Advertisement
E-Paper

নেই আলাদা শৌচালয়, সন্ধ্যা হলেই ছুটি মহিলা পুলিশকর্মীদের

উত্তর কলকাতার একটি থানার এক মহিলা পুলিশকর্মীর দাবি, প্রত্যন্ত এলাকায় থানা থেকে অনেক দূরে গিয়ে শৌচকর্ম করতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে পাঠানো হলে সমস্যা আরও বাড়ে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২ ০৯:১২
অভিযোগ বাড়তে দেখে অবশেষে নড়ে বসেছে প্রশাসন।

অভিযোগ বাড়তে দেখে অবশেষে নড়ে বসেছে প্রশাসন। প্রতীকী ছবি।

ধর্ষণের মতো অভিযোগ জানাতে রাতে থানায় গিয়ে অভিযোগকারিণীকে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিতে হয়েছে পুরুষ পুলিশকর্মীর সামনে। মহিলা পুলিশকর্মী নেই? প্রশ্ন করায় শুনতে হয়েছে, ‘‘রাতে থানায় মহিলা অফিসার থাকেন না। বলতে হলে বলুন, নয়তো মহিলা থানায় যান। সেখানেও কাকে পাবেন জানি না, তার চেয়ে সকালে আসুন!’’ রাতে মাঝরাস্তায় নিগৃহীতা মহিলাকে আবার থানায় ফোন করে শুনতে হয়েছে, ‘‘কত রাত হয়েছে দেখেছেন? মহিলা পুলিশ অফিসার কোথায় পাবেন? এই আমি, একা এক জন অতিরিক্ত সাব-ইনস্পেক্টর ডায়েরি লেখার জন্য আছি। দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার পাঠাচ্ছি, বুঝে নেবে।’’

মহিলা পুলিশকর্মীর সাহায্য পেতে গিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রায়ই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ। কোথাও মহিলা পুলিশকর্মী অভিযোগ শুনলেও ফের একই কথা বলতে হয় তাঁর ঊর্ধ্বতন পুরুষ পুলিশকর্মীর সামনে। কখনও আবার মহিলা থানায় গেলে বলে দেওয়া হয়, অফিসার অন্য কাজে বেরিয়েছেন। শহরের পরিস্থিতিই এমন হলে, জেলায় কত খারাপ অবস্থা, তা সহজেই অনুমেয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। জেলার বহু মহিলা থানাতেই দুপুরের কয়েক ঘণ্টা এবং সন্ধ্যার পরে অবলীলায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর। শোরগোল পড়লে জানানো হয়, মত্ত লোকজনের উৎপাত এড়াতে এমন ব্যবস্থা।

এ নিয়ে অভিযোগ বাড়তে দেখে অবশেষে নড়ে বসেছে প্রশাসন। গত মে মাস থেকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করতে সামনে এসেছে, মহিলা পুলিশকর্মীদের প্রতি বঞ্চনা এবং পরিকাঠামোর অভাবেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কলকাতার মহিলা পুলিশকর্মীদের অনেকের দাবি, বেশির ভাগ সময়ে বাড়ি থেকে অনেক দূরে তাঁদের ডিউটি পড়ে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার জানিয়েছেন, ‘হোম ডিস্ট্রিক্ট’-এ পুলিশকর্মী নিয়োগ করার পক্ষে তিনি। বাড়ি দূরে হওয়ায় রাতের ডিউটি করতে সমস্যা হয় মহিলা পুলিশকর্মীদের। থানাতেও চলে অঘোষিত নিয়ম। রাত ৮টার পর থেকেই কার্যত ছুটি হয়ে যায় মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর এবং অতিরিক্ত মহিলা সাব-ইনস্পেক্টরদের। রাখা হয় না মহিলা হোমগার্ড বা সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও। দরকার পড়লে ডাকা হয় কাছে বাড়ি, এমন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার বা হোমগার্ডদের। কিন্তু ডেকে পাঠানোর মধ্যেই বড় কিছু ঘটে গেলে? উত্তর মেলেনি। এক মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর বলেন, ‘‘রাতে থাকব কী করে? প্রায় কোনও থানাতেই মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যারাক নেই। কিছু থানায় রেস্টরুম আছে, তবে সেগুলো রাতে থাকার মতো নয়। মহিলা শৌচালয়েরও সমস্যা রয়েছে।’’

উত্তর কলকাতার একটি থানার এক মহিলা পুলিশকর্মীর দাবি, প্রত্যন্ত এলাকায় থানা থেকে অনেক দূরে গিয়ে শৌচকর্ম করতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে পাঠানো হলে সমস্যা আরও বাড়ে। কারণ, সঙ্গে যায় না বায়ো টয়লেটের গাড়ি। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই থানা বা ফাঁড়ির পুরুষ পুলিশকর্মীদের দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয় তাঁদের। এ নিয়ে অভিযোগ করলেও ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি তাঁদের।

তা হলে উপায়? এই প্রেক্ষিতেই এ বার বাহিনীর মহিলা পুলিশকর্মীদের সমস্যা শুনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য পুলিশের ওয়েলফেয়ার কমিটি। আগামী ২৬ নভেম্বর রবীন্দ্র সদনে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং পদস্থ কর্তাদের সামনে বাহিনীর সমস্ত মহিলা পুলিশকর্মীকে উপস্থিত হয়ে সমস্যার কথা জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বর্তমানে রাজ্য পুলিশে মহিলা কর্মীর সংখ্যা ন’হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু ইনস্পেক্টর মাত্র ২৩ জন, সাব-ইনস্পেক্টরের সংখ্যা ৩৭০। কনস্টেবল সাড়ে আট হাজারের মতো। এ ছাড়া, রাজ্যের হাতে রয়েছে দু’হাজারের বেশি মহিলা হোমগার্ড এবং এনভিএফ (ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার ফোর্স) কর্মী। এত কম সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী নিয়ে সুষ্ঠু ভাবে সব সামাল দিতে দ্রুত তাঁদের ক্ষোভ প্রশমন করা জরুরি। সেই কারণেই এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাহিনীর অন্য একটি অংশের দাবি, খুব দ্রুত রাজ্যে আরও ২০টি মহিলা থানা তৈরি হতে চলেছে। তার আগে এই বিষয়গুলি মিটিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

police Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy