Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
জাল নোট কাণ্ড

আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত কি, খোঁজ নিচ্ছে কেন্দ্রও

কলকাতার জাল নোট কারবারে ক্রমশ উঠে আসছে আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতের যোগসূত্র। চন্দ্রশেখরকে জেরা করে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য সূত্রের ভিত্তিতে এমনটাই দাবি করছেন গোয়েন্দারা। যার জেরে অবশেষে নড়েচড়ে বসল কেন্দ্রও। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই ঘটনার পিছনে কোন চক্র জড়িয়ে রয়েছে, তা জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারাও খোঁজখবর শুরু করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০০:০৭
Share: Save:

কলকাতার জাল নোট কারবারে ক্রমশ উঠে আসছে আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতের যোগসূত্র। চন্দ্রশেখরকে জেরা করে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য সূত্রের ভিত্তিতে এমনটাই দাবি করছেন গোয়েন্দারা। যার জেরে অবশেষে নড়েচড়ে বসল কেন্দ্রও। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই ঘটনার পিছনে কোন চক্র জড়িয়ে রয়েছে, তা জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারাও খোঁজখবর শুরু করেছেন।

শনিবার মানিকতলার লোহা ব্যবসায়ী চন্দ্রশেখর ওরফে পাপ্পু জায়সবালকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তাঁর মানিকতলার বাড়ি ও ডোমজুড়ের গুদাম থেকে ৪০০ বস্তা জাল নোট এবং টাকা ছাপানোর যন্ত্র, নকশা ও সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। ওই জাল নোটের মধ্যে ইউরো, ডলার, লিরা, দিনারের মতো বিদেশি টাকাও মিলেছিল। লালবাজার সূত্রের খবর, শুধু কলকাতা নয়, রাজ্য এবং দেশের অন্যান্য জায়গাতেও এমন চক্র ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই ব্যবসায় চন্দ্রশেখরের আরও দুই সঙ্গীর খোঁজ মিলেছে। বুধবার তাঁদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “তদন্ত এগোচ্ছে। তবে নতুন কেউ গ্রেফতার হয়নি।” এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দুই কর্তা লালবাজারে এসে বৈঠকও করেন।

এসটিএফ সূত্রের খবর, এই জাল নোট চক্রের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পুরনো কুচি টাকার কারবারের একটি সম্পর্ক মিলেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, পুরনো টাকার কুচি থেকে সিকিওরিটি থ্রেড নকল টাকায় বসাত চন্দ্রশেখর। পাশাপাশি ২০১২ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি টাকা ছাপানোর ছাঁচ চুরি গিয়েছিল। সেটি কোনও ভাবে এই নোট চক্রের হাতে পড়েছে কি না, তা নিয়েও খোঁজ চলছে। পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “হাওড়ায় চন্দ্রশেখরের গুদাম ছিল। ওই এলাকায় লেদ মেশিনের কারবারিরা বিভিন্ন ছাঁচ তৈরিতে দক্ষ। ফলে ওই ছাঁচ চন্দ্রশেখরেরা নকল করেছিল, এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

লালবাজার সূত্রে খবর, জাল টাকার তদন্তে এসটিএফ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দুই কর্তা লালবাজারে এসে ডিসি (এসটিএফ) অমিত জাভালগির সঙ্গে বৈঠক করেন। লালবাজার সূত্রের খবর, চন্দ্রশেখরের কারখানা থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার নকশা খতিয়ে দেখেন ওই কর্তারা। পাশাপাশি, কুচি টাকার ঠিকাদার কারা এবং ২০১২ সালের চুরি যাওয়া ছাঁচ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

তবে এই চক্রে শুধু জাল ভারতীয় টাকাই নয়, গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে জাল বিদেশি নোটও। শুল্ক দফতরের একাংশ বলছেন, এত দিন বিদেশে ছাপানোর পরে বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্ত দিয়ে জাল ভারতীয় টাকা এ রাজ্যে ঢুকত। কিন্তু এ বার জাল ভারতীয় টাকার পাশাপাশি বিদেশি নোট ছাপানোর ঘটনাও বেরিয়ে এসেছে। এ রাজ্যে বসে বিদেশের টাকা ছাপানোর পরে কী ভাবে তা পাচার হতো, তা নিয়েও খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা। এসটিএফ সূত্রের খবর, চন্দ্রশেখরকে জেরা করে এক বরাতকারীর নাম মিলেছে। তাঁর খোঁজ চলছে। কেন্দ্রীয় এক গোয়েন্দাকর্তার বক্তব্য, জাল টাকার পাশাপাশি এই বিষয়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই জাল বিদেশি নোটের পিছনে আন্তর্জাতিক জঙ্গি যোগাযোগও থাকতে পারে। সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

international gang fake currency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE