বৃহস্পতিবার রাত তিনটে। শহর পরিদর্শন করে নিজের অফিসে ফিরছিলেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক-দক্ষিণ)। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ঢাকা কালীবাড়ির কাছে আচমকাই তাঁর গাড়ির সামনে এসে পড়ল একটি বেপরোয়া মোটরবাইক। গাড়ির চালক কোনওক্রমে দুর্ঘটনা এড়িয়ে গেলেন।
এখানেই শেষ নয়। হেলমেটহীন দুই বাইক আরোহী চালকের উপরে হম্বিতম্বি শুরু করলেন। তা দেখে গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের পাকড়াও করলেন ওই পুলিশকর্তা। দেখা গেল, তাঁদের কাছে কোনও বৈধ নথিই নেই। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অটোর লাইসেন্স নিয়ে বাইক চালাচ্ছেন তাঁরা। পরে ঘটনাস্থলে এসে বাইকের চালককে গ্রেফতার করে লেক থানার পুলিশ। ধৃতের নাম সাজিদ খান। ওই এলাকাতেই বাড়ি।
এই ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে বালিগঞ্জ থানা এলাকার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে বেপরোয়া এক বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে বাতিস্তম্ভে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা চালককে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম অসীম চক্রবর্তী (২৬)। বাড়ি তিলজলা থানা এলাকায়। অপর দুই আরোহী আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাইপাসের এক হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই তিন জন পুজো দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।
কলকাতাবাসীর অভিযোগ, পুজোয় বেপরোয়া বাইকের দাপট চলছে শহর জুড়ে। তবু পুলিশ নির্বিকার। পুলিশের সামনে দিয়েই হেলমেট না পরে বাইক চালিয়ে চলে যাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে খুব কম ক্ষেত্রেই।
পুলিশের একাংশের দাবি, অন্যান্য বার ষষ্ঠীর পর থেকেই লালবাজারের তরফে বেপরোয়া বাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইমতো অভিযানও হয়। কিন্তু এ বার শহরের কোথাও তেমন অভিযান হয়নি। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে লালবাজারের তরফে মৌখিক ভাবে বাইক বাজেয়াপ্ত করতে বারণই করা হয়েছিল। ফলে রাস্তায় পুজোর ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীরা বেপরোয়া বাইক দেখলেও ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
কিছু দিন আগে লালবাজার থেকে বলা হয়েছিল, এ বার পুজোর দিনগুলিতে হেলমেটহীন বাইক আরোহী দেখলেই সেই বাইক বাজেয়াপ্ত করা হবে। তা ছাড়া, কোনও বাইকে দু’জনের বেশি সওয়ার হলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।
লালবাজার অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। পুলিশকর্তাদের দাবি, প্রতি বারের মতো এ বারও পুজো বলে বেপরোয়া বাইককে ছাড় দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল, পুজোর দিন কেউ যেন অপদস্থ না হন। শুধু যাদবপুর ট্র্যাফিক গার্ড এলাকাতেই নথি দেখাতে না পারায় ২৫টি বাইককে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।