Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Lalbazar

গুরু পাপে লঘু দণ্ড কেন? অভিযোগ লালবাজারে

—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৭:১০
Share: Save:

রাজ্য জুড়ে চলছে কড়া বিধিনিষেধ। তারই মধ্যে এ বার অভিযোগ উঠল কর্তব্যরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। শহরের রাত-পথে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি বিদেশি গাড়ির এক আইনজীবীর গাড়িতে ধাক্কা মারার ঘটনায় তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ কমিশনারের দফতরে নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে। যার প্রেক্ষিতে তদন্ত করছে লালবাজার।

ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায়। আলিপুর আদালতের আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে চেতলার বাড়িতে ফিরছিলেন। তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি বিদেশি গাড়ি ক্যাথিড্রাল ও কুইন্স ওয়ে রোডের সংযোগস্থলে সজোরে তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। ধাক্কার অভিঘাতে আইনজীবীর গাড়িটি তিন বার উল্টে যায়। সিট বেল্ট আটকানো অবস্থায় ভিতর থেকে প্রশান্তবাবু চিৎকার করতে থাকেন। স্থানীয় মানুষ ও ট্র্যাফিক পুলিশ জানলার কাচ ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএমে নিয়ে যান। তাঁর মাথা ও হাতের চোট গুরুতর বলে জানা গিয়েছে।

আইনজীবীর অভিযোগ, ওই গাড়িটি সিগন্যাল ভেঙে তীব্র গতিতে ছুটে এসে তাঁর গাড়িকে ধাক্কা মারে। সিসি ক্যামেরায় যার ছবিও উঠেছে। ধাক্কা মারার পরে ওই গাড়িটির এয়ারব্যাগ অকেজো হয়ে যাওয়ায় সেটি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে যায়। হাসপাতাল থেকেই তিনি হেস্টিংস থানায় ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেন। অথচ লঘু ধারা প্রয়োগ করে ওই চালককে থানা থেকে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।

আইনজীবীর বক্তব্য, রাজ্য জুড়ে কড়া বিধিনিষেধ চলছে। তবুও আইনের উপযুক্ত ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। গাড়ির গতিবেগ জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়নি। এমনকি, চালক সুস্থ না মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তা জানতেও শারীরিক পরীক্ষা হয়নি। পাশাপাশি ওই গাড়িটি পুলিশই ক্রেন দিয়ে তুলে গ্যারাজে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রশান্তবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, তদন্তকারী অফিসার কী ভাবে প্রভাবিত হয়ে এই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

গত কয়েক বছরে শহরে বিদেশি গাড়ির ধাক্কায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বছর পাঁচেক আগে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে এক যুবক ভোরের রেড রোডে সেনাবাহিনীর এক অফিসারকে ধাক্কা মারলে মৃত্যু হয় তাঁর। ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল পাশের আসনে থাকা তাঁর বান্ধবীর। বছর দু’য়েক আগে সেই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়েই শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকায় তিন পথচারীকে পিষে দেয় একটি বিদেশি গাড়ি। প্রতি ক্ষেত্রেই দীর্ঘ মামলা চলেছে। প্রশান্তবাবুর বক্তব্য, মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় জামিনযোগ্য কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করে চালককে থানা থেকে তড়িঘড়ি জামিন দেওয়া হয়েছে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র জানান, বিষয়টি যুগ্ম কমিশনারের (অপরাধ, হেড কোয়ার্টার্স) অধীনে রয়েছে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন সিপি। আর যুগ্ম কমিশনার শুভঙ্কর সিংহরায় বলছেন, “ওই ঘটনায় তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

প্রশান্তবাবুর দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্ত এবং দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটিকে ক্রেন দিয়ে গ্যারাজে নিয়ে যাওয়ার ছবি সিসি ক্যামেরায় ধরা রয়েছে। সে সব এবং এফআইআর-এর কপি দেখলেই তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকা স্পষ্ট হবে। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কমিশনারকে অভিযোগ জানিয়েছি। পরবর্তীতে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে আদালতে নথি-সহ মামলা দায়ের করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lalbazar Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE