Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দিদির পছন্দের মুড়িতেই পেট ভরালেন ওঁরা

রবিবার চাঁদনি চক মেট্রোর দু’নম্বর গেটের পিছনের ফুটপাতে কাগজ পেতে গোল হয়ে বসেছিলেন সেই প্রমীলা বাহিনী। জনা কুড়ি মহিলাদের কেউ শশা কাটতে, কেউ আবার সেদ্ধ আলু কুচিকুচি করে কাটতে ব্যস্ত।

বক্তৃতা শোনার ফাঁকে ঝালমুড়ি তৈরির প্রস্তুতি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বক্তৃতা শোনার ফাঁকে ঝালমুড়ি তৈরির প্রস্তুতি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩৬
Share: Save:

দিদির আদর্শেই শুধু নয়, তাঁর পছন্দেও ভরসা রাখেন তাঁরা!

তাই দল বেঁধে ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশে আসার সময়ে ঝোলায় মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, সেদ্ধ আলু, শশা নিয়ে এসেছেন কেষ্টপুর এলাকার মহিলা তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, সমাবেশে আসার আগে বাড়ির বাকি সদস্যদের জন্য ভাত-তরকারি রেঁধে এসেছেন। কিন্তু নিজেদের মেনুতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের ঝালমুড়ি, যাতে থাকবে না তেল ও ঝাল-মশলা।

রবিবার চাঁদনি চক মেট্রোর দু’নম্বর গেটের পিছনের ফুটপাতে কাগজ পেতে গোল হয়ে বসেছিলেন সেই প্রমীলা বাহিনী। জনা কুড়ি মহিলাদের কেউ শশা কাটতে, কেউ আবার সেদ্ধ আলু কুচিকুচি করে কাটতে ব্যস্ত। কয়েক জন আবার রাস্তার পাশে লাগানো জায়েন্ট স্ক্রিনেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনছেন মনোযোগ দিয়ে। আর বক্তৃতা শোনা থেকে ঝালমুড়ির আয়োজন, সবেতেই কড়া নজর রেখে চলেছেন ওই মহিলা বাহিনীর নেত্রী তথা বিধাননগর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আশা নন্দী।

আড়াই কিলোগ্রাম মুড়ি, ৬ প্যাকেট চানাচুর, ৫০০ গ্রাম বড় বাদাম, এক কেজি শশা, ৫০০ গ্রাম পেঁয়াজ ও এক কেজি সেদ্ধ আলু— এই দিয়েই এ দিন জলখাবার সেরেছেন সমাবেশে বক্তৃতা শুনতে আসা ওই মহিলা কর্মীরা। কিন্তু তৃণমূলের সমাবেশে যেখানে ডিম-ভাত খাওয়াটা প্রায় দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে তাঁদের মেনুতে মুড়ি-চানাচুর কেন? আশা বলছেন, ‘‘দিদির অনুপ্রেরণাতেই আমরা চলছি। তাই মেনুতে মুড়ি রেখেছি। তার উপরে গরমও খুব।’’ মঞ্চ থেকে তখন আরও জোরদার আন্দোলন করার ডাক দিচ্ছেন মমতা। সে কথা শুনেই শশা কাটা ছেড়ে হাততালি দিয়ে উঠলেন নিভা দাস। জানালেন, শনিবার রাত থেকেই মুড়ি-চানাচুর-শশা সবকিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তাঁরা। শুধু এ দিন সকালে সমাবেশে আসার আগে আলুটা সেদ্ধ করে এনেছেন এক কর্মী।

মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের খাবারের তালিকায় যে রয়েছে মুড়ি-ছোলা-বাদাম, তা জানেন রাজ্যের নেতা, মন্ত্রী, আমলা থেকে আমজনতা সকলেই। আর তাই ডিম-ভাত বা কচুরি-তরকারি ছেড়ে এ বার মুড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন অনেক সমর্থকই। যেমন, ট্রেন থেকে হাওড়া স্টেশনে নেমে সমাবেশে যাওয়ার আগে সঙ্গে করে আনা মুড়ি, বাদাম ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে পেট ভরিয়েছেন হুগলির হরিপদ রায় ও তাঁর সঙ্গীরা। আবার অন্য জেলা থেকে হাওড়ায় আসা প্রায় ১০ হাজার দলীয় কর্মীদের সমাবেশে পাঠানোর আগে ঠোঙাভর্তি খাবার তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী। সেই ঠোঙায় ছিল আলুর তরকারি ও মুড়ি। গৌতম বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম খিচুড়ি দেব। কিন্তু ওটা অযাত্রা। তাই মুড়ির ব্যবস্থা করেছি।’’

বামেদের পরিচিত মাছ-ভাত মেনু ২০১১ সালে বদলে গিয়েছিল বিরিয়ানির প্যাকেটে। কালক্রমে তাতেও বদল হয়ে এখন মেনুতে বিরাজমান ডিম-ভাত বা মাংসের ঝোল। তা নিয়েও বিতর্ক অবশ্য কম নয়। তাই বিতর্ক এড়াতেই কি এ বার মুড়ির প্রচলন?

সমাবেশ মঞ্চের পিছনে দাঁড়িয়ে ঠোঙা থেকে শুকনো মুড়ি চিবোতে চিবোতে কামারহাটির চেয়ারম্যান পারিষদ বিমল সাহার দাবি, ‘‘দলনেত্রী যদি মুড়ি পছন্দ করেন, তা হলে আমরা নই কেন! ওঁর দেখানো পথেই তো আমরা চলছি।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘গরমে তেল-ঝাল-মশলা খেলে তো অম্বল অনিবার্য। সেখানে শুকনো মুড়ি শরীরও ভাল রাখবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC TMC Martyr's Day Puff Rice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE