Advertisement
E-Paper

ট্যাক্সিতে ফেরার পথে পাড়ায় আক্রান্ত তরুণী

লাঠি, ইট, মদের বোতল দিয়ে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভাঙছে তিন উন্মত্ত যুবক। হামলা থেকে বাঁচতে কোনও রকমে গাড়ির পিছনের সিটের আড়ালে লুকিয়েছেন কলেজপড়ুয়া তরুণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০২:২২
আক্রান্ত তরুণীর জখম হাতে ব্যান্ডেজ। (ডান দিকে) ভাঙচুর হওয়া সেই ট্যাক্সি ও তার চালক। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত তরুণীর জখম হাতে ব্যান্ডেজ। (ডান দিকে) ভাঙচুর হওয়া সেই ট্যাক্সি ও তার চালক। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

লাঠি, ইট, মদের বোতল দিয়ে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভাঙছে তিন উন্মত্ত যুবক। হামলা থেকে বাঁচতে কোনও রকমে গাড়ির পিছনের সিটের আড়ালে লুকিয়েছেন কলেজপড়ুয়া তরুণী। আশপাশে দাঁড়িয়ে নির্বিকার চিত্তে সেই দৃশ্য দেখছেন লোকজন বলে অভিযোগ! রবিবার, দুর্যোগের রাতে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল বাঘা যতীনের বীরনগর। যার জেরে ফের প্রশ্ন উঠল শহরের নিরাপত্তা নিয়ে।

হামলাকারীরা তরুণীর অপরিচিত নয়। বরং পাড়ারই ছেলে। তরুণীর অভিযোগ, হামলার মধ্যেই সুযোগ বুঝে গাড়ি থেকে নেমে পালান তিনি। মাছ কাটার বঁটি হাতে পিছু নেয় হামলাকারীরাও। বরাতজোরে প্রাণ বাঁচিয়ে বাড়ি ঢুকতে পারেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, দুর্যোগের রাত হলেও ঘটনাস্থলের আশপাশে কিছু লোক ছিলেন। তবু তাঁরা কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। গোটা ঘটনা জানিয়ে ওই রাতেই পাটুলি থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন ওই তরুণী। তবু সোমবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি, অভিযুক্তেরা পলাতক। অভিযোগে ওই তরুণী বঁটি হাতে তাড়ার কথা উল্লেখ করেননি বলেও দাবি পুলিশের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, অভিযুক্তদের এক জন অভিযোগকারিণীর মায়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। তা শোধ করা নিয়েই গোলমাল চলছিল। তার জেরেই এই ঘটনা। আক্রান্ত তরুণীর অভিযোগ, তাঁর শ্লীলতাহানি করতেই মত্ত অবস্থায় চড়াও হয় নীলাঞ্জন দাস, কুট্টি দাস ও শিবু দাস নামে ওই তিন যুবক। এলাকাবাসীরা জানান, নীলাঞ্জন ও কুট্টি মাছের কারবার করে। শিবু পেশায় সেলসম্যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই যুবকেরা এলাকায় মদ খেয়ে এর আগেও নানা উপদ্রব করেছে। রবিবার রাতের ওই হামলায় আহত হন গাড়িচালক শ্যামা মিশ্র। ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাড়িটিও।

ঠিক কী ঘটেছিল?

ওই তরুণী জানান, ওই রাতে বৃষ্টির মধ্যে এক বন্ধুকে বাড়ি পৌঁছে দিতে একটি অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করেন তিনি। ফেরার পথে সওয়া ১১টা নাগাদ বীরনগর মোড়ের কাছে পৌঁছতেই ওই তিন যুবক তাঁর গাড়ি আটকায়। কাচে টোকা মেরে তাঁকে গাড়ি থেকে নামতে বলে। মত্ত যুবকদের কথায় কান না দিয়ে চালককে গাড়ি চালাতে বলেন ওই তরুণী। অভিযোগ, কিছু দূর যেতে না-যেতেই মোটরবাইক নিয়ে এসে ফের গাড়ি আটকায় কুট্টি ও শিবু। তাদের হাতে ছিল লাঠি ও মদের খালি বোতল। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ও জানালার কাচ ভেঙে দেয় ওই যুবকেরা। ভাঙা কাচের টুকরো লেগে তাঁর হাত কেটে যায় বলে জানান ওই তরুণী। আহত হন গাড়িচালকও।

ইতিমধ্যে সাহায্য চেয়ে এক বান্ধবীকে ফোন করেন ওই তরুণী। অভিযুক্তেরা গাড়িচালকের উপর চড়াও হলে গাড়ি থেকে নেমে ছুটতে শুরু করেন তিনি। অভিযোগ, তখনই অভিযুক্তেরা বঁটি নিয়ে তাঁর পিছু ধাওয়া করে। কোনও রকমে দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে ‘১০০’ ডায়ালে ফোন করেন তরুণী।

লালবাজার থেকে খবর পেয়ে পাটুলি থানার পুলিশ তাঁর বাড়ি গিয়ে অভিযোগ নথিবদ্ধ করে। সোমবার নিজের বাড়িতে বসে ওই তরুণীর মন্তব্য, ‘‘আর একটু হলে হয়তো আমি মরেই যেতাম!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি সে সময়ে চিৎকার করলেও কেউ বাঁচাতে আসেনি।’’

ঘটনায় আহত হয়ে ঘরবন্দি অ্যাপ-ক্যাব চালক শ্যাম মিশ্র। এ দিন বন্ডেল গেটের বাড়িতে বসে তিনি জানিয়েছেন, রবিবার রাতেই থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁরও দাবি, ‘‘ঘটনার সময়ে এলাকার বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখলেন। হাতজোড় করে বাঁচাতে বললেও কেউ এগিয়ে এলেন না!’’ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর গাড়ি। কাচ ভাঙা। ড্যাশবোর্ডে রক্তের দাগ।

এক তরুণী এবং গাড়িচালককে মার খেতে দেখেও কেন এগিয়ে এলেন না এলাকাবাসীরা? দুই প্রত্যক্ষদর্শীর অবশ্য দাবি, তাঁরা বাঁচাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযুক্তেরা খুনের হুমকি দেওয়ায় তাঁরা পিঠটান দেন।

সম্প্রতি ‘জয় হে’ অনুষ্ঠানে কলকাতা পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাঘা যতীনের এই ঘটনা এবং ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে না পারা বাহিনীর সেই কৃতিত্বকে কালিমালিপ্ত করল বলে মনে করছেন পুলিশেরই একাংশ।

miscreants miscreant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy