Advertisement
E-Paper

কসবায় পিটিয়ে খুন যুবক, সন্দেহে সিন্ডিকেট-চক্র

পাড়ায় পাড়ায় বহুতল তৈরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হওয়া ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের কারবারকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল কলকাতা ও শহরতলিতে নতুন কিছু নয়। তবে এ বার দু’টি সিন্ডিকেটের মধ্যে এই ধরনের গণ্ডগোলের জেরে কসবায় লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হল এক যুবককে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম মনোজ সাহু (৩৩)। রক্তাক্ত মনোজকে মুমূর্ষু অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে বোসপুকুর রোড থেকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০১:৪০
মনোজ সাহু

মনোজ সাহু

পাড়ায় পাড়ায় বহুতল তৈরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হওয়া ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের কারবারকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল কলকাতা ও শহরতলিতে নতুন কিছু নয়। তবে এ বার দু’টি সিন্ডিকেটের মধ্যে এই ধরনের গণ্ডগোলের জেরে কসবায় লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হল এক যুবককে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম মনোজ সাহু (৩৩)।

রক্তাক্ত মনোজকে মুমূর্ষু অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে বোসপুকুর রোড থেকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। বোসপুকুরের মসজিদপাড়ার বাসিন্দা মনোজের স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। তাঁদের আড়াই বছরের একটি মেয়েও আছে। মনোজ পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসায় কসবার ওই তল্লাটে যে সিন্ডিকেট চলছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে পুলিশও। ডিসি (এসএসডি) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করা নিয়ে দু’টি সিন্ডিকেটের মধ্যে কিছু দিন ধরেই গোলমাল চলছিল। তার জেরেই কসবায় ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে।” স্থানীয় কাউন্সিলর, সিপিএমের দীপঙ্কর দে-ও খুনের কারণ হিসেবে দু’টি সিন্ডিকেটের বিরোধের কথা জানিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত এক জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত ওই যুবকের নাম শেখ কুতুবউদ্দিন ওরফে ভগলু। তদন্তকারীদের দাবি, ভগলু মনোজের প্রতিপক্ষ সিন্ডিকেটের লোক। পুলিশের বক্তব্য, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে ভগলু ছাড়াও মনোজ আরও সাত-আট জনের নাম করেছেন। যাদের অন্যতম স্থানীয় যুবক মুন্না পাণ্ডে।

তদন্তকারীরা জানান, মনোজের প্রতিপক্ষ সিন্ডিকেটের নেতা এই মুন্না। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। আবার মনোজ যে সিন্ডিকেটে ছিল, তার নেতার নাম বাপ্পা। মুন্না ও বাপ্পার দলের মধ্যে আগেও গণ্ডগোল হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর। হাসপাতালে শুয়ে মনোজ পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে একলা পেয়ে মুন্না, ভগলু-সহ সাত-আট জন তাঁকে রাস্তায় ফেলে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটায়।

পুলিশি সূত্রের খবর, ধৃত ভগলু আবার জেরায় দাবি করেছে, মনোজ ও তাঁর সঙ্গীরা আগে আক্রমণ করেছিল তাদের। এর পরেই তারা পাল্টা মারে মনোজকে। ভগলুর অভিযোগের ভিত্তিতেও অন্য একটি মামলা রুজু করে মনোজের সঙ্গীদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মুন্না, মনোজ, বাপ্পা সকলে পাঁচ বছর আগেও একই সিন্ডিকেটে কাজ করত। পরে দু’টি সিন্ডিকেট তৈরি হয়। মাস দেড়েক আগে স্থানীয় এক যুবককে মুন্না ও তার সঙ্গীরা মারধর করলে ওই ঘটনায় মুন্নার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বয়ান দিয়েছিলেন মনোজ। সেটাই মনোজের উপরে হামলার অন্যতম কারণ কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

শুক্রবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ কসবা থানার পুলিশ খবর পায়, বোসপুকুর ত্রিবর্ণ পার্কের কাছে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, বোসপুকুর রোডের উপরে এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। ওই যুবকের নাম যে মনোজ সাহু, বাসিন্দারা তা জানান পুলিশকে। মনোজকে প্রথমে এম আর বাঙুর ও তার পরে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এ দিন সকালে মৃত্যু হয় তাঁর।

এলাকার মানুষের অভিযোগ, “হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মুন্না ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বহু দিন ধরেই এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। পুলিশ তো বটেই, মন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানকে এ বিষয়ে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।” তাঁদের বক্তব্য, ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের বরাত পাওয়ার জন্য এলাকায় মুন্নার জুলুম লেগেই ছিল। বিশেষত যখন ই এম বাইপাস লাগোয়া কসবার ওই তল্লাটে বহুতল নির্মাণের রমরমা বাজার।

মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মুন্না ও তার দল মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা, নিরীহ লোকজনকে মারধরের মতো অসামাজিক কাজকর্ম চালাচ্ছে।

পুলিশ জানায়, মুন্না জোড়া খুনের ঘটনায় আগেই অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে তোলাবাজিরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। খুনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং কয়েক বছর জেলে থাকার পরে সে মুক্তি পায় জামিনে। স্থানীয় গুন্ডা হিসেবে মুন্নাকে কসবা থানার পুলিশ লোকসভা নির্বাচনের আগেও গ্রেফতার করেছিল। জামিনে ছাড়া পেয়ে সম্প্রতি সে এলাকায় ঢোকে।

৯১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সিপিএমের দীপঙ্কর দে-র অভিযোগ, “তৃণমূলের আশ্রয় ও প্রশ্রয়েই মুন্নার এত বাড়বাড়ন্ত।” তবে মন্ত্রী ও কসবার বিধায়ক জাভেদ খানের দাবি, “দু’দল সমাজবিরোধীর কোন্দলের ফলে এক জন খুন হয়েছেন। কোনও পক্ষের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক নেই।” মন্ত্রী জানান, মুন্নার বিরুদ্ধে তিনি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন।

তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?

ডিসি (এসএসডি)-র বক্তব্য, “আমরা তো মুন্নার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। সম্প্রতি অস্ত্র আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জামিনে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে সে এই কাণ্ড ঘটাল।”

kasba manoj murmushu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy