Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আমানতকারীদের অবরোধ তুলতে মার তৃণমূলের

টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে রেল-অবরোধে বসে পড়া বেআইনি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসক দলের নেতা-কর্মীদের এই হামলায় কিছু অবরোধকারী গুরুতর জখম হয়েছেন। চোখের সামনে এই হামলা দেখেও পুলিশ নিস্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ আক্রান্তদের।

বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা। শুক্রবার গড়িয়া স্টেশনে। ছবি:  শশাঙ্ক মণ্ডল।

বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা। শুক্রবার গড়িয়া স্টেশনে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে রেল-অবরোধে বসে পড়া বেআইনি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসক দলের নেতা-কর্মীদের এই হামলায় কিছু অবরোধকারী গুরুতর জখম হয়েছেন। চোখের সামনে এই হামলা দেখেও পুলিশ নিস্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ আক্রান্তদের।

শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়া স্টেশন চত্বরে। এই হামলার পরে দু’জন বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়ে যান বলে প্রথমে অভিযোগ উঠলেও পরে একজনকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অন্য এক জন এখনও নিখোঁজ। আক্রান্তদের অভিযোগ, এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় এক কাউন্সিলর।

বেআইনি লগ্নি সংস্থার আমানতকারী ও এজেন্টদের সংগঠন ‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনিটি ফোরাম’ কয়েক দিন আগেই ঘোষণা করেছিল, ২ মে তারা রাজ্যজুড়ে রেল অবরোধ করবে। সেই মতো এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ গড়িয়া স্টেশনের আপ এবং ডাউন লাইনেও অবরোধ শুরু হয়। রেল লাইনের উপরে বসে পড়েন ডায়মন্ডহারবার, ক্যানিং, বারুইপুর-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শ’দুয়েক আমানতকারী এবং এজেন্ট। ট্রেন থেকে নেমে বহু যাত্রীও ওই অবরোধে সামিল হন।

অবরোধ শুরুর কিছু পরেই স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা জনা কুড়ি সমর্থক নিয়ে সেখানে আসেন। আক্রান্তরা জানান, ওই নেতার সঙ্গীদের হাতে ছিল তৃণমূলের পতাকা লাগানো লাঠি। অবরোধকারীদের ধাক্কা দিয়ে তারা লাইন থেকে সরাতে চেষ্টা করলে দু’পক্ষে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে জিআরপি-র ৮-১০ জন পুলিশ এলেও তাঁরা কার্যত দর্শক হয়েই ছিলেন বলে আক্রান্তদের অভিযোগ।

ধস্তাধস্তির মধ্যেই পৌঁছন আরও কয়েক জন তৃণমূল সমর্থক। অভিযোগ, তাঁরা আচমকাই অবরোধকারীদের এলোপাথাড়ি পেটাতে শুরু করেন। এজেন্ট এবং আমানতকারীদের টেনে হিঁচড়ে লাইন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়। এ সময় কিছু নিত্যযাত্রী মারধরের প্রতিবাদ করলে তাঁরাও আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।

ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাস মুখোপাধ্যায় ওরফে মনু। অভিযোগ, তিনি আসার পরে তৃণমূল সমর্থকেরা আরও মারমুখী হয়ে ওঠেন। অবরোধকারীদের অনেককেই মাটিতে ফেলে লাঠিপেটা করা হয়। খবর পেয়ে জনা দশেক পুলিশ এলেও তাঁরা আমানতকারী এবং এজেন্টদের উপরেই চড়াও হন বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম সইফুল মণ্ডল বলেন, “সামনে থেকে তৃণমূল আর পিছন থেকে পুলিশ আমাদের উপরে হামলা চালায়। কাউন্সিলর এসে আমাদের গালি দেন। অন্যদের মারতে নির্দেশ দেন।”

গড়িয়া স্টেশনের ডাউন লাইনের কাছেই তৃণমূলের একটি পার্টি অফিস রয়েছে। অভিযোগ, রেল লাইন থেকে অবরোধকারীদের কয়েক জনকে টেনে হিঁচড়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। বিজয় দাস নামে এক বিক্ষোভকারীকে পার্টি অফিসের পিছনে নিয়ে গিয়ে লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ। পরে কিছু ক্ষণ তাঁর খোঁজ মিলছিল না। পরে দুপুর ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে রেল লাইনের ধারে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বিজয়কে। নিখোঁজ কামাল নামের আর এক অবরোধকারীর খোঁজ রাত পর্যন্ত মেলেনি।

ঘণ্টাখানেক গোলমালের পরে সকাল সওয়া আটটা নাগাদ সরে যান অবরোধকারীরা। তার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। অবরোধকারীরা যাদবপুর জিআরপি-তে পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। পরে ‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনিটি ফোরাম’-এর নেতা সুনন্দ সান্যাল ও অসীম চট্টোপাধ্যায় সোনারপুর থানায় গিয়ে বিভাসবাবু-সহ তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অসীমবাবু পরে বলেন, “রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করছে না। উল্টে, বিক্ষোভকারীদেরই শাসক দল মারধর করছে।”

তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাসবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “অবরোধের সময়ে আমি দু’কিলোমিটার দূরে ছিলাম। সেখানেই শুনতে পাই, স্থানীয় কিছু ছেলে অবরোধ সরাতে গেলে তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। শুনে আমি ওখানে যাই। পরে অবরোধকারীদের সরিয়ে ট্রেন চালু করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মারধর করা হয়নি।”

এই দিনের ঘটনার নিন্দা করেন যাদবপুর লোকসভা আসনের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এ ধরনের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যাঁরা অপরাধের প্রতিবাদ করছেন, তৃণমূল লাঠি হাতে তাঁদের আক্রমণ করবে কেন? আমানতকারীরা আগেও প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হয়েছেন। আসল কথা হচ্ছে, শাসক দল আমানতকারীদের এই প্রতিবাদকে ভয় পাচ্ছে, বলেই তা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gariya saradha case rail blockade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE