মানসিক প্রস্তুতিতে এক তিল খামতি ছিল না। লক্ষ্য ছিল স্থির— আত্মহত্যা।
সেই ‘পাখির চোখে’ চোখ রেখেই দু’-দু’বার নিজের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার চেপেছিলেন লক্ষ্মী বিশ্বাস। কিন্তু যান্ত্রিক বিভ্রাটে গুলি বেরোয়নি। লক্ষ্মী তবু দমেননি। পিস্তলের নল পরিষ্কার করে ফের বুকে ঠেকিয়ে ট্রিগার চাপেন। আর গণ্ডগোল হয়নি। কলকাতা বিমানবন্দরে কর্মরত সিআইএসএফের মহিলা কনস্টেবলের হৃৎপিণ্ড ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে নাইন এমএম বুলেট।
বুধবার রাতের দমবন্ধ করা মুহূর্তগুলো ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। আত্মঘাতী হওয়ার এ হেন নাছোড় চেষ্টা দেখে পুলিশও হতবাক। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্মী প্রথম বার ‘শুট’ করলে নল থেকে গুলি বেরিয়ে সামনে পড়ে যায়। সেটা কুড়িয়ে তিনি প্যান্টের পকেটে রাখেন। পিস্তলের ব্যারেল খুলে সাফ করেন। দ্বিতীয় বারও ব্যর্থ হওয়ায় লক্ষ্মী ফের ধীরে-সুস্থে ব্যারেল মোছামুছি করে বুকে নল ঠেকান। গুলির শব্দে সহকর্মীরা ছুটে এসে যতক্ষণে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান, তত ক্ষণে সব শেষ।
তদন্তকারী সূত্রের খবর: আত্মঘাতী হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে ডিউটির ফাঁকে অসমের বাড়িতে ফোন করেছিলেন লক্ষ্মী। দূর সম্পর্কের এক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। আত্মহত্যা করবেন— এটুকু বলেই দিদি ফোন কেটে দেন বলে ভাইয়ের দাবি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট এলাকার বাসিন্দা এক আত্মীয়কে। তিনি পড়িমরি দৌড়ে বিমানবন্দরে পৌঁছন। তাঁকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। রাত তখন পৌনে বারোটা।
এর পরেই আচমকা গুলির আওয়াজে শোরগোল। দেখা যায়, দোতলায় ‘সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়া’র পাশে যে ছোট ঘরে মহিলা যাত্রীদের দেহ তল্লাশি হয়, সেখানে লক্ষ্মী পড়ে রয়েছেন। চারদিক রক্তে ভাসছে। একটা ‘সুইসাইড নোট’ও মজুত। যেখানে এক বন্ধুকে দায়ী করে গিয়েছেন বছর আঠাশের কনস্টেবল।
বিমানবন্দর-সূত্রে জানা যাচ্ছে, লক্ষ্মী বছর আটেক আগে সিআইএসএফে যোগ দেন। স্বামী সুকান্ত বিশ্বাসও সিআইএসএফের কনস্টেবল। ওঁদের পাঁচ বছরের ছেলে ও চোদ্দো মাসের মেয়ে আছে। দু’মাস হল, লখনউ থেকে তাঁরা বদলি হয়ে কলকাতায় আসেন। সূত্রের ইঙ্গিত, সঞ্জীব দাস নামে এক বন্ধুকে ব্যবসা করার জন্য লক্ষ্মী তিন লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। বারবার চেয়েও ফেরত না-পেয়ে ইদানীং মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন। পুলিশ জানাচ্ছে, সুইসাইড নোটে সঞ্জীবেরই নাম লিখে গিয়েছেন লক্ষ্মী। সঞ্জীব থাকেন বেঙ্গালুরুতে। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সুকান্তের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। বেঙ্গালুরু পুলিশেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ‘‘সঞ্জীবকে জেরা করা হবে। তবে এখানে ডেকে পাঠিয়ে না বেঙ্গালুরু গিয়ে, তা এখনও ঠিক হয়নি। আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজুর ব্যাপারটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’— মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।
সিআইএসএফ সূত্রে খবর, বুধবার রাত ন’টায় লক্ষ্মী ডিউটিতে আসেন। দেহ তল্লাশির জন্য ‘সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়া’ (এসএইচএ)-য় ঢোকার মুখে সাধারণ যাত্রীদের বোর্ডিং পাস পরীক্ষা করছিলেন। এক নম্বর এসএইচএ-তে দাঁড়িয়ে। ‘ডিপার্চার’-এর এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে সোজা গেলে এক নম্বর এসএইচএ। তার আগের চেক-ইন আইল্যান্ডে ভিস্তারা ও স্পাইসজেটের কাউন্টার। বুধবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ কাউন্টারে লোক ছিল না। আশপাশ ছিল একেবারে সুনসান।
মরিয়া লক্ষ্মী সেই সুযোগটাই নেন বলে পুলিশের ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy