Advertisement
E-Paper

ফেসবুকে ভাব হওয়া ‘বন্ধু’র সৌজন্যে ৯০ লাখ টাকা খোয়ালেন কলকাতার মহিলা

ছেলে থাকেন পুণেতে। মেয়েও কর্মসূত্রে গুরুগ্রামে। স্বামী ছিলেন দেশের একটি প্রথম সারির বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ স্থানীয় কর্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ১৫:১০
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

ছেলে থাকেন পুণেতে। মেয়েও কর্মসূত্রে গুরুগ্রামে। স্বামী ছিলেন দেশের একটি প্রথম সারির বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ স্থানীয় কর্তা। কিন্তু, বছর দুয়েক আগে অবসরের কয়েক মাস পরেই তিনি মারা যান। তার পর থেকে গড়িয়াহাটে একটি অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বছর একান্নর বিশাখা চট্টোপাধ্যায় (নাম পরিবর্তিত)।

২০১৭-র এপ্রিলে ফেসবুকে নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বিশাখাদেবী। পরে সেখানেই এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। কিন্তু, সেই আলাপেই যে তাঁর ৯০ লাখ টাকা খোয়া যাবে, তা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি! গত ২৩ মার্চ কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা।

অভিযোগে বিশাখাদেবী জানিয়েছেন, এ বছরের গোড়ার দিকে ফেসবুকে মণীশ কুমার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। মণীশ কুমার নিজেকে ইংল্যাণ্ডের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি একজন পাইলট। ফেসবুক ছেড়ে আলাপচারিতা গড়ায় হোয়াটস্অ্যাপেও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অভিযোগ, সেই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই মণীশ কুমার এক দিন বিশাখাদেবীকে জানান যে, তিনি কিছু প্রসাধন সামগ্রী পার্সেল করে পাঠিয়েছেন উপহার হিসাবে।

আরও পড়ুন: আডবাণী এখনও নীরবই, টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভ কিন্তু গোপন রাখলেন না জোশী

মণীশ ওই মহিলাকে একটি বেসরকারি ভারতীয় ব্যাঙ্কের জয়পুর শাখায় জনৈক সেলিম খানের অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার টাকা জমা করতে বলেন। ওই পার্সেল ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক হিসাবেই ওই টাকা জমা করতে বলা হয়।

পুলিশের কাছে বিশাখাদেবী দাবি করেছেন, গত ৮ মার্চ সেই টাকা জমা করে দেন তিনি। অভিযোগ, এর পরে মণীশ ফের তাঁকে জানান আসলে ওই পার্সেলে প্রসাধন সামগ্রী নয়, আছে প্রায় ৭০ হাজার ডলার মূল্যের গয়না। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪৮ লাখেরও বেশি। মণীশ ওই মহিলাকে জানান, পার্সেলে থাকা গয়নার হদিশ পেয়ে গিয়েছেন শুল্ক দফতরের কর্তারা। তাই স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে ওই পার্সেল ছাড়াতে।

আরও পড়ুন: মোদীর রাজ্যে বেতন চেয়ে চাকরি যায় চৌকিদারের

কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মণীশের কথা বিশ্বাস করে পরবর্তী দু’সপ্তাহে দফায় দফায় সাড়ে ৮৯ লাখ টাকা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ১১টি আলাদা আলাদা ব্যাঙ্কে জমা করেন ওই মহিলা। তার পরেও পার্সেল না আসায় তিনি বুঝতে পারেন যে, প্রতারিত হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারকরা গোটা বিষয়টি আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন এবং ইমেলও করে।

আরও পড়ুন: পাশে কখনও হিটলার, কখনও আইনস্টাইন, ফেসবুকে জোরদার মদন রহস্য

তদন্তে নেমে পুলিশ এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন যেখানে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মিলেছে দু’টি ফোন নম্বর, যে নম্বর থেকে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়।

এর আগে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এক যুবকও ঠিক একই ভাবে ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ‘ব্রিটিশ বান্ধবীর’ ফাঁদে পা দিয়ে ২০ লাখ টাকা খুইয়েছিলেন। সেই মামলার তদন্ত করে কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। তাঁরা দিল্লি থেকে নাইজেরীয় জালিয়াতদের একটি দলকে পাকড়াও করেছিল। কিন্তু প্রতারণার টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। তদন্তকারীদের অভিজ্ঞতা, এ ধরনের প্রতারণার পিছনে থাকে নাইজেরীয় জালিয়াতরা। অ্যাকাউন্টগুলো ভাড়া নেওয়া হয়। টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট অঙ্কে ওই টাকা আবার চলে যায় অন্য অ্যাকাউন্টে। তাই ওই অ্যাকাউন্টের মালিকদের হদিশ পেয়েও খুব একটা লাভ হয় না। তদন্তকারীদের দাবি, প্রতারণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই জালিয়াতরা টাকা নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেয়। তাই টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে যায়।

একই ধরনের পর পর ঘটে যাওয়া কয়েকটি অপরাধের ঘটনা থেকে তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, জালিয়াতরা সোশ্যাল সাইটে ওই মহিলার মতো ‘একাকী’ মানুষদেরই বন্ধুত্বের টোপ দেয়। কারণ দক্ষিণ কলকাতার যে যুবক একই ভাবে প্রতারিত হয়েছিলেন তিনিও বিবাহ বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাই সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল সাইটে নিজের সম্পর্কে বেশি তথ্য না দেওয়াই ভাল এবং মনে রাখা উচিৎ ভার্চুয়াল জগতে ভুয়ো পরিচয়ে প্রোফাইল তৈরি করা কোনও কঠিন বিষয় নয়।

Facebook Crime Police Cheating Tech
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy