প্রহরা: লকডাউনের মধ্যেও কাজে বিরতি নেই নিরাপত্তারক্ষীদের। কৈখালির একটি আবাসনে। নিজস্ব চিত্র
কেউ অভুক্ত পেটে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ ফিরেছেন আনাজ বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বোঝাই ভাড়ার গাড়িতে চেপে। অনেকে আবার লকডাউনের মধ্যেই দিনের পর দিন ডিউটি করে চলেছেন। থাকছেন ঘুপচি একটি ঘরে। যাঁরা বাড়ি ফিরেছেন, কী ভাবে তাঁরা আবার কাজের জায়গায় ফিরবেন, সেই চিন্তাও ঘিরে ধরেছে অনেককে। কারণ, সময় মতো কাজের জায়গায় ফিরতে না-পারলে কাজ হারানোর ভয়ও রয়েছে।
ওঁরা সবাই বেসরকারি সংস্থার অধীনে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষী। কাজ করেন শহরের বিভিন্ন এটিএম, শপিং মল বা আবাসনে। ওঁদের সিংহভাগ অংশেরই কর্মস্থল বাড়ি থেকে অনেক দূরে। সারা দিন কাজের ফাঁকে খাওয়া সারেন রাস্তার ধারের ছোটখাটো হোটেলে। লকডাউন শুরুর পরে সেই হোটেলগুলি এখন বন্ধ। বন্ধ ট্রেন, বাসও। তাই বাড়ি ফিরতে পারছেন না তাঁরা। অনেকেই লকডাউনের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করছেন আধপেটা খেয়ে।
শিয়ালদহের কাছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন বছর পঞ্চান্নর মহম্মদ কালাম। তিনি বললেন, ‘‘বেতন এতই কম যে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। আর এই পরিস্থিতিতে গাড়িও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে শিয়ালদহ থেকে মধ্যমগ্রামের বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে এসেছি।’’ এতটা পথ হেঁটে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই প্রৌঢ়। বাড়ি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘লকডাউন চলায় কাজের জায়গার সব হোটেল বন্ধ। খাব কোথায়? প্রায়ই অভুক্ত থাকতে হত। বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে এসেছি।’’ এন্টালির একটি এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী মইপাল মালিক লকডাউনের পরে টানা চার দিন কাজ করেছেন। শেষে তিনি তারকেশ্বরের বাড়িতে ফিরেছেন আনাজ বোঝাই একটি গাড়ি ভাড়া করে।
আরও পড়ুন: বন্দর এলাকার থানার ওসি করোনা-আক্রান্ত, গোটা থানাকেই যেতে হতে পারে কোয়রান্টিনে?
শুধু এটিএমের রক্ষীরাই নন, বিভিন্ন আবাসনের রক্ষীদেরও প্রায় একই অবস্থা। ভিআইপি রোডের কৈখালি এলাকার একটি আবাসনের রক্ষী বিজয়কুমার দাস বলেন, ‘‘আমি থাকি সোদপুরে। লকডাউনের মধ্যে বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছি। আবার কাজের জায়গায় ফিরেছি ৪০০ টাকা দিয়ে ই-রিকশা ভাড়া করে।’’ প্রায় একই অবস্থা ওই আবাসনের অন্য দুই রক্ষী ছোটুপ্রসাদ যাদব এবং রাহুল আমিন বিশ্বাসের। তাঁরা জানালেন, রাস্তার ধারে একটি পাইস হোটেলে দুপুরের খাওয়া সারতেন। সেই হোটেল এখন বন্ধ। কোনও রকমে পেট চালাচ্ছেন তাঁরা। বেহালার একটি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা জানাচ্ছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়ির লোকের জন্য তাঁদের দুশ্চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু গাড়ি না-থাকায় ফিরতেও পারছেন না।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে এগরাই মডেল, আরও বেশি কোয়রান্টিনে জোর মুখ্যমন্ত্রীর
যে বেসরকারি সংস্থাগুলি এই রক্ষীদের নিয়োগ করে, তেমনই একটি সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অপারেশন্স) সাগর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শহর জুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ করছেন, তাঁদের জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী হিসেবে গণ্য করলে ভাল হয়। অনেক সময়ে পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখালেও কাজ হচ্ছে না।’’ অন্য একটি নিরাপত্তা সংস্থার এক আধিকারিক জানালেন, রক্ষীরা গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি চলে যেতে পারেন। পরে বিল দেখালে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের বক্তব্য, গাড়ি ভাড়া করার মতো টাকা তাঁদের কাছে অনেক সময়েই থাকে না। আর এই পরিস্থিতিতে গাড়িও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy