ভেঙে পড়া বারান্দার অংশ। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে ঢুকে সবে স্নানে গিয়েছি। তখনই বিকট আওয়াজ কানে এল। তার পরেই সমস্বরে আর্তনাদ। কোনও রকমে বেরিয়ে দেখি, তেতলা বাড়ির বারান্দার পুরোটাই সিঁড়ি-সহ উপর থেকে ভেঙে পড়েছে। মিনিট দশেক আগে ওই সিঁড়ি দিয়েই দোতলায় উঠে এসেছি। একটু সময়ের হেরফের হলেই যে কী হত, ভাবতে শিউরে উঠলাম।
মিনিট তিনেকের মধ্যে বিকট আওয়াজের সঙ্গেই দু’বার পর পর ধস। বাড়ির সবাই তখন আর্তনাদ শুরু করে দিয়েছেন। ভেসে আসছে কান্নাকাটি। মনে হচ্ছিল, যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, এই বুঝি সেটাও ভেঙে পড়ল। মাথা ঠান্ডা রেখে চটজলদি ১০০ ডায়ালে ফোন করি। মিনিট দশেকের মধ্যে পুলিশ, দমকল হাজির। ওঁরা যে কতটা সহায়, বুধবার রাতে তা হাড়ে হাড়ে বুঝলাম। মই দিয়ে দোতলায় উঠে দমকলকর্মীরা একে একে উদ্ধার করেন সবাইকে। আটকে পড়া বয়স্কদের নিয়েই চিন্তা ছিল। যেমন, আমার মা। তাঁর অসহ্য হাঁটুর ব্যথা। দমকলকর্মীরা যখন সবাইকে নামাচ্ছিলেন, সেই দৃশ্য দেখে মা সোজা ঘরে লুকিয়ে পড়লেন। ক্রমাগত বলতে থাকেন, আমার হাঁটুতে ব্যথা। আমি ওই মই বেয়ে নামতে পারব না। তখন দমকল, পুলিশের আধিকারিকেরা এসে তাঁকে আশ্বস্ত করতে বোঝাতে থাকেন। শেষে মই দিয়ে মাকে ওঁরাই পাঁজাকোলা করে নামান।
৩৩ জন সদস্যকে এক এক করে মই বেয়ে নামাতে তো সময় লাগবেই। কারণ, শিশু এবং বয়স্কদের উদ্ধারে কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা দমকলকর্মীরা। সবাইকে নামাতে তাই রাত তিনটে বেজে যায়। যখন পর পর দু’বার সিঁড়ি-বারান্দায় ধস নামল, তখন আমাদের মনের অবস্থা কী ছিল, সেটা শুধু আমরাই জানি। রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা চলছিল, এই বুঝি গোটা বাড়িটাই ভেঙে পড়ল!
(লেখক ভেঙে পড়া বাড়িটির বাসিন্দা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy