Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
rpf

ট্রেন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘নামিয়ে দিল’ রেলপুলিশ

হাসপাতালে না পৌঁছলে কর্মীর অভাবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই রেডিয়েশন পাবেন না।

প্রতীকী চিত্র। ছবি: এপি।

প্রতীকী চিত্র। ছবি: এপি।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

কাজে না গেলে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের ফিরে যেতে হবে। তাই তিন বছরের শিশুকে ঘরে রেখেই হাসপাতালে পৌঁছতে চেয়েছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের কর্মী। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সিসিইউ কর্মী, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স— সকলেই পরিষেবা দিতে শুক্রবার রেলকর্মীদের জন্য বরাদ্দ ট্রেনে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু করোনা-আতঙ্কে ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল রেলপুলিশের বিরুদ্ধে।

কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা আর জি করের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের কর্মী অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ব্যারাকপুরের একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে সকালে একবার মাত্র গাড়ি দেওয়া হয়। রেলকর্মীদের জন্য বিশেষ ট্রেন দেওয়া হয়েছে জানতে পেরেছিলেন তিনি। হাসপাতালে না পৌঁছলে কর্মীর অভাবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই রেডিয়েশন পাবেন না। লকডাউনের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসা না পেয়ে তাঁদের ফিরে যাওয়া কাম্য নয়। তাই কাঁচরাপাড়া স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে রেলকর্মীদের বরাদ্দ ট্রেনে ওঠেন অন্নপূর্ণা। এনআরএসের সিস্টার রিনা মজুমদার, আইডি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান-সহ মোট পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মী একই ভাবে নৈহাটি স্টেশন থেকে চার কামরার ট্রেনে ওঠেন।

রিনা জানান, কাঁচরাপাড়া পেরোনোর কিছু ক্ষণ পরে কামরায় হাজির রেলকর্মীদের একাংশ তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানান। কোন রোগীদের কথা ভেবে তাঁরা হাসপাতালে যেতে বদ্ধপরিকর তা রেলের কর্মীদের জানান স্বাস্থ্যকর্মীরা। রিনার কথায়, ‘‘ব্যারাকপুর পর্যন্ত গাড়ি আসছে, তা-ও সকালের দিকে। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছব কী ভাবে! স্টেশন মাস্টার বলেছিলেন, হাসপাতালের কার্ড দেখালে রেলকর্মীরা সহযোগিতা করবেন।’’

বাস্তবে তা হয়নি। ব্যারাকপুর স্টেশনে ঠিক কী ঘটেছে, এ দিন সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো হোয়াটসঅ্যাপে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অন্নপূর্ণাদেবী আরপিএফের কর্মীদের কাতর অনুরোধ করছেন, অন্তত বিধাননগর স্টেশন পর্যন্ত তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হোক। সেখান থেকে হেঁটে হাসপাতাল চলে যেতেও রাজি অন্নপূর্ণাদেবী এবং তাঁর সঙ্গীরা।

কিন্তু আরপিএফ কর্মী ফোন দেখিয়ে বলছেন, উপরতলার নির্দেশের কাছে তাঁরা অসহায়।

অন্নপূর্ণাদেবীর অভিযোগ, ওই ট্রেনে রেলের পদস্থ আধিকারিকদের কয়েক জন ছিলেন। তাঁদের অসহযোগিতা ছিল সব থেকে বেশি। তিনি বলেন, ‘‘করোনা-আতঙ্কে আমরা তো এখন অস্পৃশ্য! সবাই এমন ভান করছেন, যেন আমরা ছুঁলেই করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবে। রোগীরা যে আমাদের জন্য বসে আছেন তা ওঁদের বোঝাতে পারলাম না।’’ রিনা বলেন, ‘‘আজ যা হয়েছে তা ট্রমার মতো। মানুষ এত অমানবিক হতে পারেন ধারণা ছিল না!’’ হাসপাতালে যেতে না পেরে ব্যারাকপুর স্টেশনের বাইরে আসেন পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁদের বাড়ি ফেরার জন্য অবশ্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেয় রেলপুলিশ।

স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বনগাঁ ও বারুইপুর শাখাতেও একই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরিষেবা দিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে কর্মস্থলে যেতে পারেন, তা স্বাস্থ্য ভবনকে নিশ্চিত করতে হবে।

শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলের এক আধিকারিকের দাবি, করোনা আতঙ্কে ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর যুক্তি, ‘‘নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে সে দিন দু’টি স্টেশন থেকে কয়েক জন উঠেছিলেন। পণ্য পরিবহণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে যুক্ত রেলকর্মীদের জন্য চালানো বিশেষ ট্রেনে কারা উঠবেন, তা আগেই নির্দিষ্ট করা থাকে। এমনকি ওই ট্রেনে অন্য রেলকর্মীরাও উঠতে পারেন না। ভিড় এড়াতেই এই সতর্কতা। সেই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য ঘড়ি ধরে ওই ট্রেন চালানোও সম্ভব হচ্ছে না।’’ রেলের ওই কর্তা জানান, এ সব ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেলের কাছে আগাম কর্মীর তালিকা পাঠালে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE