অন্ধকারেই যাতায়াত। ছবি: অরুণ লোধ।
প্ল্যাটফর্মে সবেমাত্র শিয়ালদহগামী ট্রেন এসে দাঁড়িয়েছে। ছুটে সেই ট্রেনে উঠতে গিয়েই অন্ধকার প্ল্যাটফর্মের থেকে রেললাইনে পড়ে যান বিধাননগরের বাসিন্দা শোভনা হালদার। তত ক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পিছন দিক থেকে আসার জন্যেই প্রাণে বেঁচেছেন শোভনাদেবী। তবে ফিমার বোন ভেঙে তিন সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে আপাতত শয্যাশায়ী তিনি।
সূর্য ডুবলেই অন্ধকার নামে আক্রা রেলস্টেশনে। অভিযোগ, গত মাস দেড়েক ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। এর জেরে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ছিনতাই। নিত্যযাত্রী সৌম্য সরকারের কথায়: “অন্ধকারের মধ্যে যাত্রীরা ট্রেন ধরার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়েই পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা নামলেই প্ল্যাটফর্মে ছিনতাইয়ের ঘটনাও বাড়ছে। কয়েক দিন আগেই এক মহিলার কাঁধ থেকে ব্যাগ কেটে নিয়ে পালায় ছিনতাইবাজ। বেশ কিছুটা দৌড়ে গিয়েও ব্যাগ উদ্ধার করা যায়নি।” তবে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, শুধু আক্রা প্ল্যাটফর্মই নয়। নেশাখোড়দের কবলে পড়ে মাঝেমধ্যেই বজবজের লোকাল ট্রেনের লেডিজ কামরার যাত্রীদের সর্বস্ব লুঠ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মহিলাযাত্রীদের অভিযোগের তির আক্রা, সন্তোষপুর এবং বেসব্রিজ স্টেশন সংলগ্ন নেশার ঘাঁটিগুলির দিকে। এক প্রত্যক্ষদর্শী মহিলাযাত্রী জানাচ্ছেন, ১০ জানুয়ারি সকালের বজবজ লোকালের মহিলা-কামরা থেকে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনতাই হয়েছিল। পর পর কয়েক দিন একই ভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শিয়ালদহ জিআরপি, আরপিএফ এবং নবান্নে বজবজ লোকালের মহিলা-যাত্রীরা বিষয়টি জানাতে সম্প্রতি চিঠি জমা দিয়েছেন। চিঠিতে বজবজ লোকালের মহিলা-কামরায় শিয়ালদহ থেকে বজবজ পর্যন্ত রেলপুলিশ মোতায়নের আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এর মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা আক্রা প্ল্যাটফর্মের। গত দেড় মাস প্রায় অন্ধকারে এই প্ল্যাটফর্ম। পাঁচ-সাত বছর ধরেই কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি হয়। বাড়ে নেশাখোড়দের উপদ্রব। চুরি, ছিনতাই করে অন্ধকারে পালাতে সুবিধা হয় বলে রেলের তরফ থেকে আলো লাগানো হলেও পাথর ছুড়ে জোরালো আলো ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। গোটা প্ল্যাটফর্মে টিম টিম করে জ্বলছে কয়েকটি টিউবলাইট। তাতে প্ল্যাটফর্ম যথেষ্ট আলোকিতও হয় না। নিত্যযাত্রী থেকে ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই প্ল্যাটফর্ম ঘেঁষে মদের আসর বসে যায়। দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের রেলিংয়ের উপরে বস্তা দিয়ে ঢেকে প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া দু’টি মদের ঠেক রয়েছে। অনেক সময় সেখান থেকে মহিলাদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি, গালিগালাজ করা হয়। যেহেতু রোজ যাতায়াত করতে হয়, তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না। অন্য এক স্থানীয়ের কথায়, এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের পিছন দিকে রেলকোয়ার্টার্স সংলগ্ন খেলার মাঠের পাশেই রয়েছে আরও একটি ঠেক। প্রশাসনের তরফ থেকে কখনও ঠেক ভেঙে দেওয়া হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবার যে-কে-সেই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “আক্রা রেলস্টেশনে কিছু নির্মাণ কাজ চলছে। তাই ওখানে আলো নেই। যাত্রীদের সুবিধার জন্য আপাতত আলোর ব্যবস্থা করতে বলেছি। মদের ঠেক নিয়ে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখতে শিয়ালদহ আরপিএফ-কে পাঠানো হয়েছিল। তারা জানিয়েছে, ওখানে এমন কিছু নেই। যদি এই ধরনের অসামাজিক কাজ চলে তবে নিশ্চয়ই তা বন্ধ করা হবে।” মহেশতলা থানা এলাকার মধ্যে পড়ছে এই রেলস্টেশন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্ল্যাটফর্মের আলোর বিষয়টি রেলের অধীন। স্টেশন চত্বরে নিরাপত্তার দিকটিও রেলের। তবে রেল খবর না দিলে যাত্রীদের অভিযোগ পেয়ে মহেশতলা থানা ওই ঠেকগুলি মাধেমধ্যেই ভাঙা দেয়। ফের গজিয়ে ওঠে। এই বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট (এস আর পি) দেবাশিস বেজ বলেন, “খবর নিচ্ছি। এরকম কিছু হয়ে থাকলে খুব শীঘ্রই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy