রাতপাহারার বিবিধ ব্যবস্থা রয়েছে। অন্তত পুলিশের তেমনই দাবি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অপরাধ ঘটে চলেছে। বারংবার প্রশ্ন উঠছে নজরদারির ব্যবস্থা নিয়ে। যদিও সে কথা মানতে নারাজ পুলিশ। বরং বাসিন্দাদের সচেতনতা নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে তারা। বাস্তবে নজরদারির হাল কী, বুধবার রাতে এক ব্যক্তির গাড়িতে এক দল দুষ্কৃতী জোর করে উঠে নগদ টাকা, গয়না ছিনতাই করে চম্পট দেওয়ার ঘটনায় ফের তা বেআব্রু হয়ে পড়ল।
ঘটনাস্থল সল্টলেক।
কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?
সল্টলেকের সিএ আইল্যান্ডের মোড়ের কাছে গাড়ি থামিয়ে সিগারেটের খোঁজ করছিলেন ইই ব্লকের বাসিন্দা নীলাঞ্জন ঘোষ। রাত তখন প্রায় এগারোটা। অভিযোগ, আচমকা তাঁর গাড়িতে পুরুষ ও মহিলাদের পোশাক পরা চার জন জোর করে উঠে বসে। তাঁদের গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করতেই নীলাঞ্জনবাবুকে চেপে ধরে দুষ্কৃতীরা। গাড়ির সামনের সিটেই ছিল নগদ তিন হাজার টাকা সমেত মানিব্যাগ। সেটি দেখতে পেয়েই দুষ্কৃতীরা নিয়ে নেয়। উল্টোডাঙার দিকে গাড়ি নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয় নীলাঞ্জনবাবুকে। সে অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে চার মাথার ওই মোড় থেকে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস হয়ে উল্টোডাঙার দিকে এগোতে থাকেন তিনি।
নীলাঞ্জনবাবুর অভিযোগ, হাডকো মোড়ের আগে সোনার চেন, আংটি কেড়ে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায় দুষ্কৃতীরা। তিনি এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলার চেষ্টাও করেন। কিন্তু রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে তাঁকে মারার চেষ্টা করে এক দুষ্কৃতী। সে সময়ে পিছন থেকে একটি ট্যাক্সি ঘটনাস্থলে চলে আসে। তাতে মহিলার পোশাকে আরও এক ব্যক্তি ছিলেন। সেই গাড়িতে উঠেই দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয় বলে নীলাঞ্জনবাবুর দাবি।
এর পরে গাড়ি নিয়ে পিছু ধাওয়া করেন ওই ব্যক্তি। তিনি জানান, দুষ্কৃতীরা ট্যাক্সি নিয়ে হাডকো মোড় থেকে ইউ টার্ন নিয়ে ফের বাইপাসে যায়। সেখান থেকে উড়ালপুল ধরে লেকটাউনের দিকে এগোতেই গোলাঘাটার কাছে গাড়ির গতি কমিয়ে ফের সল্টলেকের দিকে যায় তারা। তার পরে আর দুষ্কৃতীদের গতিবিধি টের পাননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নীলাঞ্জনবাবু। তাঁর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে সল্টলেক উত্তর থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা হিজড়ে।
অভিযোগকারী সল্টলেকের প্রবেশপথে পুলিশ কিয়স্কে ঘটনাটি জানালেন না কেন? জবাবে নীলাঞ্জনবাবু বলেন, “সল্টলেক থেকে বেরোনোর পথে কিংবা বাকি রাস্তায় কোনও পুলিশকর্মীকে দেখতে পাইনি।”
সল্টলেক পুলিশের এক কর্তা জানান, এর আগেও সল্টলেকে হিজড়েদের একটি দল এক ব্যক্তিকে হয়রান করেছিল। অভিযুক্তদের সে বার গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে সেই চক্রের কোনও যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এই চক্রের সদস্যরা সল্টলেকে ঢুকছে। তাদের সল্টলেক থেকে বারও করে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে সল্টলেকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কেন ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারল না? অভিযোগ দায়ের না হলে পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারত?
তদন্তকারীদের একাংশের পাল্টা দাবি, ঘটনাটি সল্টলেকে নয়, উল্টোডাঙার কাছে ঘটেছে। অভিযোগকারীর তথ্যে কিছু অসঙ্গতিও রয়েছে। তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে উল্টোডাঙা যাওয়ার দু’টি পথেই বুধবার রাতে নজরদারির ব্যবস্থা ছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ। নজরদারির গাফিলতির কথা অস্বীকার করে সল্টলেকের এডিসিপি অজয়প্রসাদ বলেন, “প্রতিটি প্রবেশপথে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। রাতে নজরদারির ক্ষেত্রেও কোনও গাফিলতি হয়নি। ঘটনাটি উল্টোডাঙার কাছে ঘটলেও আমরা তদন্ত করছি।” একই সুরে কলকাতা পুলিশের এক কর্তারও দাবি, বাইপাসে রাতভর নজরদারি থাকে। এমন কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। পুলিশের দাবি, বাসিন্দারা বিপদে পড়লে ১০০ ডায়াল বা কমিশনারেটে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো অনেকেই ব্যবহার করছেন না। এ ক্ষেত্রেও ওই সব নম্বরে কোনও অভিযোগ আসেনি বলে তাদের দাবি।
সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের অন্যতম কর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুলিশ ছিল কি না, তার চেয়ে বড় কথা অপরাধকে ঠেকানো গেল না। বারবার পুলিশি ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েও কোনও লাভ নেই। বরং কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে একযোগে পুলিশ ও বাসিন্দাদের ভাবার সময় এসেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy