Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তা কোথায়, প্রশ্ন পুলিশের পরিজনেদের

শনিবার পুরভোট চলাকালীন গিরিশ পার্কের সংঘর্ষে সাব ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পুলিশের অন্দরমহলে একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে গিয়েছে। কিছুটা হলেও পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সেই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। নিরাপত্তা নিয়ে একই প্রশ্ন তুলছেন আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের পরিবারগুলিও।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২১
নিজের বাড়িতে জগন্নাথ মণ্ডলের মেয়ে অতসী। ছবি: অরুণ লোধ।

নিজের বাড়িতে জগন্নাথ মণ্ডলের মেয়ে অতসী। ছবি: অরুণ লোধ।

শনিবার পুরভোট চলাকালীন গিরিশ পার্কের সংঘর্ষে সাব ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পুলিশের অন্দরমহলে একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে গিয়েছে। কিছুটা হলেও পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সেই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। নিরাপত্তা নিয়ে একই প্রশ্ন তুলছেন আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের পরিবারগুলিও।

ঠাকুরপুকুরের শ্মশানকালী তলার সঙ্গে সারদাপল্লির দূরত্ব মেরেকেটে তিন কিলোমিটার। ডায়মন্ড হারবার রোডের দুই প্রান্তের এই দুই ঠিকানা এখন বিশেষ একটি কারণে পরস্পরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। প্রথম ঠিকানার বাসিন্দা, শনিবার গিরিশ পার্কে গুলিবিদ্ধ সাব ইন্সপেক্টর জগন্নাথ মণ্ডল। আর দ্বিতীয় ঠিকানায় থাকেন ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত সাব ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরীর পরিবার। দুই বাড়ির বাসিন্দারাই প্রশ্ন তুলছেন, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যাঁদের উপর, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে কে? কবে এ ব্যাপারে সক্রিয় হবে প্রশাসন? আদৌ কি শাস্তি পাবে দোষীরা?

তাপস চৌধুরীর স্ত্রী মিনতি চৌধুরী রবিবার সরাসরিই বলেছেন, ‘‘যা অবস্থা, তাতে পুলিশের নিরাপত্তা না বাড়ালে গোটা রাজ্যটাই দুর্বৃত্তদের অধীনে চলে যাবে। আগামী দিনে কেউ পুলিশের চাকরিতে যোগ দিতে সাহস পাবে না।’’

গিরিশ পার্কের ঘটনায় আহত পুলিশকর্মী জগন্নাথবাবুর অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। রবিবার দুপুরে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। তাঁর পরিজনেরাও এ দিন তাপস চৌধুরী প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। জগন্নাথবাবুর মেয়ে, পুরুলিয়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা অতসীর বক্তব্য, ‘‘তাপস চৌধুরীও কাজপাগল মানুষ ছিলেন শুনেছিলাম। আমার বাবাও ডিউটি ছাড়া কিছুই ভাবতেন না। সেই তিনি ডিউটি করতে গিয়েই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পুলিশের নিরাপত্তা তা হলে কোথায়?’’

এ দিন দুপুরে শ্মশানকালীতলায় জগন্নাথবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, স্ত্রী মহামায়া মণ্ডল সকালেই হাসপাতালে গিয়েছেন। ছেলে দুর্গাপুর আর ই কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্পণও হাসপাতালে। বাড়িতে রয়েছেন শুধু মেয়ে অতসী। রবিবারই পুরুলিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। বললেন, ‘‘বাবার পাঁজর থেকে গুলিটা না বেরোনো পর্যন্ত অন্য কিছুই ভাবতে পারছি না।’’

শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঠাকুরপুকুর থানার দুই আধিকারিক তাঁদের বাড়িতে এসে খবরটি দেন। অতসী জানান, ২০০৭ সালে পুজোর সময় কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁর বাবার ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা হয়। একটি গা়ড়ির ধাক্কায় বাঁ পায়ে গুরুতর চোট পান তিনি। পায়ে ধাতব প্লেট বসাতে হয়। হার্ট ও ফুসফুসেরও ক্ষতি হয়। ইতিমধ্যে জগন্নাথবাবুর দু’বার স্ট্রোক হয়েছে। অতসীর কথায়, ‘‘এত কিছু সহ্য করেও নিজের ডিউটি করে গিয়েছেন বাবা। এখন ওঁর দুঃসময়ে প্রশাসন কী করবে সেটাই দেখার।’’

ডায়মন্ড হারবার রোডের অন্য প্রান্তে ঠাকুরপুকুরের সারদাপল্লিতে তাপস চৌধুরীর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েও শনিবারের ঘটনায় মর্মাহত। তাপসবাবুর স্ত্রী মিনতিদেবীর কথায়, ‘‘গত চার বছরে এ রাজ্যে পুলিশ বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নিচুতলার কর্মীরা। অথচ প্রশাসন তাঁদের সুরক্ষায় কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, নিহত কর্মীদের পরিবার, আহত কর্মীদের কেবল চাকরি বা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় এড়ালে চলবে না। দয়া করে আপনি পুলিশের নিরাপত্তায় জোর দিন।’’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমার স্বামীর খুনের মামলায় চার্জশিট হয়েছে। কবে বিচার শেষ হবে জানি না। অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ছেলে সামস ইকবাল এ বার পুরভোটে প্রার্থীও হয়েছেন। এ থেকে সাধারণ মানুষের কাছে কী বার্তা পৌঁছচ্ছে?’’

জখম পুলিশকর্মী স্থিতিশীল
নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা পুরভোটের দিন, শনিবার গিরিশ পার্কে দু’টি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সাব-ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডলের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। রবিবার দুপুরে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জগন্নাথবাবুর ডান দিকের পাঁজর থেকে গুলিটি বার করা গিয়েছে। রক্তক্ষরণও বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর ফুসফুসের কোনও ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি চিকিৎসকেরা আরও জানান, স্থিতিশীল হলেও ওই পুলিশকর্মী পুরোপুরি বিপন্মুক্ত নন। তাঁর ক্ষত সারতে অনেকটাই সময় লাগবে।

police Municipal election Girish park Mamata Bandopadhyay Trinamool Tmc Mohammed Iqbal Mehebub Kader Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy