Advertisement
E-Paper

শীতের রাতে পাঁচিলে ওঁরা কারা! চমকে উঠলেন পথচারী

শীতের রাত। মদ্যপানের মাত্রা বেশি হওয়ায় মাঝবয়সি ব্যক্তিটি প্রথমে ঠাহর করতে পারেননি ফাঁকা রাস্তায় ঠান্ডার মধ্যে পাঁচিলের উপরে কে বসে? পরনে নীল লুঙ্গি আর সাদা গেঞ্জি।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
মূর্তিমান: চমকে দেওয়া বুড়ো-বুড়ির এক জন। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

মূর্তিমান: চমকে দেওয়া বুড়ো-বুড়ির এক জন। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

শীতের রাত। মদ্যপানের মাত্রা বেশি হওয়ায় মাঝবয়সি ব্যক্তিটি প্রথমে ঠাহর করতে পারেননি ফাঁকা রাস্তায় ঠান্ডার মধ্যে পাঁচিলের উপরে কে বসে? পরনে নীল লুঙ্গি আর সাদা গেঞ্জি। কয়েক বার চিৎকার করেও মত্ত ব্যক্তি উল্টো দিক থেকে কোনও সাড়াশব্দ পেলেন না। বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘আমার না হয় গা গরম। তুই কে? এত ঠান্ডায় খালি গায়ে পাঁচিলের উপরে বসে কী করছিস?’’

শুক্রবার দুপুরে টালার বনমালী চ্যাটার্জি স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে এই গল্প করতে গিয়ে হেসে কুটিপাটি স্থানীয় বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। কারও আবার দাবি, রাত-বিরেতে ওই মাঝবয়সি এবং আরও এক মহিলাকে দু’টি পাঁচিলে বসে থাকতে দেখে অনেকেই ঘাবড়ে যাচ্ছেন। এমনকি রাস্তার কুকুরও ওদের সামনে এসে ঘেউ ঘেউ করছে। তবে দু’দিক থেকে প্রত্যুত্তর না আসায় অবলা সারমেয়র দলও ভ্যাবাচ্যাকা খাচ্ছে। এমনকি কান্নাও জুড়ে দিচ্ছে।

বনমালী চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একটি বাড়ির একতলায় থাকেন পূর্ত দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথায় ঘোমটা দিয়ে সাদা থান পরা এক জন বসে রয়েছেন তাঁর বাড়ির বারান্দার সামনেও। রাত-বিরেতে তাঁকে নিয়েও বিভ্রাট কম হচ্ছে না। বাচ্চারা ভাবছে ডাইনি বুড়ি। এমনকি ঘোর লেগে যাচ্ছে বয়স্কদেরও। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘দু’জনকে দেখে কুকুর চিৎকার করছে বাড়ির সামনে এসে। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। তবে মজাও লাগছে।’’

আরও পড়ুন: নেতাজির আলোও চুরি হয়ে যায় এ শহর থেকে!

আবার দু’জনকে ঘিরে দিনে-দুপুরে উৎসাহীরা নিজস্বীও তুলছেন। পা়ড়ার ক্লাবের দুর্গা পুজোর মণ্ডপ থেকে বনমালী চ্যাটার্জি স্ট্রিটের দু’টি বাড়ির পাঁচিলে দু’জনের উপস্থিতি পাড়ার লোকজনের মধ্যে বেশ একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

ওঁরা কারা?

শুক্রবার দুপুরে বনমালী চ্যাটার্জি স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল দু’জনকে বসে থাকতে। পাশেই টালা বারোয়ারি ক্লাবের দুর্গা পুজো উপলক্ষে দু’জনের সেই সময় জায়গা জুটেছিল মণ্ডপ চত্বরে। পুজে মিটে গিয়েছে। তাই এখন অতি জীবন্ত দু’টি মূর্তি আর প্রাণে ধরে আবর্জনায় ফেলতে পারেননি পুজোর উদ্যোক্তারা। বসিয়ে দিয়েছেন পাড়ার দুই বাসিন্দার বাড়ির পাঁচিলের উপরে। তার পর থেকেই বিশেষত রাতে পাঁচিলের উপরে বুড়ো ও বু়ড়ির মূর্তি দু’টি দেখে ‘রজ্জুতে সর্পভ্রম’ হওয়ার অবস্থা অনেকেরই। মূর্তি দু’টি বেশ আলোচনার খোরাকও হয়ে গিয়েছে।

এমন বিভ্রান্তির শিকার মাঝেমধ্যে হচ্ছেন পুজো কমিটির সদস্যেরাও। টালা বারোয়ারির সভাপতি কৌশিক ঘোষ হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমরা নিজেরাও আচমকা দেখে ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে যাচ্ছি। আসলে মূর্তি দু’টি এতটাই স্বাভাবিক দেখতে যে ওগুলি ফেলে দিতে পারিনি। এ রকম আরও কিছু ব্যবহৃত মূর্তি গুদামে পড়ে রয়েছে। কয়েকটি এ দিক-সে দিক দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

যদিও শিল্পী বিমল কুণ্ডু তৈরি মূর্তির এমন ‘খোরাক’ অবস্থাকে ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁর মতে, এ রকম ঘটনা অনেক পুজোর ক্ষেত্রেই হয়। থিমের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেলে শিল্পীর সৃ়ষ্টি অযত্নে এ দিক-সে দিক গড়াগড়ি খায়। শিল্পী সল্টলেকের এফ সি ব্লকের বাসিন্দা। এক বার নিজে এফ ডি ব্লকের মণ্ডপ থেকে টেরাকোটার পরিত্যক্ত মূর্তি কুড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিমলবাবু বলেন, ‘‘ওই মূর্তি এক জন শিল্পীর সৃষ্টি। আমাদের শহরে অহরহ মনীষীদের মূর্তি পার্কে বসে। আমার মনে হয় এই ধরনের মূর্তিকে কোনও পার্কের সৌন্দর্যায়নের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।’’

কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘২০১৭ সালে পুজোর থিমে ব্যবহৃত এমন মূর্তি আমরা ইকো পার্কে পাঠিয়েছি। এ বার তেমন কিছু পাঠানোর ছিল না।’’

Statue Durga Puja 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy