Advertisement
২০ মার্চ ২০২৩
Child Birth

মাঝ আকাশে সন্তানের জন্ম দিলেন তাই-তরুণী

ছেলেকে কোলে নিয়ে মোনা মঙ্গলবার জানান, তাঁর মাস্কটবাসী পুরুষ বন্ধু শিশুটির পিতৃত্ব স্বীকার করতে চাননি।

মাতৃত্ব: শহরের এক হাসপাতালে সদ্যোজাতের সঙ্গে মা মোনা ওয়াসানা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

মাতৃত্ব: শহরের এক হাসপাতালে সদ্যোজাতের সঙ্গে মা মোনা ওয়াসানা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:০৫
Share: Save:

মাঝ আকাশে শিশুপুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন এক বছর তেইশের বিমানযাত্রী। তার আগেই অবশ্য নাগপুরের কাছাকাছি আকাশে থাকা ব্যাঙ্ককগামী বিমানটির পাইলট কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করে জরুরি অবতরণের আবেদন জানিয়েছিলেন।

Advertisement

এর পরেই মোনা ওয়াসানা নামের ওই তরুণীকে শিশু-সহ কলকাতা বিমানবন্দরে নামিয়ে ভর্তি করা হয় চার্নক হাসপাতালে। ছেলেকে কোলে নিয়ে মোনা মঙ্গলবার জানান, তাঁর মাস্কটবাসী পুরুষ বন্ধু শিশুটির পিতৃত্ব স্বীকার করতে চাননি। এমনকি আসন্নপ্রসবা মোনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন তিনি। মোনা বলেন, ‘‘এর পরেই বিমানে একা দোহা চলে আসি। অসহ্য যন্ত্রণা চেপে ব্যাঙ্ককের উড়ানে উঠেছিলাম। রাত একটা নাগাদ বিমানসেবিকাকে ডেকে পাঠাই। ওঁরা আমাকে বিমানের পিছনে নিয়ে যান। বিমানে কোনও চিকিৎসক রয়েছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। এক মহিলা চিকিৎসক এগিয়ে আসেন। বিমানের মেঝেতে আমাকে শুইয়ে তাঁরা সবাই মিলে প্রসব করান।’’

সোমবার রাত ২টো ২০ মিনিট নাগাদ কাতার এয়ারওয়েজ়ের বিমান যখন নাগপুরের কাছাকাছি, তখন পাইলট কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, বিমানে এক মহিলা যাত্রী অসুস্থ। তিনি জরুরি অবতরণ করতে চান। প্রথমে পাইলট নাগপুরে নামার কথা বললেও পরে সিদ্ধান্ত বদলে কলকাতায় নামেন রাত ৩টে ৯ মিনিটে। মোনাকে নামিয়ে বিমানটি রাতেই ব্যাঙ্কক উড়ে যায়।

একটু সুস্থ হলে ছেলেকে নিয়ে একাই ব্যাঙ্ককে ফিরে যাবেন মোনা। সন্তানের জন্মের খবর তাঁর পুরুষ বন্ধুটি জানেন না। জানেন শুধু মোনার মা। তাঁর বাবা নেই। অবিবাহিতা মোনা সন্তান নিয়ে দেশে ফিরলে আত্মীয়স্বজনের কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা জানেন না নিজেও। চার্নক হাসপাতাল সূত্রের খবর, মা ও সন্তান দু’জনেই ভাল রয়েছেন। দিন দুয়েকের মধ্যেই মোনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল সময়ের আগেই বোধহয় শিশুটি জন্মেছে। কিন্তু, কলকাতা বিমানবন্দরের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সদ্যোজাতের ওজন প্রায় আড়াই কিলোগ্রাম।

Advertisement

কলকাতায় অবতরণের পরে বিমানবন্দরের চিকিৎসক উড়ানে উঠে দেখেন, প্রসবের পরে একেবারে নিয়ম মাফিক নাড়ি ক্লিপ করে, তা কেটে, বাচ্চাকে মায়ের থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়েছে। পটু হাতে সে সব বিমানসেবিকারাই করেন। চিকিৎসক উঠে শিশুটিকে তাঁদের কোলেই ঘুরতে দেখেন। তবে প্রশ্ন, আসন্নপ্রসবা যাত্রীকে কী করে উড়ান সংস্থা বিমানে ওঠার অনুমতি দিল?

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে দেশের আকাশে শিশুর জন্ম হয়, সে দেশের নাগরিকত্ব পায় শিশুটি। সেই হিসেবে মোনার পুত্রেরও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা। তবে সন্তানের বাবা-মায়ের ইচ্ছাকে এই অবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ দিন অবশ্য মোনা জানিয়েছেন, তিনি চান তাঁর পুত্র তাইল্যান্ডের নাগরিত্বই পাক।

মাঝ আকাশে জন্মের ফলে কাতারের উড়ানে বাকি জীবন বিনা পয়সায় যাতায়াত করতে পারবে মোনার ছেলে, এমনও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বহু দেশের উড়ান সংস্থার ক্ষেত্রেই এই নিয়ম রয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়াও তাদের বিমানের ভিতরে জন্ম নেওয়া শিশুকে সারাজীবন বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা দিয়ে থাকে। এ নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজ়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এখনই কিছু বলতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.