Advertisement
০৫ মে ২০২৪
gumghar lane

খাস ধর্মতলায় ২০০ বছর ধরে রহস্য আর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে রয়ে গিয়েছে এই ‘গুমঘর লেন’

কিন্তু কেন এই পথের নাম গুমঘর? এর সঙ্গে কি জড়িয়ে আছে কোনও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস? নাকি, এখানে ছিল কোনও প্রাচীন জমিদারবাড়ি? অদ্ভুত নামকরণের ইতিহাস জানতে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৫৮
Share: Save:
০১ ১২
‘গুমঘর’ শুনলেই চোখের সামনে এক লহমায় এসে দাঁড়ায় গা ছমছম করা ইতিহাস আর রোমাঞ্চ। জমিদারবাড়ির প্রাচীনত্বের মাহাত্ম্য বেড়ে যায় তাদের গুমঘরের জন্য। কিন্তু জানেন কি, খাস কলকাতায় একটি রাস্তার নাম গুমঘর লেন!

‘গুমঘর’ শুনলেই চোখের সামনে এক লহমায় এসে দাঁড়ায় গা ছমছম করা ইতিহাস আর রোমাঞ্চ। জমিদারবাড়ির প্রাচীনত্বের মাহাত্ম্য বেড়ে যায় তাদের গুমঘরের জন্য। কিন্তু জানেন কি, খাস কলকাতায় একটি রাস্তার নাম গুমঘর লেন!

০২ ১২
শহরের প্রাণকেন্দ্র মধ্য কলকাতার চাঁদনি চকের এক প্রান্তে রয়েছে এই গলি। সাবির রেস্তোরাঁর উল্টোদিকের এই গলি গিয়ে পড়েছে টেম্পল স্ট্রিটে। ছোট্ট অপরিসর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক পুরনো বাড়ি। সেগুলির বেশির ভাগই ভগ্নদশা।

শহরের প্রাণকেন্দ্র মধ্য কলকাতার চাঁদনি চকের এক প্রান্তে রয়েছে এই গলি। সাবির রেস্তোরাঁর উল্টোদিকের এই গলি গিয়ে পড়েছে টেম্পল স্ট্রিটে। ছোট্ট অপরিসর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক পুরনো বাড়ি। সেগুলির বেশির ভাগই ভগ্নদশা।

০৩ ১২
দিনের বেলা এই গলি গমগম করে অফিসপাড়ার ব্যস্ততায়। পাশাপাশি, চাঁদনির বিখ্যাত বৈদ্যুতিন সামগ্রীর পসরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গলির ইতিউতি। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই গুমঘর লেনকে গ্রাস করে নিস্তব্ধতা।

দিনের বেলা এই গলি গমগম করে অফিসপাড়ার ব্যস্ততায়। পাশাপাশি, চাঁদনির বিখ্যাত বৈদ্যুতিন সামগ্রীর পসরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গলির ইতিউতি। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই গুমঘর লেনকে গ্রাস করে নিস্তব্ধতা।

০৪ ১২
কিন্তু কেন এই পথের নাম গুমঘর? এর সঙ্গে কি জড়িয়ে আছে কোনও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস? নাকি, এখানে ছিল কোনও প্রাচীন জমিদারবাড়ি? অদ্ভুত নামকরণের ইতিহাস জানতে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর।

কিন্তু কেন এই পথের নাম গুমঘর? এর সঙ্গে কি জড়িয়ে আছে কোনও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস? নাকি, এখানে ছিল কোনও প্রাচীন জমিদারবাড়ি? অদ্ভুত নামকরণের ইতিহাস জানতে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর।

০৫ ১২
কলকাতার বেশির ভাগ রাস্তার নাম পাল্টে গিয়েছে। কোনও কোনও পথের তো পরিচিতি একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু সে সব বদলের ছোঁয়া এই রাস্তায় লাগেনি। প্রথম থেকেই এই গলি রয়েছে তার ‘গুমঘর লেন’ নাম নিয়ে। ‘বেঙ্গল আগরা ডিরেক্টরি ১৮৫০’-তেও এই গলির নাম ‘গুমঘর লেন’ দেখানো আছে।

কলকাতার বেশির ভাগ রাস্তার নাম পাল্টে গিয়েছে। কোনও কোনও পথের তো পরিচিতি একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু সে সব বদলের ছোঁয়া এই রাস্তায় লাগেনি। প্রথম থেকেই এই গলি রয়েছে তার ‘গুমঘর লেন’ নাম নিয়ে। ‘বেঙ্গল আগরা ডিরেক্টরি ১৮৫০’-তেও এই গলির নাম ‘গুমঘর লেন’ দেখানো আছে।

০৬ ১২
‘গুমঘর’ নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক হাসপাতাল। ১৭৯২ সালে প্রস্তাব ওঠে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় কর্মীদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে। সেই হাসপাতাল তৈরি হয় কলুটোলা বা আজকের চিৎপুরে। নাম ছিল ‘নেটিভ হসপিটাল’।

‘গুমঘর’ নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক হাসপাতাল। ১৭৯২ সালে প্রস্তাব ওঠে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় কর্মীদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে। সেই হাসপাতাল তৈরি হয় কলুটোলা বা আজকের চিৎপুরে। নাম ছিল ‘নেটিভ হসপিটাল’।

০৭ ১২
কিন্তু সেই ঠিকানায় বেশিদিন থাকেনি হাসপাতাল। খোলামেলা বাড়িতে হাসপাতালটিকে স্থানান্তরিত করার উদ্দেশ্যে ঠিকানা বদল হয়। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে এটি উঠে আসে ধর্মতলায়। যে বাড়িতে নেটিভ হাসপাতাল ছিল, তার উত্তর দিকে ছিল গুমঘর লেন।

কিন্তু সেই ঠিকানায় বেশিদিন থাকেনি হাসপাতাল। খোলামেলা বাড়িতে হাসপাতালটিকে স্থানান্তরিত করার উদ্দেশ্যে ঠিকানা বদল হয়। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে এটি উঠে আসে ধর্মতলায়। যে বাড়িতে নেটিভ হাসপাতাল ছিল, তার উত্তর দিকে ছিল গুমঘর লেন।

০৮ ১২
হাসপাতাল লাগোয়া ওই রাস্তায় একটি বাড়িতে ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের রাখা হত। সেই নির্দিষ্ট বাড়ি থেকেই রাস্তার নাম হয়ে গেল গুমঘর লেন।

হাসপাতাল লাগোয়া ওই রাস্তায় একটি বাড়িতে ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের রাখা হত। সেই নির্দিষ্ট বাড়ি থেকেই রাস্তার নাম হয়ে গেল গুমঘর লেন।

০৯ ১২
দীর্ঘ ৭৮ বছর ধর্মতলার ওই ঠিকানায় ছিল নেটিভ হসপিটাল। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে সেটির নাম পাল্টে যায়। নতুন নাম হয় ‘মেয়ো নেটিভ হসপিটাল’। বদলে যায় ঠিকানাও। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে হাসপাতাল চলে আসে স্ট্র্র্যান্ড রোডে। তারপর কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় নেটিভদের চিকিৎসার জন্য তৈরি এই হাসপাতাল।  (প্রতীকী চিত্র)

দীর্ঘ ৭৮ বছর ধর্মতলার ওই ঠিকানায় ছিল নেটিভ হসপিটাল। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে সেটির নাম পাল্টে যায়। নতুন নাম হয় ‘মেয়ো নেটিভ হসপিটাল’। বদলে যায় ঠিকানাও। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে হাসপাতাল চলে আসে স্ট্র্র্যান্ড রোডে। তারপর কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় নেটিভদের চিকিৎসার জন্য তৈরি এই হাসপাতাল। (প্রতীকী চিত্র)

১০ ১২
হাসপাতাল এবং ছোঁয়াচে রোগীরা স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও রাস্তার পরিচয়ে থেকে যায় ‘গুমঘর’ নামটি। কিন্তু কোন বাড়িতে ছিল সেই গুমঘর, তার অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি।

হাসপাতাল এবং ছোঁয়াচে রোগীরা স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও রাস্তার পরিচয়ে থেকে যায় ‘গুমঘর’ নামটি। কিন্তু কোন বাড়িতে ছিল সেই গুমঘর, তার অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি।

১১ ১২
স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তাটিকে ‘বকরি লেন’ বলেও জানেন। কয়েক বছর আগে সেখানে বেশ কিছু পরিবার ছাগল পালন করত। কিন্তু পরে সে ব্যবসাও উঠে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তাটিকে ‘বকরি লেন’ বলেও জানেন। কয়েক বছর আগে সেখানে বেশ কিছু পরিবার ছাগল পালন করত। কিন্তু পরে সে ব্যবসাও উঠে যায়।

১২ ১২
মাত্র ৩০০ মিটার লম্বা এই ঘিঞ্জি গলি আজ শুধুই মধ্য কলকাতার একটি অংশ। একুশ শতকের দিনভর ব্যস্ততার মাঝে গুম হয়ে গিয়েছে দু’শো বছরেরও প্রাচীন রোগীদের যন্ত্রণা আর বাঁচার আর্তি।   
(ঋণস্বীকার: ১.এ হিস্ট্রি অব ক্যালকাটাজ স্ট্রিটস: পি থঙ্কপ্পন নায়ার, ২. টেন ওয়াকস ইন ক্যালকাটা: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, ৩. এ জে ওয়াকার্স গাইড টু ক্যালকাটা: সৌমিত্র দাস)
(ছবি: গোপী দে সরকার, আর্কাইভ, শাটারস্টক এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

মাত্র ৩০০ মিটার লম্বা এই ঘিঞ্জি গলি আজ শুধুই মধ্য কলকাতার একটি অংশ। একুশ শতকের দিনভর ব্যস্ততার মাঝে গুম হয়ে গিয়েছে দু’শো বছরেরও প্রাচীন রোগীদের যন্ত্রণা আর বাঁচার আর্তি। (ঋণস্বীকার: ১.এ হিস্ট্রি অব ক্যালকাটাজ স্ট্রিটস: পি থঙ্কপ্পন নায়ার, ২. টেন ওয়াকস ইন ক্যালকাটা: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, ৩. এ জে ওয়াকার্স গাইড টু ক্যালকাটা: সৌমিত্র দাস) (ছবি: গোপী দে সরকার, আর্কাইভ, শাটারস্টক এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE