Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

যুবকের দেহ উদ্ধার পুলিশ আবাসনে

শনিবার বেলঘরিয়া থানা এলাকার বি টি রোডের ডানলপ পুলিশ আবাসনের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম দীপ বারিক (২৩)। তিনি ওই পুলিশ আবাসনে এক বাল্যবন্ধুর সঙ্গে পিকনিক করতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়েছিলেন।

দীপ বারিক।

দীপ বারিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

পুলিশ আবাসনের ভিতরে কচুরিপানা ভর্তি একটি ডোবা। পাশেই খেলার মাঠে চলছিল ফুটবল টুর্নামেন্ট। আচমকাই বল এসে পড়ে ডোবায়। বলটাকে পাড়ের কাছে নিয়ে আসতে ঢিল ছুড়তে শুরু করে ছেলেরা। আর তখনই ভেসে ওঠে উপুড় হয়ে থাকা একটি পচাগলা মৃতদেহ!

খাস পুলিশ আবাসনের ডোবায় দেহ ভেসে ওঠায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দেহটি উদ্ধারের পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বর্ষবরণের দিন পিকনিক করতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন এলাকার যে ইঞ্জিনিয়ার, ওই মৃতদেহটি তাঁরই।

শনিবার বেলঘরিয়া থানা এলাকার বি টি রোডের ডানলপ পুলিশ আবাসনের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম দীপ বারিক (২৩)। তিনি ওই পুলিশ আবাসনে এক বাল্যবন্ধুর সঙ্গে পিকনিক করতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়েছিলেন। এ দিন তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানায়, দেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই মৃত যুবকের বাল্যবন্ধু ও আবাসনের বাসিন্দা সঞ্জয় বর্মণ চম্পট দেন। পরে আগরপাড়া থেকে তাঁকে আটক করে খড়দহ থানার পুলিশ। সঞ্জয়ের বাবা কলকাতা পুলিশের কর্মী।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, দক্ষিণেশ্বরের মে দিবস পল্লির বাসিন্দা, পেশায় রেলকর্মী দেবকুমার বারিকের একমাত্র ছেলে দীপ। বি-টেক পাশ করার পরে তিনি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর বাড়ি থেকে হাঁটাপথে মিনিট দশেকের দূরত্বে পুরনো এল-নাইন বাসস্ট্যান্ডের সামনেই ওই পুলিশ আবাসন। গত ৩১ ডিসেম্বর ওই আবাসনেই সঞ্জয় ও অন্য বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দীপ। তার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

পরের দিন সকালে বেলঘরিয়া থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন দেবকুমারবাবু। পুলিশও সঞ্জয়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কোনও সূত্র মেলেনি। যদিও প্রথম থেকেই সঞ্জয় ও অন্য বন্ধুদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিল দীপের পরিবার। ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে শুক্রবার অভিযোগ দায়ের করেন দেবকুমারবাবু। তাঁদের মূল অভিযোগ ছিল সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে।

দেবকুমারবাবু পুলিশকে জানান, বর্ষবরণের দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দীপ বাড়িতে ফোন করে জানান, তাঁর শরীরটা খারাপ লাগছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরবেন। দেবকুমারবাবু বলেন, ‘‘রাত হয়ে গেলেও ছেলে ফিরছিল না। ফোনও বন্ধ ছিল। তখন প্রতিবেশীদের নিয়ে ওই আবাসনে খুঁজতে যাই। কিন্তু পাইনি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পরের দিন সঞ্জয় ও অন্য যুবকেরা বারবার মিথ্যা বলেন। কেউ দাবি করেন, দীপ ওই দিন পুলিশ আবাসনে যাননি। কেউ আবার বলেন, অনেক আগেই তিনি ফিরে গিয়েছেন।

দীপের মা সোমাদেবীর দাবি, ৩০ ডিসেম্বর তাঁদের বাড়িতে এসে দীপকে পিকনিকে যেতে অনুরোধ করেন সঞ্জয়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে ওরা খুন করে জলে ফেলে দিয়েছে।’’ দীপের দেহ উদ্ধারের পরে দেখা যায়, তাঁর কপালে ও মুখে আঘাতের চিহ্ন। জমাট বেঁধে আছে রক্তও। ঘটনার পরে পুলিশ আবাসনের দোতলায় সঞ্জয়দের কোয়ার্টার্সে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। অন্য বন্ধুদেরও খোঁজ নেই। তবে বিকেলে আটক করা হয় সঞ্জয়কে।

পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে, বর্ষবরণের দিন চন্দননগরের একটি পার্কে এক বিবাহিত মহিলাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন দীপ। সঙ্গে ছিলেন দীপের মামাতো ভাইও। তিনি জানান, ওই মহিলার স্বামী ফোন করলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন দীপ। এর পরে মহিলাকে বাড়ি পৌঁছে দেন তিনি। সেখান থেকে ফিরেই পিকনিকে যান। বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dunlop police quarter dead body Murder Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE