Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
black market

নির্দেশ অমান্য করে শহরে দেদার কালোবাজারি

কেন এত চড়া দামে জিনিস বিক্রি করা হচ্ছে?

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৫:৩৫
Share: Save:

লকডাউন চলায় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এমনিতেই অপ্রতুল।তার উপরে ক্রেতাদের একটা বড় অংশের মধ্যে সেই সব জিনিসপত্র কিনে রাখার হিড়িক পড়েছে। এই আবহে যাতে তাঁদের থেকে বেশি দাম না-নেওয়া হয়, তা নিয়ে দোকানদারদের বারবার সতর্ক করছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরো বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে আনাজপত্র, এমনকি ডিমও। রেশনে মেলা কম দামের জিনিস ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে, এমন চিত্রও দেখা গিয়েছে শহরতলির কোনও কোনও বাজারে।

পাইকারি বাজারে যেখানে জ্যোতি আলুর দাম ১৭ টাকার একটু বেশি, পেঁয়াজ ২০ টাকা, সেখানে খুচরো বাজারে এবং পাড়ার দোকানে জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি ২৫-২৬ টাকায়। চন্দ্রমুখী আলুর দাম এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-৩২ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা। এক জোড়া ডিম বিকোচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়। বেগুন, পটল, উচ্ছে, ঢেঁড়শের দামও ঘোরাফেরা করছে ৬০-৭০ টাকার মধ্যে।

যেমন, শুক্রবার সকালে পুলিশের কাছে খবর গিয়েছিল, দমদমের কদমতলা বাজারে একটি মুদির দোকানে চড়া দামে জিনিসপত্র বিক্রি করা হচ্ছে। খবর পেয়ে সেখানে যান স্থানীয় তৃণমূল প্রতিনিধি। দেখা যায়, ১৫ টাকার মুড়ির প্যাকেট বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ টাকায়। ক্রেতারা আরও অভিযোগ করেন, এক ঘণ্টা পরপর ওই দোকানে জিনিসের দাম বাড়ানো হচ্ছে পাঁচ টাকা করে। অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি টাকা ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তৃণমূল প্রতিনিধি। দোকানদারকেও সতর্ক করা হয়।

শুধু দমদমই নয়, বিমানবন্দর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, দেগঙ্গা, দত্তপুকুরের মতো বিভিন্ন এলাকার বাজারে এ দিন খাদ্যদ্রব্য ও আনাজের দাম বেশি নেওয়া হয়েছে অভিযোগ পেয়ে এনফোর্সমেন্ট শাখা, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে দোকানিদের সতর্ক করেন।

বারাসতের মতো কিছু জায়গায় এ-ও দেখা গিয়েছে, রেশনে মেলা কম দামের চাল বেশি দামে বিক্রি করছেন দোকানদারেরা। পুলিশ জানিয়েছে, এমন কয়েক জন কালোবাজারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি, এ দিন বামনগাছি ও দত্তপুকুর এলাকায় স্থানীয় যুবকদের চক দিয়ে গোল করে বাজারে ও মুদির দোকানগুলিতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ রক্ষা করতেও দেখা গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কাঁচামাল ও আনাজের জোগান মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও কিছু কিছু দোকানে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু জায়গা থেকে কালোবাজারির অভিযোগ পেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দোকানদারকে সতর্ক করেছি। ভবিষ্যতে এমন করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কেন এত চড়া দামে জিনিস বিক্রি করা হচ্ছে? দমদম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি লক্ষ্মণ সেন বলেন, ‘‘আগে খুচরো ব্যবসায়ীরা সরাসরি কোলে মার্কেট থেকে জিনিস কিনে আনতেন। এখন সেই জিনিসই দু’-তিন হাত ঘুরে আসছে। ফলে বাড়ছে দাম। অন্য দিকে, পোলট্রির গাড়িগুলিকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। যেটুকু ডিম-মাংস আসছে, তা বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।’’

এ দিন হাওড়ার বিভিন্ন বাজারের সামনেও ঘুরে বেড়িয়েছে পুলিশের গাড়ি। ঠিক দাম নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। মধ্য হাওড়ার কালীবাবুর বাজারে রীতিমতো মাইক বেঁধে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে রাজ্য সরকারের সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়। নিয়ম মেনে যাতে দোকান খোলা ও বন্ধ করা হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয় ব্যবসায়ীদের। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান যাতে ঠিক থাকে, তা দেখতে এ দিন বালি ঘোষপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনও দমকলকে দিয়ে হাওড়ার বাজারগুলি জীবাণুমুক্ত করার কাজ করে পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Lockdown Black Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE