Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bicycle

Awareness against Pollution: নিজের তৈরি সাইকেল নিয়েই দূষণরোধী যুদ্ধে

গড়পড়তা সাইকেলের থেকে দেখতে অনেকটাই আলাদা। দু’টি গাছের মধ্যে দোলনা টাঙিয়ে শুয়ে পড়লে যেমন দেখতে হয়, এই সাইকেলের আসনে বসলেও তেমনই দেখায়।

অভিনব: নিজের তৈরি সাইকেল নিয়ে পথে সজল রায়।

অভিনব: নিজের তৈরি সাইকেল নিয়ে পথে সজল রায়। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২১ ০৮:১০
Share: Save:

এ আবার কেমন সাইকেল?

গড়পড়তা সাইকেলের থেকে দেখতে অনেকটাই আলাদা। দু’টি গাছের মধ্যে দোলনা টাঙিয়ে শুয়ে পড়লে যেমন দেখতে হয়, এই সাইকেলের আসনে বসলেও তেমনই দেখায়। দু’টি চাকার মধ্যে দূরত্বও বেশি। চেন অন্য সাইকেলের চেয়ে বড়। প্যাডেল রয়েছে হ্যান্ডেলের উপরে! দেখলে মনে হবে, যেন কেউ শূন্যে পা তুলে প্যাডেল করছেন।

নিজের বানানো এই সাইকেল নিয়ে বেরোলেই সল্টলেক সেক্টর ফাইভের বাসিন্দা সজল রায়কে শুনতে হয়, “ওঁর কী কোনও শারীরিক সমস্যা আছে? না-হলে এমন সাইকেল ব্যবহার করবেন কেন?” কেউ কেউ আবার গাড়ি নিয়ে তাঁকে চেপে দেওয়ার চেষ্টাও করেন বলে অভিযোগ। তবু লড়াই ছাড়েননি ষাটোর্ধ্ব সজলবাবু। বলছেন, “এ তো শুধু সৃষ্টি নয়, এটা মোটরযানের জেরে দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা। গাড়ি চাপলে লোকে সম্মান দেন, সাইকেলচালকের কপালে জোটে দূর ছাই।”

সজলবাবুরা দু’ভাই, এক বোন। তাঁর বাবা বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে জুতোর কারখানা করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই ব্যবসায় ছিলেন সজলবাবুও। পরে শরিকি বিবাদে মানিকতলার বাড়ি ও ব্যবসা ছেড়ে স্ত্রী চৈতালিদেবীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। সজলবাবু বলেন, “সেন্ট পল্‌স স্কুলে আমাদের শিক্ষক ছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। তাঁর তৈরি হবি রুমে শেখা টেরাকোটার কাজ, ফাইবার গ্লাস, সিমেন্টের মূর্তি তৈরির শিক্ষা কাজে লাগল। কাঁকুড়গাছিতে খুললাম মূর্তির দোকান।” কিন্তু করোনা আর লকডাউনের জেরে বন্ধ রাখতে হল সেই দোকান। পরে দোকান খুললেও বিক্রিবাটা আগের মতো হয় না। তাই লকডাউনের সময়ে স্থির করেন, সাইকেল তৈরি করবেন। সজলবাবু জানান, তত দিনে বছর তিরিশের ছেলে সৈকতের চাকরি হয়েছে একটি আসবাবপত্র বিপণি সংস্থায়। নিজের মোটরবাইকটি ছেলেকে দিয়ে তাঁর সাইকেলটি নিয়ে নেন সজলবাবু। বলেন, “ছেলের সাইকেলেই দোকানে যেতে শুরু করি। এ ভাবেই দেখা হল সাইকেল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের সঙ্গে। দেখলাম, বিশ্ব যেখানে দূষণের বিরুদ্ধে লড়তে সাইকেলকে হাতিয়ার করছে, সেখানে আমরা উল্টো পথে হাঁটছি। এখানে সাইকেলের কোনও অধিকার নেই। শুরু হল সাইকেল নিয়ে পড়াশোনা।”

তখনই সজলবাবু জানলেন, রিকাম্বেন্ট, ক্রুজ, চপার— নানা ধরনের সাইকেল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্বের বাজারে। স্থির করলেন, রিকাম্বেন্টের বাঙালি সংস্করণ তৈরি করবেন। বলছেন, “এর পরে নকশা বানিয়ে শুরু হল লোহা ঝালাই করানোর কাজ। কাজ যত এগিয়েছে, ততই লোকে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু সাইকেল রাস্তায় চলতে নামলে সকলেই অবাক। সাইকেলের ছবি দেখে প্রশংসা করল নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত এক সাইকেল সংগঠন। তাদের মতে, কলকাতায় তৈরি এই সাইকেল নাকি দ্রুত ইউরোপের বাজার দখল করতে পারে। কিন্তু আমি ব্যবসা চাই না। এটা আমার লড়াই আর প্রতিবাদ।”

আর কলকাতা সাইকেল সমাজের আহ্বায়ক রঘু জানা বলছেন, ‘‘সজলবাবু এই উদ্যোগ অনেককেই সাইকেল চালাতে উদ্বুদ্ধ করবে। সরকার সাইকেলের জন্য পৃথক লেন বানানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তা বাস্তবায়িত করা হোক।’’

তবে সজলবাবুর আক্ষেপ, স্ত্রী-ও এক সময়ে পাশে দাঁড়াতে চাননি। “ওকে দোষ দিই না। ওর ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ রয়েছে। সাইকেলের কিছু কাজ এখনও বাকি। কিন্তু হাতে টাকাকড়ি শেষ। কাঁথা-কম্বল বেঁধে আসন বানিয়েই চলছে সাইকেল যাত্রা।”— বলছেন স্রষ্টা সজলবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bicycle awareness Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE