Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
‘পরাজিত’ আইনরক্ষক

পুলিশকে ‘মার’ পুলিশের ছেলেরই

খোলা রাস্তায় পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলছিল মদ্যপান। সঙ্গে অশ্লীল গালিগালাজ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফের আক্রান্ত হল পুলিশ। তবে অভিযোগ, এ বার হামলাকারী খোদ এক পুলিশকর্তার ছেলে ও তার দলবল। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘোলা থানার মুড়াগাছায় একটি পানশালার সামনে ঘটনাটি ঘটে।

আটক হওয়া সেই গাড়ি। মুড়াগাছায়। — নিজস্ব চিত্র।

আটক হওয়া সেই গাড়ি। মুড়াগাছায়। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

খোলা রাস্তায় পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলছিল মদ্যপান। সঙ্গে অশ্লীল গালিগালাজ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফের আক্রান্ত হল পুলিশ। তবে অভিযোগ, এ বার হামলাকারী খোদ এক পুলিশকর্তার ছেলে ও তার দলবল। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘোলা থানার মুড়াগাছায় একটি পানশালার সামনে ঘটনাটি ঘটে।

অভিযুক্তদের ধরে ফেলেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীই। সশস্ত্র পুলিশের ডিআইজি (উত্তরবঙ্গ) শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে সৌরাশিস চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বন্ধু সপ্তর্ষি ঘটক, শুভময় দাস, দেবায়ন মালো ও নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয় গাড়িটিও। রবিবার ব্যারাকপুর আদালতে ধৃতদের ১ দিনের জেল হেফাজত হয়। তবে ধৃতদের হেফাজতে চায়নি পুলিশ। ফলে এ বারও অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখায়নি তারা। এই প্রসঙ্গে আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বারবার এমন ঘটলে বিচারব্যবস্থায় আস্থা হারাবেন মানুষ। প্রশাসনের তরফে অভিযুক্তদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা বিপজ্জনক।’’

উত্তরবঙ্গের ওই পুলিশকর্তা ফোনে বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনা সম্পর্কে জানি না। তবে আইন আইনের পথে চলবে।’’ ওই পুলিশ কর্তা এমন দাবি করলেও ঘোলা থানাই নয়, গোটা ব্যারাকপুর কমিশনারেট মুখে কুলুপ এঁটেছে বলে অভিযোগ। কমিশনার নীরজকুমার সিংহ শুধু বলেন, ‘‘ঘটনাটি এত বড় করে দেখার মতো কিছু নয়। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীকে বাধা দেওয়া, মারধর-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে জামিন অযোগ্যধারাও রয়েছে। তবু কেন আদালতে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে চাইল না পুলিশ? পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, গ্রেফতার করা হলে হেফাজতে নিতেই হবে, এমন নয়। এই ঘটনায় কিছু উদ্ধারের নেই। মারধরের ঘটনায় প্রয়োজনীয় ধারাতেই অভিযোগ হয়েছে।

তবে এ বারও ক্ষোভে ফুঁসছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের উচ্চস্তরের নিষ্ক্রিয় মনোভাবের জন্যই সর্বত্র পুলিশকে মার খেতে হচ্ছে। এক অফিসার বলেন, ‘‘এর পরে মনে হচ্ছে, আর এই পেশায় থাকা যাবে না। লজ্জায় বাড়িতে মুখ দেখানো যাচ্ছে না।’’ পুলিশকর্মী ও আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, পুলিশকর্তার ছেলে বলে পুলিশকে মেরেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এটাই সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে হলে উল্টোটা হতো।

ঠিক কী ঘটেছিল শনিবার? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ওই পানশালার কাছে লালচে রঙের একটি গাড়ি রেখে প্রকাশ্যেই মদ্যপান ও অশ্লীল গালিগালাজ করছিলেন ওই যুবকেরা। এক পথচারী প্রতিবাদ জানালে তাঁকেও গালিগালাজ হজম করতে হয়। তিনিই ঘোলা থানায় ঘটনাটি জানান। ঘোলা থানার সাব ইনস্পেক্টর তপন কুমার শীল-সহ চার পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে যান। অভিযোগ, তপনবাবু ওই যুবকদের চলে যেতে বললে তাঁরা পাল্টা গালিগালাজ করেন। ওই পুলিশ আধিকারিক গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে ধরার চেষ্টা করলে রীতিমতো হাসিঠাট্টাও করেন। আরও অভিযোগ, সৌরাশিস তাঁকে বলেন, ‘‘আমি ডিআইজির ছেলে। তুই কিছু করতে পারবি না।’’

পুলিশ তাঁদের জিপে তোলার চেষ্টা করতেই শুরু হয় হাতাহাতি। অভিযোগ, তপনবাবুকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলে মাথায় চোট লাগে তাঁর। পুলিশকে মার খেতে দেখে পথচারী ও এলাকাবাসীরা ওই যুবকদের ঘিরে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা মত্ত ছিলেন। ইতিমধ্যে ঘোলা থানা থেকে আরও পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE