লিখছেন শ্রীলা বসু, তাঁর বাংলার টেরাকোটা মন্দির/ আখ্যান ও অলংকরণ (সিগনেট প্রেস/ একটি আনন্দ প্রকাশনা) বইয়ে। ভারী সত্যি কথা।

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০১:০০

উপেক্ষিত ঐশ্বর্যের পুনরাবিষ্কার

বাংলার গ্রামের প্রধান উপেক্ষিত ঐশ্বর্য বাংলার টেরাকোটা মন্দির।’ লিখছেন শ্রীলা বসু, তাঁর বাংলার টেরাকোটা মন্দির/ আখ্যান ও অলংকরণ (সিগনেট প্রেস/ একটি আনন্দ প্রকাশনা) বইয়ে। ভারী সত্যি কথা। স্বাধীনতার আগে সাহেবরা এ দিকে তেমন মনোযোগ না দিলেও পঞ্চাশ-ষাটের দশকে কয়েকজন গবেষক বহু পরিশ্রমে বাংলার মন্দিরের সামগ্রিক বৃত্তান্ত সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন, সে সব উদ্যোগ প্রকাশ-অপ্রকাশের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন মাত্রায় সাফল্য পেয়েছিল। সে সময়ে ওঁদের দেখা বহু মন্দির আজ লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায়, কোথাও বা সংস্কারের আগ্রাসনে আমূল পরিবর্তিত। কিন্তু এখনও অনেক অনুসন্ধান বাকি থেকে গিয়েছে, নতুন নতুন প্রশ্ন উঠেছে যার সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি।

সব থেকে দুঃখের কথা, সাধারণ মানুষ যাঁরা এই সব মন্দিরের আশেপাশে থাকেন, তাঁদের আজও তেমন ভাবে আগ্রহী করে তোলা যায়নি এই ঐশ্বর্য সংরক্ষণে। মন্দিরের গা থেকে টেরাকোটা ফলক খুলে নেওয়া কি ভাঙা মন্দির ধূলিসাৎ করে ইট পাথর অন্য কাজে লাগানো তাই আজও নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ফাঁকে গ্রাম-গ্রামান্তর ঘুরে মন্দির নিয়ে নতুন চর্চার দিশা দেখানো বড় কম কথা নয়। শ্রীলা সেটাই করেছেন, আর এ কাজে শামিল তাঁর স্বামী অভ্র বসু তুলেছেন অজস্র চমৎকার ছবি। এমনকী ছেলে শ্রয়ণকেও তাঁরা মন্দিরের নেশা ধরিয়েছেন, সে-ও মায়ের সঙ্গে এই বই তৈরিতে হাত লাগিয়েছে!

বাংলার টেরাকোটা মন্দির-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শ্রীলা জোর দিয়েছেন টেরাকোটায় রূপায়িত আখ্যানের উপর। কৃষ্ণ, রাম, চৈতন্য কথা, দেবী প্রসঙ্গ, অন্যান্য পৌরাণিক প্রসঙ্গ কী ভাবে শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন মন্দিরের অলংকরণে, সমাজের কথাই বা কী ভাবে এসেছে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখিয়েছেন সে সব। শিকারদৃশ্য, অভিজাত সমাজ, সংগীতচর্চা, জীবনজীবিকা, পোশাক, যৌনতা, ইউরোপীয় প্রভাব, বাদ পড়েনি কিছুই। সব থেকে উল্লেখযোগ্য এই বইয়ের সুমুদ্রিত রঙিন ছবির সম্ভার, যা থেকে পাঠক সহজেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাংলায় এমন বইয়ের খুব প্রয়োজন ছিল। সঙ্গে বাঁ দিকে বইটির প্রচ্ছদ, ডান দিকে টেরাকোটায় রাম-সীতার পাশা খেলার দৃশ্য, বীরভূমের উচকরণের শিবমন্দির (১৭৬৯) থেকে।

নোটবই

চল্লিশ পেরিয়ে গেছে ‘সোনার কেল্লা’র বয়স, ১৯৭৪-এর ডিসেম্বরে প্রথম দেখেছিলাম আমরা। আজও সে ছবির কেল্লা-উট-বালিয়াড়ি মুকুলের মতো যেন বাঙালিরও আর-জন্মের স্মৃতি। জয়সলমিরের স্বর্ণাভ কেল্লার রঙ সত্যজিতের আঁকা পোস্টারেও। তাঁর কলমে ফেলুদা আবির্ভাবের পঞ্চাশ বছর পর চমৎকার একটা নোটবুকে ঠাঁই পেল পোস্টারটি। এমন আরও বেশ কিছু সত্যজিৎ-সিনেমার পোস্টার আর বুকলেট-এর ছবি নিয়ে ‘অ্যান এক্সক্লুসিভ নোটবুক’ বের করেছে স্টারমার্ক: ‘রে/ শর্ট টেকস’। পিছনে অবশ্যই সত্যজিৎ রায় সোসাইটি-র আর্কাইভ। প্রতিটি ছবির সঙ্গে গল্পের মতো ছোট্ট গদ্য দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের, আর গোটা নোটবুকের অঙ্গসজ্জা পিনাকী দে’র। মুখবন্ধে সন্দীপ রায় লিখেছেন, কী ভাবে একটু-একটু করে তৈরি হয়ে উঠেছিল সত্যজিতের শিল্পীমনটি, যেখানে মিশে গিয়েছিল প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের হাতমেলানো! অবশ্য সংগ্রহযোগ্য।

কবি প্রণাম

‘‘চতুরঙ্গে’র সাধুভাষা সাধুভাষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।’’ বুদ্ধদেব বসুই পারেন এমন মন্তব্য করতে, তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথের গদ্য’ রচনাটি ফিরে পড়া গেল কবি-প্রণাম-এর সদ্য প্রকাশিত লালমাটি-র প্রতিলিপি সংস্করণে। ১৯৪১-এর ডিসেম্বরে শ্রীহট্ট-র বাণীচক্র-ভবন থেকে প্রথম বেরয় কবি-প্রণাম, সম্পাদক ছিলেন নলিনীকুমার ভদ্র, অমিয়াংশু এন্দ, মৃণালকান্তি দাশ, সুধীরেন্দ্রনারায়ণ সিংহ।

এই সংস্করণটির অন্যতম সম্পাদক ও প্রকাশক নলিনীকুমার জানিয়েছিলেন, ‘মানুষ’ রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে তথ্য সন্নিবিষ্ট এ-বইতে, সঙ্গে শ্রীহট্টের সঙ্গে কবির সম্পর্কের আভাসও। অসমের বিশিষ্ট রবীন্দ্রচর্চাবিদ উষারঞ্জন ভট্টাচার্য অনতিদৃষ্ট এ-বইটির নতুন প্রকাশে সহায়তা করেছেন, লিখেছেন ‘উত্তরকথা’। ‘সূচনাকথা’য় শঙ্খ ঘোষ জানিয়েছেন ‘সাহিত্যবিচারের ব্যাপারে ততটা নয়, কিন্তু জীবনতথ্যের বিষয়ে এই ‘কবি-প্রণাম’ জাতীয় বইয়ের আজও খুব দরকার আছে রবীন্দ্রচর্চায়।’ প্রথম সংস্করণের মলাটটি অটুট এখানেও, নন্দলাল বসুর ছবি সহ (সঙ্গে সেই ছবি)।

কবির মনস্তত্ত্ব

মনস্তত্ত্বের চর্চাকারী মাত্রেই ‘রর্সাচ ইংকব্লট টেস্ট’-এর কথা জানেন। সুইজারল্যান্ডের মনোবিদ হারমান রর্সাচ ১৯২১ সালে এই অভীক্ষার ব্যবহার করেছিলেন, মানুষের মনের অন্দর-কন্দর, আবেগ-অনুভূতির মাপজোখে। সেই থেকেই মনোবিজ্ঞানে এর বহুল প্রয়োগ হয়ে আসছে। কিন্তু গূঢ় মনস্তাত্ত্বিক নিরীক্ষা দিয়ে রবীন্দ্রকবিতা কি কিট্‌স-এর বিখ্যাত ‘ওড’-এর ইমেজ বিশ্লেষণ? তা-ই করে দেখালেন তিন্নি দত্ত। আশুতোষ কলেজের শিক্ষক তিন্নির দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের দুই যুগন্ধর কবির মনস্তাত্ত্বিক সত্তা। কবিতার রূপকল্প ছেনে দেখিয়েছেন, কী ভাবে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি-সত্তা টুকরো টুকরো মিশে যাচ্ছে বহু-র মধ্যে, বা কিট্‌স কেমন আঁকড়ে থাকছেন নিজেকেই। এডিনবরা নেপিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে তিন্নির গবেষণা, একই বিষয়ে সম্প্রতি বক্তৃতা দিয়েছেন লন্ডনের নেহরু সেন্টারে।

কৃত্তিবাস

বইমেলা থেকে ফিরছিল তারা দু’জনে/রক্তের ঢেউ ধেয়ে এসেছিল উজানে... লিখেছেন মন্দাক্রান্তা সেন। ঢাকায় মৌলবাদীদের হাতে নিহত মুক্তচিন্তার লেখক অভিজিৎ রায় স্মরণে ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা তাদের পঁচিশে বৈশাখ সংখ্যার সঙ্গে প্রকাশ করেছে আট পাতার বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘মুক্ত?’। তাতেই প্রকাশিত মন্দাক্রান্তার কবিতা ‘প্রত্যয়’। ক্রোড়পত্রটিতে লিখেছেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, পিনাকী ঠাকুর, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অংশুমান কর, রাকা দাশগুপ্ত, দেবায়ুধ চট্টোপাধ্যায়। চিন্তা তো মুক্ত। কিন্তু কণ্ঠস্বর মুক্ত কি? বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে ক্রোড়পত্রটির নাম। মূল পত্রিকায় স্বপ্নময় চক্রবর্তীর গল্পেও একই প্রসঙ্গ। এ বারের সংখ্যায় রয়েছে আরও নানা আকর্ষণীয় লেখা।

সুগতকে নিয়ে

মাত্র ১৮ বছরে চলে গিয়েছিলেন সুগত ভট্টাচার্য। মেধাবী সুগত তখন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। ওঁর বাবা-মা তৈরি করেছেন ‘সুগত ফাউন্ডেশন’। মা অপর্ণা ভট্টাচার্যের কথায়, সুগত কখনও সময় নষ্ট করত না। পিছিয়ে পড়া সহপাঠীদের পড়াত। বলত, ওর মতো সুযোগ যে সব ছেলেমেয়েরা পায় না তাদের কথা। সুগতর ভাবনাকে ঘিরেই সংস্থাটি স্থানীয় স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনী, বই প্রকাশ, পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে নাটক ইত্যাদি ফি-বছর করে থাকে। এ বছরের বিষয় ‘বাতাস’। ২৬-২৮ মে ঢাকুরিয়ার পরেশনাথ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘বাতাস’ সম্পর্কে কর্মশালা ও অনুষ্ঠান। শেষ দিন আছে নাটক ‘হাওয়া নিশান’। সীমিত সামর্থ্যে এই ভাবেই সুগতকে নিয়ে আনন্দের সঙ্গে পথ চলা বাবা-মায়ের।

চিরজনমের রাজা

জঙ্গলমহলে আদিবাসী পরিবারে জন্ম কল্যাণ মান্ডির। অসচ্ছল পরিবেশে পড়াশুনোয় খামতি হয়নি। বাবা ছিলেন হাইস্কুলের শিক্ষক। সেখানে পড়া শেষ করে কল্যাণ এসেছিলেন স্কটিশচার্চ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এসসি করে অধ্যাপনা শুরু, প্রথমে দার্জিলিঙে ও পরে প্রেসিডেন্সিতে। কলকাতায় রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের সময় রবীন্দ্রসঙ্গীতে আকৃষ্ট হন। সহকারী শিক্ষা অধিকর্তার দায়িত্বের পর স্কটিশচার্চ থেকে অধ্যক্ষ রূপে অবসর নেন। সঙ্গীত চর্চা উপেক্ষিত হলেও হারিয়ে যায়নি। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নিয়মিত গাইতেন। অবসর জীবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতই সঙ্গী। ২৭ মে সন্ধে ছ’টায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথম অ্যালবাম ‘চিরজনমের রাজা’ প্রকাশ করবেন শ্রাবণী সেন। আয়োজনে সৃষ্টি পরিষদ।

উৎসাহ

মৃত্তিকা, উৎসরী, শ্রুতি, লিপিকা, সৌরীশ, শুভ্রা, অভিপ্রসূন, শুভ্রজিৎ-রা এখন উৎসাহে টগবগ করছে। ওদের মুখে মুখে ফিরছে কোয়ান্টাম ফিজিক্স, রিলেটিভিটি, কসমোলজি, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, সেল বায়োলজি, আরও কত কী। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হতে না হতে নানা প্রবেশিকা পরীক্ষার ধাক্কায় নাজেহাল বিজ্ঞানের এই ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার আনন্দ ভুলে যেতে বসেছিল। তার সন্ধান দিল কলকাতারই এক শিক্ষাঙ্গণ। মূলত বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কে সহজ করে নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে গত ষোলো বছর ধরে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স আয়োজন করছে এক ‘সামার স্কুল’-এর। ১৭-২৯ মে-র এই স্কুলে কোচবিহার, কামারপুকুর, সরিষা, বীরভূম, ভাটপাড়া, উলুবেড়িয়া আর কলকাতা মিলেমিশে একাকার। তবু আফশোস যায় না তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং এটির আহ্বায়ক সৌমিত্র সেনগুপ্তের— ‘থাকার জায়গা দিতে পারি না বলে জেলার কত ছেলেমেয়েকে যে ফিরিয়ে দিতে হয়।’ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসুক না এমন উদ্যোগে।

এলেম

কুড়ির দোরগোড়ায় ‘অহর্নিশ’ পত্রিকা। ২৪তম সংকলনের নিবেদনে কুড়ির উত্তাপ বড় প্রবল। কিন্তু পাতা ওল্টালে বোঝা যায়, শুধু গলায় নয়, ভেতরেও এলেম আছে। নরেশ গুহর তাতারসমুদ্র-ঘেরা কাব্যগ্রন্থের ক’টি কবিতা লেখক স্বয়ং পরিমার্জন করেছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত কপি থেকে তার হুবহু প্রতিলিপি দিয়ে সংখ্যাটির সূচনা। বাংলা বইয়ের শিল্পীদের নষ্টকোষ্ঠী উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছে অহর্নিশ, এ বারে সমীর সরকারের সারা জীবনের অজস্র অসামান্য শিল্পকর্ম সযত্নে বাছাই করে সাজিয়ে দিয়েছেন আর এক নবীন শিল্পী অর্ক পৈতণ্ডী (সঙ্গে শিল্পীর প্রতিকৃতি, আর ডান দিকে ১৩৬৪ বঙ্গাব্দের ‘দেশ’ শারদীয় সংখ্যা থেকে পরশুরামের ‘রাজমহিষী’ গল্পের অলংকরণ)। আর কে লক্ষ্মণকে নিয়ে দেবাশীষ দেবের গদ্য, আছে কবি গণেশ বসুর পঁচাত্তর উপলক্ষে ক্রোড়পত্র। শুরু হল সরোদিয়া অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারাবাহিক স্মৃতিকথা, আরও অনেক কিছু। পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ২৯ মে সাড়ে ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে, সঙ্গে আলোচনা ‘সত্যজিৎ ও সন্দেশের ছবি’ (দেবাশীষ দেব) ও ‘পাঠ্য মানিক, অপাঠ্য মানিক’ (রাজা ভট্টাচার্য)। শুধু সত্যজিৎ নন, মে মাস েয মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও জন্মমাস!

কুডাক

জামাইয়ের দীর্ঘ এবং নীরোগ জীবনের কামনাতেই নাকি জামাইষষ্ঠী। তা, এই বিপর্যয় গরমে বাঙালির ঘরে ঘরে প্লেট সাজিয়ে যে আয়োজন, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড আদি বিবিধ উপাদানের ভাণ্ডারে তার যা অবদান, তাতে জামাতা বাবাজীবন রবিবারের বারবেলায় কতটা সুস্বাস্থ্য এবং পরমায়ু অর্জন করলেন, শ্বশ্রূমাতাই জানেন। তবে, সাবধানের মার নেই, আপাতত ক’দিন একটু হালকা খাওয়াই ভাল, আসছে বছর আবার হতে হবে তো!

মুজিবরের তথ্যচিত্র

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কত বড় বিজ্ঞানী, কে না জানে আজ। কিন্তু তাঁর সেই বিজ্ঞানচর্চাকে কী ভাবে তিনি বাঙালির স্বয়ম্ভর শিল্পোদ্যোগ করে তুলেছিলেন, তা জানাও আজ সমান জরুরি, অন্তত নতুন প্রজন্মের কাছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞানী এবং দেশসেবক এই মানুষটিকে নিয়েই ছবি করেছেন মুজিবর রহমান। তাঁর গবেষণা, চিত্রনাট্য ও নির্দেশনায় তৈরি তথ্যচিত্রটি— ‘আচার্য পি সি রায়/ অ্যান এনশিয়েন্ট গুরু রিবর্ন’ (ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন ও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের উদ্যোগে) সম্প্রতি দেখানো হল নন্দনে, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর উপস্থিতিতে। মুর্শিদাবাদের তরুণ মুজিবর জীবনের শুরুতেই মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন হাতেকলমে ছবি তৈরির কাজ শিখতে। দেশজ শিকড় ও শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি প্রগাঢ় অনুসন্ধিৎসায় মুজিবর, মনীষাদীপ্ত বাঙালি ও ভারতীয়দের নিয়ে বেশ কিছু তথ্যচিত্র তৈরি করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— জীবন ও সময়’ রীতিমতো সাড়া তুলেছে বাঙালির মনে। এ-ছবির কাজে তাঁকে নিরন্তর উজ্জীবিত করেন শঙ্খ ঘোষ, আর ছবিটির প্রতি সপ্রশংস উইলিয়াম রাদিচে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের রবীন্দ্ররচনার পাঠ সংবলিত এ-ছবি দেখানো হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে, ইউরোপের চলচ্চিত্রোৎসবেও। সারা দুনিয়ার সম্মান ও স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ-ছবি এখন রবীন্দ্রবিদ্যার পাঠক্রমেরও অন্তর্ভুক্ত। বেশ কিছু নতুন ছবির কাজে ব্যস্ত মুজিবর— স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল, সাধক রামপ্রসাদ, কাছাড়ের ভাষা আন্দোলন ও মুর্শিদাবাদের ইতিহাস।

পথিকৃৎ

মনঃসমীক্ষণ বহু মানুষের দুঃখ দূর করিয়াছে, জীবনে সুখের ও আনন্দের হাসি ফুটাইয়াছে।’ তরুণচন্দ্র সিংহ (১৯০৪-১৯৮৫) লিখেছিলেন ‘চিত্ত’ পত্রিকায় (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ)। মনোবিদ্যা চর্চার পুরোধাপুরুষ গিরীন্দ্রশেখর বসুর সান্নিধ্যে এসে তরুণচন্দ্র মানবমনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে আত্মনিয়োগ করেন। মনোবিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি এসসি তরুণচন্দ্রের কাজের মূল ক্ষেত্র ছিল ‘অ্যাবনর্মাল সাইকোলজি’। গিরীন্দ্রশেখর প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় মনঃসমীক্ষা সমিতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে তরুণচন্দ্রেরই তত্ত্বাবধানে। এই সমিতি থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও শিক্ষিত করতে ইংরেজি ত্রৈমাসিক ‘সমীক্ষা’ আর বাংলা ত্রৈমাসিক ‘চিত্ত’ প্রকাশিত হতে থাকে।

গিরীন্দ্রশেখর প্রতিষ্ঠিত লুম্বিনি পার্ক মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রেরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি, জীবনের শেষ পর্বে তৈরি করেন মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ‘সমীক্ষণী’, একটি অলাভজনক সেবা-প্রতিষ্ঠান। ‘চিত্ত’-য় প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধাদি নিয়ে বেরল মাধবেন্দ্রনাথ মিত্রের সম্পাদনায় সমীক্ষণী গ্রন্থমালা-র চিত্তপট (প্রথম খণ্ড। এবং মুশায়েরা)। গ্রন্থমালা-র অন্যতম সম্পাদক নীলাঞ্জনা সান্যাল মনে করেন ‘ভারতীয় মনঃসমীক্ষণের ইতিহাসে তরুণচন্দ্রের উপস্থিতি ঐতিহাসিক আঙ্গিকে অপরিহার্যতার দাবি রাখে।’ ময়মনসিংহের সুসঙ্গ রাজপরিবারে নিরোদচন্দ্র সিংহ ও বনলতা দেবীর সন্তান হয়েও ব্যতিক্রমী জীবনধারাই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। মানসিক-ধ্বস্ত মানুষজনের বড় কাছের মানুষ ছিলেন এই অকৃতদার, রবীন্দ্রানুরাগী।

weekly brief stories kolkata karcha karcha kolkata karcha latest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy