Advertisement
E-Paper

গুটখা কেনার টাকা চেয়ে না মেলায় মাকে ‘খুন’

অনেক ক্ষণ ধরে ডাকাডাকি সত্ত্বেও কোনও সাড়া মিলছিল না। অবশেষে দরজা ভেঙেই ভিতর ঢুকে পড়েন প্রতিবেশীরা। ঢুকেই তাঁরা দেখেন, ঘরের দেওয়ালে রক্তের দাগ। মেঝেতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বিধবা মা। তাঁর কপালে গভীর ক্ষত। ওই ঘরেরই কোণে বসে তাঁর ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার এক চিকিৎসককে ডেকে আনেন পড়শিরা। চিকিৎসক এসে জানান, মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। এর পরে পড়শিরাই খবর দেন পুলিশকে। পুলিশের কাছে এক প্রতিবেশী অভিযোগ করেন, ছেলের হাতেই খুন হয়েছেন মা। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় নিহত ওই মহিলার ছেলেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:০১

অনেক ক্ষণ ধরে ডাকাডাকি সত্ত্বেও কোনও সাড়া মিলছিল না। অবশেষে দরজা ভেঙেই ভিতর ঢুকে পড়েন প্রতিবেশীরা। ঢুকেই তাঁরা দেখেন, ঘরের দেওয়ালে রক্তের দাগ। মেঝেতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বিধবা মা। তাঁর কপালে গভীর ক্ষত। ওই ঘরেরই কোণে বসে তাঁর ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার এক চিকিৎসককে ডেকে আনেন পড়শিরা। চিকিৎসক এসে জানান, মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। এর পরে পড়শিরাই খবর দেন পুলিশকে। পুলিশের কাছে এক প্রতিবেশী অভিযোগ করেন, ছেলের হাতেই খুন হয়েছেন মা। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় নিহত ওই মহিলার ছেলেকে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটে শকুন্তলা পার্কের শ্যামসুন্দর পল্লি ফার্স্ট লেনে। পুলিশ জানায়, মৃত ওই মহিলার নাম বেলারানি দে (৬২)। তাঁকে খুনের অভিযোগে তাঁর ছেলে শিবশঙ্করকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জেরায় শিবশঙ্কর জানায়, এ দিন দুপুরে সে গুটখা কেনার জন্য মায়ের কাছে টাকা চেয়েছিল। মা দিতে রাজি হননি। তাই রাগের চোটে মায়ের মাথা সজোরে মেঝেতে ঠুকে দেয় সে। পুলিশের অনুমান, তাতেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয় বেলারানিদেবীর।

প্রাথমিক তদন্তের পরে ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, শিবশঙ্কর বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল। বেলারানিদেবীর স্বামী সুধাংশুরঞ্জন দে কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল ছিলেন। বছরখানেক আগে তিনি মারা যান। তার পর থেকে স্বামীর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত ওই মহিলার। তাঁদেরই এক প্রতিবেশী ইতু ঘোষের অভিযোগ, শিবশঙ্কর কোনও কাজকর্ম করত না। পান, গুটখার নেশা করতে প্রায় দিনই মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায় করত সে। এমনকী টাকা না পেলে মাকে মারধরও করত ওই যুবক। বুধবারও বেলারানিদেবীকে পুকুরে ঠেলে ফেলে দেয় সে। এ ছাড়া, এর আগেও সে তার মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন ইতুদেবী।

এ দিন শ্যামসুন্দর পল্লি ফার্স্ট লেনে গিয়ে দেখা যায়, বেলারানিদেবীর বাড়ির সামনে জটলা। একতলা বাড়ির এক দিকে দু’কামরার পাকা দু’টি ঘর। বাড়ির অন্য দিকে ছোট পুকুর। পুকুরের পাশে খোলা জায়গায় একটি বাগান। ইতুদেবীর অভিযোগ, শিবশঙ্কর প্রায়ই তার মাকে মারধর করত। ওই বাড়ি থেকে বেলারানিদেবীর চিৎকার শুনে একাধিক বার পাড়ার লোকজন তাঁকে ছেলের মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। সেই কারণে তিনি বা অন্য পড়শিরা ঘন ঘন ওই বিধবা মহিলার খোঁজ নিতেন। এ দিন ইতুদেবী পুলিশকে জানান, সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বেলারানিদেবীকে বেশ ক’বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে তিনি দরজার কড়া নাড়েন। কেউ না খোলায় তিনি অন্য পড়শিদের ডাকেন। তাঁরা দরজা ভেঙে ঢোকেন। পুলিশ জানায়, ইতুদেবীর স্বামী প্রবীর ঘোষ শিবশঙ্করের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন।

প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানান, ওই যুবক ব্লাড সুগারের রোগী ছিলেন। ক’মাস আগে তাঁর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে ক্ষত হয়। ছেলেকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করান বেলারানিদেবী। হাসপাতাল থেকে ফিরে ফের মাকে মারধর শুরু করে ছেলে। তবে পাড়ার লোক জানান, এমনিতে শিবশঙ্কর পাড়ার লোকজনের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করত না। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে পান-গুটখার টাকা চেয়ে না পেলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত সে। ছেলের জন্য চিন্তা করে বেলারানিদেবীও মানসিক ভাবে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিছু দিন ধরে তিনি শারীরিক ভাবেও অসুস্থ ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy