Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
wine

দোকান খুলিয়ে মদ কিনলেন শাসক ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার, গাড়ি তাড়া করে লুঠ করল অন্য গোষ্ঠী

ঘটনার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অন্য কাহিনি।

লেক মার্কেটে মনোজ ঘোষের গাড়ি এ ভাবেই ঘিরে ধরেন কিছু যুবক। —নিজস্ব চিত্র।

লেক মার্কেটে মনোজ ঘোষের গাড়ি এ ভাবেই ঘিরে ধরেন কিছু যুবক। —নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৩২
Share: Save:

গাড়ি তাড়া করে মদ লুঠ! মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখের দিন এমন ঘটনাই ঘটল খাস কলকাতায়। তা-ও আবার দিনদুপুরে। আর সেই মদ নিয়ে ধস্তাধস্তি থেকে শুরু করে, বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়ে গেল কলকাতার এক দাপুটে মেয়র পারিষদের বাড়ির সামনে। গোটা ঘটনাটাই হল পুলিশের সামনে। তবে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনও মামলা রুজু করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে একটি লাল এসইউভি যাচ্ছিল লেক মার্কেটের সামনে দিয়ে। সেই গাড়ির পিছনে বাইক নিয়ে তাড়া করছিলেন কিছু যুবক। লেক মার্কেটের নাকার কাছে এসএইভি-র চালক গাড়ি থামিয়ে পুলিশের সাহায্য চান। কিন্তু, তার আগেই দরজা খুলে গাড়ির বুটস্পেস তুলে ফেলেন বাইকে থাকা যুবকেরা। বুটস্পেসে ছিল বেশ কয়েকটা মদের বোতল!

ইতিমধ্যে গাড়ির মালিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, তিনি মদ কিনে ফিরছিলেন। তাঁকে তাড়া করে মদ লুঠ করতে চাইছে ওই যুবকেরা। পুলিশ তখনকার মতো ওই যুবকদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অন্য কাহিনি।

আরও পড়ুন: ত্রস্ত পয়লায় জনশূন্য দুই মন্দির

জানা যায়, গাড়ির মালিকের নাম মনোজ ঘোষ। ত্রিধারা সম্মিলনীর কাছে তাঁর বাড়ি। পেশায় নির্মাণ ব্যবসায়ী। তিনি শাসক দলের এক দাপুটে মেয়র পারিষদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে এলাকায় পরিচিত। মনোজ ঘোষ পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনি রীতিমতো ৩০ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে প্রিয়া সিনেমা হলের কাছে মনোহরপুকুর রোডের একটি মদের দোকান থেকে মদ কেনেন। মনোজের দাবি শুনে সেই দোকানে যায় পুলিশ। দেখা যায় দোকান বন্ধ। যোগাযোগ করা হয় মালিক সৌমিত্র সাহার সঙ্গে। সূত্রের খবর, তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, মনোজ-সহ আরও কয়েক জন যাঁরা সবাই মেয়র পারিষদের ঘনিষ্ঠ, ফোন করেছিলেন মদের দোকানের মালিককে। তাঁকে মদ বিক্রির জন্য অনুরোধ করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার নববর্ষে হালখাতা এবং লক্ষী-গণেশ পুজোর অছিলায় দোকান খোলেন সৌমিত্র। আগে থেকেই দোকান খোলার সময় জানতেন মনোজ এবং তাঁর সঙ্গী বুড়ো, রিন্টু, গোপুরা। তাঁরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে মদ কেনা শুরু করতেই বিপত্তি বাধে।

মনোজ ঘোষের গাড়ির বুটস্পেসে মদের বোতল। —নিজস্ব চিত্র।

মনোহরপুকুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছে, শাসক দলের অন্য একটি গোষ্ঠীও খবর পেয়ে যায় যে, সৌমিত্রবাবুর দোকান থেকে মদ দেওয়া হচ্ছে মনোজদের। তা শুনে তাঁরাও ওই দোকানে চলে যান মদ কিনতে। কিন্তু পুলিশের ভয়ে মদ দিতে অস্বীকার করেন সৌমিত্রবাবু। আর তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় গন্ডগোল। যে গোষ্ঠী মদ পায়নি, তারা মনোজদের গাড়ি আটকে মদ নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, একটি গাড়ি মদ নিয়ে চলে যেতে পারলেও, মনোজের গাড়ি তাড়া করেন মদের খোঁজে আসা অন্য যুবকরা। মনোজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখি মদের দোকান খোলা। আমি ৩০ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে মদ কিনি। তখন কিছু ছেলে আমাকে বাইক নিয়ে তাড়া করা শুরু করে।” মনোজের দাবি, তাঁর গাড়ি থেকে কয়েক বোতল মদ লুঠ করেছে ওই যুবকরা। মনোজ জানিয়েছেন, তাঁকে যুবকদের হাত থেকে বাঁচায় টালিগঞ্জ থানার পুলিশ।

আরও পড়ুন: মাস্কের জোরেই নতুন বছরে ফেরার লড়াই ওঁদেরও

মনোহর পুকুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, যে যুবকরা মদ পাননি এর পর তাঁরা ওই মেয়র পারিষদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, মেয়র পারিষদের প্রভাব কাজে লাগিয়েই তাঁর ঘনিষ্ঠরা মদের দোকান খুলিয়ে বেআইনি ভাবে মদ কিনেছেন। অন্যরা মদ পাচ্ছেন না। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও ওই মেয়র পারিষদের দাবি, ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন, তবে এতে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, লকডাউনে নিয়ে যখন এত কড়াকড়ি, তখন পুলিশের নজর এড়িয়ে কী ভাবে সৌমিত্র মদের দোকান খুললেন? এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব) দেবস্মিতা দাসের যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। মদের দোকানের মালিক সৌমিত্র সাহা বলেন, ‘‘পয়লা বৈশাখে পুজো দেওয়ার জন্য আমি দোকান খুলেছিলাম। আমার দোকান থেকে মদ বিক্রি হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।” তবে পুলিশ সূত্রে খবর, মদের দোকান খোলা হয়েছিল এবং সেখান থেকে মদ বিক্রি হয়েছিল। তবে সেই সঙ্গে পুলিশ এটাও স্বীকার করেছে, এখনও সেই মদের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে লকডাউন ভেঙে মদ বিক্রি করার জন্য কোনও মামলা রুজু করা হয়নি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Wine Tollygunj Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE