Advertisement
E-Paper

থানা থেকে বার হলেই ছিঁড়ে খাব, উড়ে এল শাসানি

বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই মহিলা এবং তাঁর ছেলের অভিযোগ, বুধবার এমন অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী ওই যুবকের প্রশ্ন, ‘‘এটা কি সভ্য শহর? নাকি ঝান্ডার তলায় থাকলে সব কাজের লাইসেন্স পাওয়া যায়?’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৪
অভিযুক্ত অটোচালক। ফাইল চিত্র।

অভিযুক্ত অটোচালক। ফাইল চিত্র।

(৭ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা সাতটা)

ভরসন্ধেয় কলকাতার বুকে অটোচালকের হাতে লাঞ্ছনা। তার পর থানার বাইরে ভিড় করা জনতার মুখ থেকে উড়ে আসা শাসানি, ‘মহিলাকে চিনে নাও, বাইরে বেরোলে ছিঁড়ে খাব’। নিছক মুখের কথা নয়। রিকশা করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আক্রমণের মুখে মা-ছেলে প্রাণ নিয়ে পালালেন থানায়। অবশেষে মধ্যরাতে পুলিশের গাড়ি বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে গেল ওঁদের।

বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই মহিলা এবং তাঁর ছেলের অভিযোগ, বুধবার এমন অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী ওই যুবকের প্রশ্ন, ‘‘এটা কি সভ্য শহর? নাকি ঝান্ডার তলায় থাকলে সব কাজের লাইসেন্স পাওয়া যায়?’’

মধ্যবয়স্কা মায়ের হেনস্থা এবং সেই অভিযোগ দায়েরের জের সামলে ওঠা তো দূর, এখন তাঁকে এফআইআর তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ওই যুবকের।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বছর পঞ্চাশের মহিলা ছেলের সঙ্গে জুতো কিনতে বেরিয়েছিলেন। বাঁশদ্রোণীর ঊষা মোড় থেকে গড়িয়া যাওয়ার জন্য অটোয় ওঠেন। বাঁ পায়ে সমস্যা আছে বলে চালকের পাশের আসনে বসেন তিনি। ছেলে বসেন পিছনের আসনে। অটোতে অন্য যাত্রী ছিলেন না।

মহিলার ছেলের বয়ান অনুযায়ী, গড়িয়া মো়ড় আসার আগে অটোর গতি কমতেই প্রায় লাফিয়ে নেমে পড়েন মা। ‘‘কেন এ ভাবে নামলে?’’ জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। মায়ের অভিযোগ, অটোয় ওঠার পর থেকেই চালক তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অশালীন উদ্দেশ্য নিয়ে ধাক্কা দিচ্ছিলেন। ছেলেকে কী ভাবে বলবেন, বুঝতে না পেরে চুপ করে ছিলেন। কিন্তু বেশি ক্ষণ সহ্য করতে পারেননি। তাই লাফিয়ে অটো থেকে নেমে গিয়েছেন।

গড়িয়া মোড়ের ট্র্যাফিক পুলিশকে তখনই অভিযোগ জানান ছেলেটি। নেতাজিনগর থানায় খবর যায়। অভিযুক্ত অটোচালক ইমান আলি খান ওরফে ‘মামা’কে গ্রেফতার করা হয়। লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে থানায় যান মা আর ছেলে। ছেলের বক্তব্য, নেতাজিনগর থানায় অভিযোগ জানানোর সময়েই তিনি জানলা দিয়ে দেখেন, বাইরে শ’দুয়েক মানুষের জমায়েত। ‘ছিঁড়ে খাওয়ার’ হুমকি সেখান থেকেই ভেসে আসে বলে অভিযোগ। রাত এগারোটা নাগাদ পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হলে মা ও ছেলে রিকশা করে বাড়ির দিকে রওনা হন। অভিযোগ, থানা চত্বর পেরোতেই জনা ষাটেক লোক চড়াও হয়। রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে ওঁরা ফের থানায় ঢুকে পড়েন।

আরও পড়ুন: পিছনে ৫ যুবক, ২০ মিনিট ধরে তরুণীর দৌড়

বৃহস্পতিবার ঘটনাটি বর্ণনা করতে গিয়ে মহিলা বলেন, ‘‘ছেলের দিকেও ফিরে তাকানোর সময় পাইনি। রিকশা থেকে নেমে ছুটতে থাকি।’’ শেষে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ থানা থেকে পুলিশ গাড়ি করে তাঁদের পৌঁছে দেয়।

‘মামা’র গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকেই টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটের অটো বন্ধ ছিল। আদালত ধৃতকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। চালকদের একাংশ বলছেন, চল্লিশ বছর ধরে অটো চালাচ্ছেন অভিযুক্ত। কখনও তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ হয়নি। তা হলে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন? কথা বলে না মিটিয়ে মহিলাকে তাড়া করলেন কেন? চালকদের দাবি, তাঁরা কাউকে তাড়া করেননি। ‘মামা’র পাশে দাঁড়াতে থানায় গিয়েছিলেন কেবল।

অথচ বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে বসে মহিলার ছেলে দাবি করেন, এ দিন সকাল থেকে তাঁকে বারবার ফোন করে অভিযোগ তুলে নিতে বলা হচ্ছে। স্থানীয় যুবকেরা বাড়ি এসে চাপ দিয়ে গিয়েছেন। পরিবারটিকে তাড়া করছে ভয়। এ দিন একটু বেলা হতেই বোনের বাড়ি চলে গিয়েছেন ওই মহিলা। মা আর বোনকে নিয়ে অনেক বছরই বাস করছেন এ শহরে। ‘‘এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি’’, বলছেন ওই যুবক। মেয়েদের প্রতি অপরাধে বাড়বাড়ন্তের প্রসঙ্গ উঠলেই রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তোলে শাসক দল। কিন্তু বাস্তব ছবিটা যে কী, এই ঘটনা তা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ।

Molestation Auto Woman Garia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy