Advertisement
E-Paper

আমার কাছে সে আজীবনের অজিত

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:৪০

১৯৫৬ থেকে ’৮৩ পর্যন্ত যে মানুষটার সঙ্গে আমার যোগ, প্রথম পর্যায়ে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ভাবে, তার পর এই শহরের জলহাওয়ায় একই সঙ্গে ’৮৩ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকা, যার সুবাদে আমার থিয়েটারে আসা, অধিকাংশ সময়ে সে আমার মেন্টর, কখনও কখনও আমি তার সহায়ক, তার সম্পর্কে একটা বই লিখতে পারি, কিন্তু ছোট এই পরিসরে কী বলব! কেননা, আমরা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার কাছে সে আজীবনের অজিত। আর আমি তার খোকন। মানুষ হিসেবে সাধারণ বাঙালির থেকে লম্বা, অনেকটাই। ওঁর হাসিটা অধিকাংশ সময়েই উদার ও সোচ্চার। অপরিচিতের কাছে কখনও কখনও পিলে চমকানো। সব সময়েই অত্যুৎসাহী। সব কিছু ছাপিয়ে ওর হাসবার এবং হাসাবার ক্ষমতা ও কৌতুক বোধ অবিস্মরণীয়। অজিতের বিভিন্ন রসিকতার কাহিনি কয়েক লক্ষ হবে বোধহয় বলতে গেলে বীরবলনামা-র মতো একটা অজিতেশনামা হয়ে যাবে। ওর এই রঙ্গরসের স্বভাব উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। অজিতের বাবাও ছিলেন খুব মজার মানুষ।

এ বার একটু গুরুগম্ভীর কথা বলা যাক। কবি রিলকে-র একটা কথা আছে, ‘দ্য সাম অফ মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং, গ্যাদারিং অ্যাবাউট এ নেম, ইজ ফেম’। অজিতের ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি করে ঘটেছে। কারণ ও নাটকওয়ালা। তাই ওর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ প্রায়শই আবেগসর্বস্ব এবং স্মৃতিনির্ভর। অজিত যে খুব বড় মাপের অভিনেতা ছিল, তার সাক্ষী আর খুব বেশি নেই। ৩১ বছর হল মারা গিয়েছে। এই বিপুল সময়ের ব্যবধানে এক জন নাট্যাভিনেতাকে মনে রাখা বড় শক্ত। প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অজিত বড় মাপের অভিনেতা এবং নাট্য নির্দেশক এটা মিথ হয়ে গিয়েছে। অথচ তার লক্ষণ বা উপাদানগুলি কী তা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে একটু সূত্র ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

১) নাট্য নির্দেশক হিসেবে ও সাধারণ ভাবে বাস্তববাদ নিয়ে কাজ করেছে। থিয়েটারের এই ‘ফর্ম’ বা আঙ্গিকটি বহুজনগ্রাহ্য। অর্থাৎ, তার দর্শকদের কাছে ফর্মটা কোনও ভাবেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং সহজ ভাবে গৃহীত হয়েছে।
২) অসম্ভব ভাল ‘স্টোরি টেলিং’ বা গল্প বলার ধরন ছিল তার থিয়েটারে। গল্প নির্বাচনেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে অজিত।
৩) অসামান্য কৌতুকের প্রয়োগ করত ও থিয়েটারে।
৪) অভিনয়কে মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করেছে সে। এ ক্ষেত্রে ওর একটা বিশেষ কৌশল ছিল। সব সময় অভিনেতাদের দুর্বল দিকগুলো ঢেকে রাখত। তাঁদের শক্তির জায়গাগুলোকে প্রকট করে তুলে ধরত। তার ফলে ওর নাটকে প্রত্যেক অভিনেতাকেই খুব বড় মাপের বলে মনে হত।

নিজে এক জন অভিনেতা হিসেবে অজিতকে নিয়ে বিশদে লেখার ইচ্ছে নিয়ে এখন শুধু এটুকুই বলি, ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’ দেখার পর ১৯৬৩ সালে শম্ভু মিত্র অজিতকে একটা বই দিয়েছিলেন। তার উৎসর্গে লেখা ছিল ‘আগামী যুগের শ্রেষ্ঠ নট অজিতকে’। এই উক্তিটি অতিকথন দুষ্ট নয়। অভিনয়ের ক্ষেত্রে অজিত মূলত নির্ভর করত দ্রুত সংলাপ কথনে, আশ্চর্য পরিমিত সময়ের ব্যবহারে, রসিকতা বোধের পরাকাষ্ঠায় এবং সর্বোপরি এক জান্তব পরাবাস্তব জীবনীশক্তির প্রকাশে। অজিতের অভিনয় যাঁরা দেখেছেন এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা রাখেন, তার অভিনয় শৈলী নিয়ে একটা বড় লেখা তৈরি করা বড় জরুরি। তা না হলে হেমেন দাশগুপ্ত যেমন গিরিশযুগের অভিনেতাদের সপ্রশংস বর্ণনায় সব সময়েই একটি বাক্য ব্যবহার করতেন ‘তিনি জ্বালাইয়া দিয়াছেন’, অজিতের বিষয়টাও সে রকম জায়গায় থেকে যাবে।

ujjwal chakrabarty rudraprasad sengupta ajitesh bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy