Advertisement
E-Paper

রিকশা চালিয়ে ঝড়খালি পৌঁছতে মরিয়া 

পরিচয়পত্র প্রথমে সঙ্গে ছিল না তাপসের। তাই প্রথম বার থানায় গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৬:৪৬
ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

ধুলোমাখা মুখ। উৎকণ্ঠা আর ক্লান্তিতে বুজে আসছে চোখ। রবিবার সকাল থেকে ছুটে বেড়িয়েও সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘লকডাউন পাস’ হাতে পাননি যুবক। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঝড়খালির গ্রামের বাড়িতে ফেরার জন্য এই পাসের উপরেই ভরসা করছেন পেশায় রিকশাচালক তাপস দাস (নাম পরিবর্তিত)।

পরিচয়পত্র প্রথমে সঙ্গে ছিল না তাপসের। তাই প্রথম বার থানায় গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। দ্বিতীয় বারে কাজ খানিকটা এগোলেও নিজের ছবি তোলাতে ফের হিমশিম খাওয়ার দশা। যানবাহনহীন রাস্তায় শুধু ছবি তোলানোর জন্যই পাঁচ-সাত কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেন ফিরতে চাইছেন তিনি? তাপস বলছেন, ‘‘কাজ নেই। খাওয়াদাওয়া নেই। তাই বাড়ি চলে যাব। বৌকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাব। রাস্তায় যাতে পুলিশ না ধরে, তার জন্য একটা কাগজ সঙ্গে রাখতে চাই।’’ রিকশা চালিয়েই কলকাতা শহরে সংসার চালান তাপস। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই রিকশাই পথে নামছে না গত এক সপ্তাহ ধরে। তাই ভিটেমাটিতে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া কী ভাবে সম্ভব? যুবক হেসে বলছেন, ‘‘বৌকে বসিয়ে এই রিকশা চালিয়েই চলে যাব।’’

সল্টলেক এলাকায় নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন একাধিক জেলার মানুষ। কিন্তু লকডাউনের জেরে আপাতত সেই সব কাজকর্ম বন্ধ। হাতে থাকা টাকাও ক্রমশ শেষের পথে। এ ছাড়াও রয়েছে বাড়ির লোকের চিন্তা। ফলে বাড়ি ফেরার জন্য লকডাউন পাস চেয়ে থানা এবং জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তাপসের মতো অনেকেই।

যেমন, বীরভূমের মুরারই থেকে আসা এমনই কয়েক জন রাজমিস্ত্রি। বাড়ি ফেরার জন্য লকডাউন পাস তৈরি করে আপাতত বাসের খোঁজে রয়েছেন। কোনও রকমে তারাপীঠের মন্দির পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে পরের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘এই ক’দিন তো শহরে রয়েছি। কিন্তু এখানে খাব কী, তা নিয়েই দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’’ শহরে জামাকাপড় কাচা আর ইস্ত্রি করে পেট চালাচ্ছিলেন বিহারের যুবক। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে কাজ ক্রমশ কমেছে। ফলে বাধ্য হয়ে বিহারের বাড়িতেই ফিরে গিয়েছেন তিনি। ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার ওসি বজলুর রহমান খান বলছেন, ‘‘সেক্টর ফাইভের অফিসপাড়া একেবারে বন্ধ। তাই ভবঘুরেদের জন্য কিছু ব্যবস্থা থানাকে করতে হয়েছে।’’

তবে এ ভাবে বাড়ি ফেরার চেষ্টা না করার পরামর্শই দিচ্ছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনে একসঙ্গে সকলে বাড়ি যাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লে সমস্যা হবে। বরং যে যেখানে আছেন, সেখানে অসুবিধা হলে প্রশাসন নিশ্চয়ই তা দেখবে। আমাদের দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা সর্বত্র সেই সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’

Rickshaw Puller West Bengal Lockdown Jharkhali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy