Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

...

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

সিগনেট কবিতাসম্ভার: নব রূপে, নবোদ্যমে

আমার শহর নয় ক’ তেমন বুড়ো।
অতীত কালের অস্থি মুদ্রা চৈত্য বিহার কিছু
পাবে না তার কোথাও মাটি খুঁড়ে।
... অনেক ধুলোয় মলিন পা তার
অনেক ধোঁয়ায় ঝাপসা দুটি চোখ।
আমার শহর ভুলে গেছে
তার জীবনের আদি পরম শ্লোক।’

এমন পদ্য রচনা করেছিলেন যে কবি, তাঁকেই তো ভুলে গিয়েছে কলকাতা। প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর কবিতাসমগ্র বেরল ঐতিহ্যমণ্ডিত সিগনেট প্রেস থেকে, যেটি এখন ‘একটি আনন্দ প্রকাশনা’। কাব্যিক কিংবা কাব্যপ্রিয় প্রসঙ্গ পরিহার করে নাগরিক জীবন, প্রাত্যহিক ঘটনা ও সংবাদ, সমকালীন বাস্তবে বিব্রত ও ব্যস্ত মানুষের কথা ও ব্যথাকে কী ভাবে নিজের কবিতায় গ্রহণ করেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, সে সম্পর্কে তাঁর কাব্যগ্রন্থটির সম্পাদক সুরজিত্‌ দাশগুপ্ত লিখেছেন ‘রাবীন্দ্রিক গোমুখী থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্রই গদ্যকবিতা আর নগরকথাকে ভগীরথের মতো আবাহন করে বাংলা কবিতার বিস্তীর্ণ সমতলে নিয়ে এলেন। প্রেমেন্দ্রই আধুনিক বাংলা কবিতার ভগীরথ।’ প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছেন জীবনানন্দ দাশ আর তাঁর কলকাতাকে নিয়েও:
‘সেই এক নাগরিক
এই শহরের পথে
একা একা ঘুরেছে অনেক।
... সব কিছু দেখেছে সে
কখনো প্রবাসী কিংবা প্রণয়ীর মতো।’

সিগনেট থেকেই ফের প্রকাশিত হল জীবনানন্দের বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, ধূসর পাণ্ডুলিপি, কবিতার কথা, মহাপৃথিবী, আদি সংস্করণের প্রচ্ছদ-সহ। প্রথম চারটি সত্যজিত্‌ অঙ্কিত, শেষেরটি পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়ের। একদা ডি কে ওরফে দিলীপ গুপ্তের আধুনিক মনের সঙ্গে সত্যজিতের শিল্পরুচি মিশে গ্রন্থনির্মাণে সিগনেট যে নতুন ধারার জন্ম দিয়েছিল, আজ তা ইতিহাস। ‘কাব্যগ্রন্থের ব্যাপক প্রচারের মূলে ডি. কে.-র অবদান বাংলার অনেক কবিই কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করবেন ব’লে আমার বিশ্বাস।’ সত্যজিতের এ মন্তব্যের সূত্রে সে সময়ের সিগনেট-এর ধারাবাহিকতাতেই একের পর এক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করে চলেছে এখনকার সিগনেট। বেরল জয় গোস্বামীর গরাদ, গরাদ ও শ্রীজাতর কবিতাসমগ্র ১। আর বেরল বিষ্ণু দে’র কবিতাসমগ্র। তাঁর এই অখণ্ড সংগ্রহের ভূমিকা-য় পুত্র জিষ্ণু দে জানিয়েছেন ‘তাঁর কবিতায় খেলা করে গভীর সব চিন্তা। বিশ্বসাহিত্য বা বিশ্ব-রাজনীতি নিয়ে প্রবল আগ্রহের পাশাপাশি আমাদের লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি বিষয়েও তিনি ছিলেন উত্‌সাহী।... নিজে ছবিও এঁকেছেন সত্তরটির ওপর।’ পরিশিষ্টে তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত বিশিষ্টার্থবাচক শব্দ ও তথ্যের পঞ্জি, কাব্যপরিচয়, আত্মস্মৃতিমূলক গদ্য ‘ছড়ানো এই জীবন’।

নাট্যকার সৌমিত্র

ছবির মতো মঞ্চেও তিনি সমান সক্রিয়। বরং মঞ্চে অভিনয়ের সঙ্গে নাটক রচনা-নির্দেশনার কাজও করতে হয়। সৃষ্টির এই সমবায়িক আনন্দে মেতে থাকতেই ভালবাসেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ভাবালু পারিবারিক নাট্য-বিনোদনের বাইরে সমকালের জীবন-যন্ত্রণার নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে নির্দেশক সৌমিত্র প্রায় ছ’দশকে রচনা করেছেন ২৯টি নাটক। মানবচরিত্র ও সমাজের উদ্ভাস খুঁজতে গিয়ে ভর করতে হয়েছে বিদেশি নাটকেও, ‘আমি নানান দেশের সেইসব নাটক বেছে নিয়েছি, যা থেকে বাংলা নাটকে কাজ করা যায়, আবার সেই সঙ্গে যার মর্মবস্তু বিশ্বজনীন।’ জানিয়েছেন নাটককার সৌমিত্র। তাঁর প্রথম দশটি নাটক নিয়ে আনন্দ থেকে বেরল নাটকসমগ্র ১। রাজকুমার, টিকটিকি, নামজীবন, ফেরা, নীলকণ্ঠ-এর মতো মঞ্চসফল নাটকগুলি ঠাঁই পেয়েছে খণ্ডটিতে।

কাপমহলা

সাতটা ক্রিকেট বিশ্বকাপ কভার করেন যে সাংবাদিক, তাঁর অতলান্ত ঝোলায় যে অজস্র মণিমাণিক্য থাকবে, আশ্চর্য কী! বিশ্বকাপের অন্দরমহলে লুকিয়ে থাকা গল্প নিয়ে গৌতম ভট্টাচার্যের নতুন বই কাপমহলা (দীপ প্রকাশন)। পুরোটাই, লেখকের ভাষায় ‘রেফারেন্স বইয়ের মশলা’হীন, স্মৃতি আর পুরনো ডায়েরির মিশেলে লেখা। ১৯৮৭ থেকে ২০১১, ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ পরবের জ্বলজ্বলে তারাদের কথা তো আছেই, বাড়তি পাওনা নির্বাচিত প্রিভিউ ও ম্যাচ রিপোর্ট, সাক্ষাত্‌কার ‘পঁচিশ বছর পর কপিল’।

অভিযাত্রী

“সূর্য ডোবার ঠিক আগে পৌঁছে যাই সমুদ্রের ধারে। ভাবতে অবাক লাগে, যখন প্রথম ১২০ জন জার্মান সৈন্য, আর ৪০ জন ঔপনিবেশিক এসে নামেন এই তীরে, তাঁদের বাস করতে হয়েছিল বালি খুঁড়ে গুহা বানিয়ে।” ২০১২-র ২৪ জুন কেনিয়ার নানইয়ুকি থেকে যাত্রা শুরু করেন অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। পাহাড় ছেড়ে স্থলভূমি, উপত্যকা, মরুভূমি। তানজানিয়া, মালাউয়ি, জাম্বিয়া হয়ে নামিবিয়া পাঁচটা দেশের ৪৫,০০০ কিলোমিটার পথ। সঙ্গী সাইকেল! তিনি এই আফ্রিকা পরিক্রমার রোমাঞ্চকর গল্প লিখেছেন অতএব আফ্রিকা: সাইকেলে ৫ দেশ (উত্তর পাবলিকেশনস) বইয়ে।

কলকাতা বেতার

স্যাটেলাইট টেলিভিশনের দাপটে যে যন্ত্রটা এখন নিতান্তই কোণঠাসা, এক কালে তা-ই ছিল বঙ্গবাসীর বিশ্বের জানালা, মনখারাপের সঙ্গী, প্রেমে পড়ার প্রথম ধাপ। সেই আকাশবাণী কলকাতা নিয়ে ভবেশ দাশের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘কলকাতা বেতার’ প্রথম পঞ্চাশ বছরের কথা। যথারীতি দাবি ওঠে আরও প্রাপ্তির। সম্পাদক জানিয়েছেন, প্রায় অভাবিত ভাবেই তাঁর কাছে এসে পৌঁছয় বহু লেখা, ছবি, প্রামাণ্য নথি। অতএব, প্রকাশিত হল সংকলনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড। প্রকাশক গাঙচিল। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, লীলা মজুমদার, তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের স্মৃতিচারণ হয়ে বেতারে সত্যজিত্‌ রায়ের প্রসঙ্গ, সংগীতশিক্ষার আসরে পঙ্কজ মল্লিক, ধরা পড়েছে অনেক ছবি। এমন অতীত তো ফিরে দেখার মতোই।

বিভূতি-স্মরণ

পথের পাঁচালির আখ্যানটা অত্যন্ত দেশী।... এর থেকে শিক্ষা হয়নি কিছুই, দেখা হয়েচে অনেক যা পূর্ব্বে এমন করে দেখিনি। বিভূতিভূষণকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের এ মন্তব্য ফিরে পড়া গেল আফিফ ফুয়াদ সম্পাদিত দিবারাত্রির কাব্য-এর ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যা’য়। সেকাল ও একালের বহু রচনায় ঋদ্ধ ছশো পাতার সংখ্যাটি, নতুন নিবন্ধের সঙ্গে কিছু পুনর্মুদ্রণও। ছ’টি গুচ্ছে সাজানো প্রবন্ধাদিতে উদ্ভাসিত বিভূতিভূষণের ব্যক্তি ও লেখক সত্তার নানা দিক। সঙ্গে তাঁর জীবনপঞ্জি ও তাঁকে নিয়ে চর্চারও একটি পঞ্জি। শুভাপ্রসন্নের প্রচ্ছদ।

নির্বাচনী কথা

প্রকাশিত হল ২০১৪ সালে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা ও আসন্ন রাজ্যের পুরসভার নির্বাচনে ওয়ার্ডভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য নিয়ে দেবাশিস ভট্টাচার্য ও আশিস চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বই লোকসভা ভোট ২০১৪ বাংলার ফল: পুরসভা ও বিধানসভা ভোটে যা হতে পারে (পুনশ্চ)। পরিশিষ্টে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকা বাড়তি পাওনা। অন্য দিকে দীপ প্রকাশ করেছে আ হ্যান্ডবুক অব ইন্ডিয়ান ইলেকশনস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (১৯৪৭-২০১৪)। ভারতের নির্বাচন পদ্ধতি, ২০১৪ সাল অবধি যাবতীয় লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল রয়েছে এতে। তথ্যবহুল এই বই লিখেছেন শামসুল আরেফিন ও সংঘমিত্রা সাহা।

দুঃসাহসিক

মারা গিয়েছেন স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘কল’ এল, এক মহিলার প্রসব বেদনা উঠেছে। ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলেন বছর সাঁইত্রিশের সদ্য বিধবা। অসন্তুষ্ট পরিবারের লোকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘যে গেছে সে তো আর ফিরবে না, যে নতুন প্রাণ পৃথিবীতে আসছে তাকে তো আনতে হবে।’ এমনই ছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাধার প্রাচীর ভেঙে দেশের প্রথম মহিলা চিকিত্‌সক হয়ে দুঃসাহসিকতার পরিচয় আগেই দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন ইতিহাস নিয়ে মালা দত্ত রায়ের বই কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়: প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিত্‌সক (সিগনেট/ একটি আনন্দ প্রকাশনা)। এতে উঠে এসেছে কাদম্বিনীর জীবন সংগ্রাম, ব্যক্তি জীবন ও মানুষ কাদম্বিনী।

ধ্রুবপদ

সদ্য যাত্রা শুরু করল ধ্রুবপদ প্রকাশনী। ১৯৬৯ সালে ‘ইউনিসেফ’ প্রকাশিত চিত্রকলার নবপ্রকাশ ঘটল কৃষ্ণজিত্‌ সেনগুপ্তের দেবশিশুদের অ-রূপকথা গ্রন্থে চিত্তপ্রসাদের ১৭টি দুষ্প্রাপ্য লিনোকাট রয়েছে এখানে। স্বপন সোমের সম্পাদনায় বেরল আধুনিক গানের নির্বাচিত এক সংকলন: গানের ভিতর দিয়ে ১ম খণ্ড। গ্রন্থের এই ধ্রুবপদ-সংস্করণে আছে সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় থেকে অজয় ভট্টাচার্য পর্যন্ত ১১ জন গীতিকারের প্রায় ২৫০টি গান যাবতীয় তথ্যসমেত। পরবর্তী তিনটি খণ্ড ক্রমশ প্রকাশ পাবে। আনসারউদ্দীনের নতুন গল্প-সংকলন শোকতাপের কথামালা-য় আছে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের কথা। প্রকাশ পাচ্ছে খালেদ চৌধুরীর প্রামাণ্য জীবনী লোকায়ত থেকে রূপায়ত (প্রদীপ দত্ত)। সঙ্গে খালেদ চৌধুরীর কয়েকশো শিল্পকর্ম ও তাঁর তথ্যসূত্র এবং বর্ণরঙিন ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত্‌ সংক্রান্ত চিত্রিত অ্যালবাম।

সত্যজিত্‌কে নিয়ে

সত্যজিত্‌কে নিয়ে ফের মাতোয়ারা বইমেলা। দুটি পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি-র মুখপত্র চিত্রভাষ-এর (সম্পা: জ্যোতিপ্রকাশ মিত্র ও মলয়রঞ্জন মুখোপাধ্যায়) বিষয় ‘অগ্রন্থিত সত্যজিত্‌’ (সঙ্গে প্রচ্ছদচিত্র অসিত পোদ্দারের তোলা)। আমন্ত্রিত সম্পাদকদ্বয় দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও ঋদ্ধি গোস্বামী সংকলন করেছেন এ পর্যন্ত বইয়ে না-ঠাঁই-পাওয়া বাংলা লেখা। নিবন্ধাদির সঙ্গে আছে শুভেচ্ছাপত্র, সাক্ষাত্‌কার, চিঠি, ব্যক্তিস্মৃতি, সঙ্গে প্রথম প্রকাশসূত্রও। কমলকুমার মজুমদার, ডি কে ওরফে দিলীপ গুপ্ত, এমনকী জওহরলাল নেহরুকে নিয়েও সত্যজিতের লেখা পত্রটিতে। অন্যটি সোমনাথ রায় সম্পাদিত এখন সত্যজিত্‌-এর ‘সিনেমা পত্রিকায় সত্যজিত্‌’। পঞ্চাশের দশক থেকে যে-সব পত্রিকা (উল্টোরথ, ঘরোয়া, জলসা, রূপমঞ্চ, সিনেমাজগত্‌ ইত্যাদি) রুপোলি পর্দার ইতিবৃত্ত তুলে ধরত দর্শকের কাছে, সেখানে সত্যজিত্‌ চর্চার ধারাবাহিক খতিয়ান এই সংখ্যাটিতে। সে কালের সিনেমা পত্রিকায় সত্যজিত্‌ ও তাঁর সিনেমা নিয়ে ‘কভারেজ’-এর শুটিং বিবরণ, দুষ্প্রাপ্য ছবি, প্রচ্ছদ মায় বিজ্ঞাপন পর্যন্ত।

আচার্য

কেমন মনীষী ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র? বিজ্ঞানী? সাহিত্যানুরাগী? দেশপ্রেমিক? নাহ্, কোনও একটা তক্‌মায় ধরা যায় না তাঁকে। আচার্যকে নতুন করে আবিষ্কারের এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে তথ্যচিত্র পরিচালকের। তিনি মুজিবর রহমান। যিনি এর আগে বানিয়েছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: জীবন ও সময়। ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন-এর অনুরোধে এ বার তৈরি করেছেন ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রে: অ্যানসিয়েন্ট গুরু রিবর্ন’। ‘গবেষণা করতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছি,’ বললেন মুজিবর, ‘এক জীবনে এত কাজ!’ ভারতের বহু শহর, বাংলাদেশের ঢাকা ঘুরে প্রচুর তথ্য, বহু জনের সাক্ষাত্‌কার। দশ ঘণ্টার ফুটেজ থেকে ৫৮ মিনিটের ফিল্ম। নন্দন-এ আজ বিকেল ৫টায় এটি উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

ছোটদের বই

চাঁদ ভাবে সে কেন সূর্যের মতো আলো দিতে পারে না। সে-ও চায় সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করতে। আর তখনই দারুণ একটা ব্যাপার ঘটে। তাই নিয়েই ছোটদের জন্য নরওয়ের এলিন গ্রিমস্টাড গল্প লিখেছিলেন। সেটাই এবার বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে চাঁদ সূর্যের গল্প (সম্পর্ক)। এত দিন বড়দের জন্য অনূদিত গল্প প্রকাশ করছিল এই প্রকাশনা সংস্থা। সম্প্রতি ছোটদের জন্য অনূদিত গল্প প্রকাশ শুরু করেছে তারা। বাংলার সঙ্গে ইংরেজি হিন্দিতে প্রকাশ পেল নরওয়ের কারি স্তাইয়ের হাঁদু ও নাদু, ফিনল্যান্ডের সিনিক্কা ও টিনা নোপোলার সিমো আর সোনিয়া, এবং ফরাসি মার্সেল এমের কুকুর বিড়ালের গল্প।

ইত্যাদি কথা

সত্তর দশকের মাঝামাঝি, যখন সংবাদ, বিষয়-ভাবনা, ভাষা-ছবির ব্যবহারে বাংলা পত্রপত্রিকারা খোলনলচে পালটাচ্ছে, সেই সময়ই জন্ম ‘ইত্যাদি’ প্রকাশনীর। গোড়ায় সাহিত্য-পত্রিকা ‘শিলাদিত্য’ ও খবরকাগজ ‘পরিবর্তন’, পরে ‘খেলার আসর’, ‘সুকন্যা’, ‘কিশোর মন’-এর মতো এক গুচ্ছ সাময়িকীর জন্য পাঠকপ্রিয় হয়েছিল এই প্রকাশনা। প্রকাশিতব্যর লিস্টিতে ছিল দৈনিক সংবাদপত্র ‘সুপ্রভাত’ও, কিন্তু তা আর বেরোয়নি। ব্যবসাসফল হয়েও ক্রমে হারিয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় এই সম্ভাবনাময় সংস্থা। সেই নিয়েই বই ইত্যাদি কথা (সিটাডেল), লিখেছেন ইত্যাদি-র একদা-সম্পাদক চিরঞ্জীব।

আগুনের খেয়া

অভিনয় জগতে ক্ষণজন্মা ছিলেন তিনি। ১৯৭৭-এর ১২ মার্চ ছবির শু্যটিংয়ে স্টিমার থেকে জলে ঝাঁপ দেন কেয়া। স্টিমারের প্রপেলারে তাঁর দেহ আটকে যায়। তার পর দীর্ঘ কাল ‘নান্দীকার’-এর কেয়া চক্রবর্তী সীমাহীন জল্পনাকল্পনার কেন্দ্রে। অত্যন্ত শক্তিশালী এই অভিনেত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে ‘রহস্য’ ও ‘চক্রান্ত’ উদ্ঘাটনের দাবি উঠেছে বার বার। অতি সম্প্রতি সেতু প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আগুনের খেয়া (সম্পা: মধুময় পাল) ফের সেই বিতর্ক উস্কে দিল। কেয়াকে নিয়ে নতুন ও পুরনো কিছু লেখার পুনর্মুদ্রণ, তাঁর লেখা গল্প, নিবন্ধ, সাক্ষাত্‌কারের সুবৃহত্‌ এই সঙ্কলন অচেনা অতীতে আলো ফেলেছে। সঙ্গে রয়েছে কেয়ার মৃত্যুর পরে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন।

ইতিহাস

প্রাক্-ইসলাম আমল থেকে সুলতানি আমলের প্রথম একশো বছরের সুশৃঙ্খল ইতিহাস। সঙ্গে পরবর্তী সময়ের কথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে। প্রায় গোটা মুসলমান শাসনের ইতিহাস জাহিরুল হাসানের সাহিত্যিক কলমে: বাংলায় মুসলমানের ইতিহাস/ আদি যুগ (পূর্বা)। ‘শুধু মুসলমানের ইতিহাস নয়, বাংলা এবং ভারতেরও ইতিহাস।’ জানিয়েছেন জাহিরুল। পূর্বা থেকেই বেরল তাঁর সাহিত্যের ইয়ারবুক/ ঠিকানাপঞ্জি ২০১৫। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশেরও তথ্যাদি, সঙ্গে ওয়েবসাইট ই-মেল।

ছবি আঁকি

‘হঠাত্‌ বন্ধ ডাকায় পহেলগাঁওতে একদিন বেশি থেকে যেতে হল ফলে উত্‌সাহের চোটে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও ঘুরে ঘুরে আরও কিছু স্কেচ করে নিলাম।’ দেবাশীষ দেবের তুলিকলমে কাশ্মীরের স্কেচ, সাদাকালোর সঙ্গে রঙিনও। এমনই চোখ জুড়োনো স্কেচ তাঁর সান্দাকফু, লখনউ, বেনারস, দার্জিলিং, পুরী, শিলং, বুদ্ধগয়া, গোয়া, উত্তরাঞ্চল বা এমন আরও অনেক জায়গায়, সঙ্গে লেখা। ঘুরি বেড়াই ছবি আঁকি (ঋতি প্রকাশন)। সঙ্গে প্রচ্ছদের স্কেচটি সিকিমের ওখরে-র। কর্মসূত্রে সংবাদপত্রে যুক্ত এই মানুষটি মূলত হিউমারধর্মী ইলাস্ট্রেটর বলেই পরিচিত। ভাগ্যিস, এত ব্যস্ততার মধ্যেও ঘুরে বেড়ান, মনের আনন্দে ছবি আঁকেন, লেখেন। না হলে তো পরিচিত তক্মার ভেতরে লুকোনো অপরিচিত শিল্পীটিকে চেনা হত না।

স্তন্যপায়ী

রাতেই ঘোরাফেরা করে গেছো বিড়াল বা ভাম। আর দিনে গাছের ডালে আরাম করে। পাহাড়ি ভাম নিরামিশাষী হলেও ছোট পশুপাখিদের অনায়াসে শিকার করে ফেলে। বিপদে পড়লে সজারু গোঁ গোঁ শব্দ করে শরীরের পেছনের কাঁটাগুলো খাড়া করে দেয়। তা থেকে ঝুমঝুম শব্দ হয়! স্তন্যপায়ী হলেও বনরুইদের শরীর আঁশে ঢাকা। বিপদ দেখলে মা বাচ্চার চারপাশে গোল হয়ে নিজেকে পাকিয়ে রাখে। বাংলার স্তন্যপায়ীদের জীবন যাপন, তাদের স্বভাব-চরিত্র, রাগ-অভিমান নিয়ে স্তন্যপায়ী (ন্যাচারিজম) বইটি লিখেছেন কৌশিক। বহু রঙিন ছবিতে স্তন্যপায়ীদের কথা।

যুদ্ধের স্মৃতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে পরাধীন ভারত থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ সৈনিক ও শ্রমিককে যেতে হয়েছিল। এর মধ্যে ছিলেন অনেক বাঙালিও। পত্রপত্রিকা আর কিছু দুর্লভ বইয়ের পাতায় ছড়িয়ে আছে তাঁদের কথা। শিশিরপ্রসাদ সর্বাধিকারী বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে মেসোপটেমিয়া যান। ইরাকের কুত-অল-আমারায় ভারতীয় সেনার বীরত্বের প্রত্যক্ষদর্শী শিশিরপ্রসাদ আড়াই বছর তুর্কিদের হাতে বন্দি ছিলেন। এমনকী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইম্ফল রণাঙ্গনেও হাজির ছিলেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে লেখেন আভি লে বাগদাদ বইটি, এ বার সনত্‌কুমার নস্করের সম্পাদনায় এই আশ্চর্য সমর-স্মৃতিটি পুনঃপ্রকাশ করল নয়া উদ্যোগ।

অভিধান

তিনটি খণ্ডে প্রকাশ সম্পূণর্র্ হল বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান-এর (সম্পা: গোলাম মুরশিদ, সহযোগী সম্পা: স্বরোচিষ সরকার, বাংলা একাডেমি ঢাকা, পরি: নয়া উদ্যোগ)। দুই বাংলা মিলিয়ে এমন উদ্যোগ তার বিষয়গুরুত্ব, ব্যাপ্তি ও গভীরতার সঙ্গে দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার নিরিখেও তুলনারহিত। এখানে রূপান্তর সহ মূলশব্দের সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। শব্দের প্রথম ব্যবহার থেকে অর্থান্তর দেখানো হয়েছে প্রয়োগবাক্যের মাধ্যমে। ৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার মুক্তমঞ্চে বিকেল ৩.১৫-য় এ প্রসঙ্গে আলোচনায় থাকবেন গোলাম মুরশিদ ও বাংলা একাডেমি ঢাকার মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

রামানন্দ চর্চা

মুজতবা আলি একদা মন্তব্য করেন, ‘স্বর্গত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রাপ্য সম্মানের শতাংশের একাংশও পাবেন বলে আমি আর আশা করি না।... এদেশে এরকম একটি লোক আজ চাই। কর্তাদের কানে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য।’ ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’-র স্বাধীনচেতা স্বদেশপ্রেমিক সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (১৮৬৫-১৯৪৩) চেতাবনী দিতে কোনও দিন পিছপা হননি। সঞ্চয় শূন্য, তবু কর্তৃপক্ষের অধীনতা স্বীকার করেননি, চাকরি ছেড়েছেন। পত্রিকা ও বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা সুবিদিত। বহু লেখক তৈরি করেছেন তিনি। উত্‌সাহ দিয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানীদের। পত্রিকায় রঙিন ছবি প্রকাশ করে শিল্পীদের যে মর্যাদা দিয়েছেন, তা তাঁর আগে হয়নি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক এক দিকে কবির সাহিত্যজীবনে জোয়ার এনেছিল, অন্য দিকে বিশ্বভারতীর স্বপ্ন রূপায়ণেও রামানন্দের ভূমিকা কম ছিল না। দেশ ও বিদেশের বহু মনীষীর সখ্য ও সঙ্গ পেয়েছেন তিনি। সার্ধশতবর্ষেও অচর্চিত এই মানুষটিকে নিয়ে চমত্‌কার সংকলন তৈরি করেছে ‘কোরক’ (সম্পা: তাপস ভৌমিক)। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আশুতোষ, সজনীকান্ত, উপেন্দ্রকিশোরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা যেমন আছে, ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় রবীন্দ্র ও বঙ্কিম চর্চা, মন্বন্তর প্রসঙ্গও আলোচিত। অর্ণব নাগ বিভিন্ন পত্রিকা থেকে উদ্ধার করেছেন রামানন্দের রচনা-সম্ভার, তাঁর এই পঞ্জি কাউকে উত্‌সাহিত করুক রচনাবলি প্রকাশে। সঙ্গের ছবিটি ‘কোরক’ পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকে, শিল্পী নির্মলেন্দু মণ্ডল।

পত্রিকাপ্রাণ

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

নীরদ সি চৌধুরী ১৯৪০ সালে তাঁর সম্পাদিত ‘সমসাময়িক’ পত্রিকায় ‘একেলা’ ছদ্মনামে লিখেছিলেন ‘পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ইতিহাস’ নামে একটি প্রবন্ধ। সত্যজিত্‌ রায় দীর্ঘ দিন সে লেখার সন্ধান করেও পাননি। অসুস্থ অবস্থায় নির্মাল্য আচার্যকে দেখতে গিয়েছিলাম। উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন দুষ্প্রাপ্য কী কী আছে। আমি ওই পত্রিকার কথা বলতেই উনি লাফিয়ে উঠেছিলেন।’’ বলছিলেন সন্দীপ দত্ত। কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণপুরুষ। পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক। রাধামোহনপুর বিবেকানন্দ স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে ১০০ টাকা বেতনে যোগদান। সঙ্গে ‘লোকসেবক’ কাগজে ৫০ টাকায় পার্টটাইম। বেশির ভাগটাই চলে যেত পত্র-পত্রিকা কিনতে। একদিন ন্যাশনাল লাইব্রেরির বারান্দায় দেখেন অনেক পত্র-পত্রিকা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো ফেলে দেওয়া হবে শুনে মন খারাপ হয়ে যায় সন্দীপের। ’৭২ সালে প্রথম লিটল ম্যাগাজিনের প্রদর্শনী করেন। এর পর পত্র-পত্রিকা সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে। ’৭৮-এর ২৩ জুন গবেষণা কেন্দ্রের সূচনা ১৮ এম টেমার লেনের পৈতৃক বাড়িতে। জানালেন, ‘বঙ্গদর্শনের প্রথম সংখ্যাটি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। রয়েছে ‘শতভিষা’, ‘কবিতা’র প্রায় সব সংখ্যাই। রয়েছে ‘সবুজ পত্র’, ‘ভারতী’। আছে কাঁথি থেকে প্রকাশিত ‘তিলোত্তমা’, যার সম্পাদক বসন্তকুমার জানা ছিলেন গৃহভৃত্য। উত্‌সাহী পড়ুয়া, গবেষকরা নিত্যই আসেন। প্রায় ৭৫ হাজার পত্রপত্রিকা রয়েছে সংগ্রহে, দিনে দিনে আরও বাড়ছে। জায়গা না পেলে এই অমূল্য সংগ্রহশালার কী হবে, তা নিয়ে চিন্তিত সন্দীপবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE