Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গতি নিয়ে গুঁতোগুঁতি রাজ্য-রেলের

বেলা ১১টা। ই এম বাইপাসের করুণ হাল পরিদর্শনে ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে রুবির মোড়ে হাজির হয়েছিলেন কেএমডিএ-র ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল ভুবনেশ্বর কোনার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড-এর (আরভিএনএল) নিউ গড়িয়া-দমদম মেট্রো প্রকল্পের চিফ প্রোজেক্ট ম্যানেজার অমিত রায় এবং তাঁদের ইঞ্জিনিয়ারেরাও।

খন্দে জল মাপছেন কেমডিএ-র এক কর্মী।

খন্দে জল মাপছেন কেমডিএ-র এক কর্মী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০০:১০
Share: Save:

বেলা ১১টা। ই এম বাইপাসের করুণ হাল পরিদর্শনে ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে রুবির মোড়ে হাজির হয়েছিলেন কেএমডিএ-র ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল ভুবনেশ্বর কোনার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড-এর (আরভিএনএল) নিউ গড়িয়া-দমদম মেট্রো প্রকল্পের চিফ প্রোজেক্ট ম্যানেজার অমিত রায় এবং তাঁদের ইঞ্জিনিয়ারেরাও। সকলে মিলে ঘুরে দেখেন টেগোর পার্ক থেকে রুবির মোড় পর্যন্ত। সেখানে উভয় পক্ষে উত্তেজিত কথাকাটাকাটিও হয়।

কেএমডিএ: কী ভাবে কাজ করছেন? রাস্তার হাল কী বানিয়েছেন দেখেছেন?

আরভিএনএল: বাইপাস আমাদের জন্য খারাপ হয়নি।

কেএমডিএ: আপনাদের জন্যই হয়েছে। এ ভাবে রাস্তার মাঝে সঠিক পরিকাঠামো ছাড়া কাজ করছেন! বৃষ্টির জল জমছে। উচিত ছিল জল জমার সঙ্গে সঙ্গে তা পাম্প করে বার করা। তা করছেন না বলে সেই জল শুষে রাস্তার নীচের মাটি নরম হয়ে ধস নামছে।

আরভিএনএল: যেখানে কাজ হচ্ছে, সেখানে একটু জল তো জমবেই! তবে, তার জন্য বাইপাসের এই হাল হয়নি। আপনারা রাস্তার দু’ধারের অবস্থা দেখেছেন? সেখানে তো আপনাদের বিআরটিএস প্রোজেক্টের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। বৃষ্টি হলে সেখানেও তো জল জমছে। সেখান দিয়েও জল ভিতরে ঢুকছে। আর তার জন্যই বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আগে ওটা সারান!

কেএমডিএ: আপনাকে ওটা দেখতে হবে না। আমাদের কাজ আমরা করছি। আপনি আপনার কাজটা ঠিক করে করুন। এখানে এসে দেখুন। নতুন রাস্তা কী ভাবে ফেটেছে। দিন কয়েক আগেই একাংশে ধস নেমেছে। তার পরেও বলবেন আপনাদের কোনও দোষ নেই?

আরভিএনএল: আপনারা রাস্তা ঠিক ভাবে বানাচ্ছেন না। আর তা খারাপ হয়ে গেলেই আমাদের উপরে দোষারোপ করছেন। ঠিক করে বানানো রাস্তা কখনও এ ভাবে ভাঙে? মানছি, কয়েকটা জায়গায় জল জমেছে। কিন্তু যেখানে জল জমেনি, রাস্তা তো সেখানেও ভেঙেছে। সেটাকে তা হলে কী বলবেন? সেটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য হয়নি।

কেএমডিএ: আপনাদের এই ব্যারিকেড করা প্রোজেক্ট সাইট থেকে দিনের পর দিন এত জল ঢুকেছে, তারই প্রভাব পড়েছে বাইপাসের উপরে। এ ভাবে রাস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আপনারা সঠিক ভাবে কাজ না করে রাস্তার এই পরিস্থিতি করবেন, আর আমরা বারবার সারাব, এ তো হয় না। বলে দিচ্ছি, আপনারা আগে এই জল সরানোর ব্যবস্থা না করলে আমরা নতুন করে রাস্তা সারানোর কাজে হাত দেব না।

আরভিএনএল: আমাদের বলে কোনও লাভ নেই। আপনারা বললে আমরা কোনও একটা ব্যবস্থা করে জল সরিয়ে দেব। কিন্তু তাতে এই সমস্যা মিটবে না। তখন কী করবেন? বাইপাসের এই বেহাল দশা আপনাদের বিআরটিএস প্রোজেক্টের জন্য হয়েছে। জল জমছে। সেখানেই জঞ্জাল ফেলছে পুরসভা। কই সেগুলোর বেলায় তো কিছু বলছেন না!

কেএমডিএ: আপনাদের বলা হল তো! নিজেদের কাজের জায়গাটা আগে ঠিক করুন। তা হলেই সমস্যা মিটে যাবে। মন্ত্রী জিজ্ঞাসা করলে পরিষ্কার সে কথাই বলে দেব। রাজ্য সরকারের বিআরটিএস-এর যে তহবিল আছে, তা তো বারবার রাস্তা বানাতেই লেগে যাচ্ছে। তা হলে ন্যায্য কাজ করব কী করে?

আরভিএনএল: এ তো আশ্চর্য কথা! রাস্তার উপর প্রকল্প হলে এটুকু তো হবেই। আপনারাই বা কেমন করে রাস্তা বানাচ্ছেন যে, এইটুকু ধকল সহ্য করতে পারছে না?

কেএমডিএ: ওটা আপনাদের দেখতে হবে না।

পুরমন্ত্রীর বক্তব্য

কেএমডিএ-কে বলেছি, আমি কিছু শুনব না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু করতে হবে। তাতে যদি টাকা লাগে, নগরোন্নয়ন তহবিল থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু মানুষের সমস্যা মেটাতেই হবে। মেট্রোকে বলেছি, ব্যারিকেড খুলে দিতে। তাতে অতিরিক্ত জল রাস্তার উপর দিয়ে ধারে চলে যাবে। আর যে জল জমছে, তার জন্য পাঁচটা পাম্প করতে বলেছি। ভারী গাড়িতে রাস্তার উপর চাপ কমাতে রবারের গার্ড ব্যবহার করতে বলেছি। যেখানে স্তম্ভ বসানো হয়ে গিয়েছে, সেখানে থকথকে জিনিস ফেলতে বলেছি, যাতে জল না জমে। মেট্রো ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়েছে।

মেট্রোর বক্তব্য

বড় রাস্তার উপরে মেট্রো প্রকল্প হলে আগে সেই কাজ হয়, পরে রাস্তা তৈরি হয়। বারবার বলছি, এই ভরা বর্ষায় রাস্তা কেটে নতুন করে তৈরি না করতে। কিন্তু কেএমডিএ তা-ই করছে। পিচের ম্যাটের তলায় জল ঢুকছে সেখান থেকেই। অথচ তার দায় আমাদের উপরে চাপানো হচ্ছে। এখনও প্রায় দেড় বছর কাজ হবে। এখন বাইপাস আপাতত মেরামত করে রাখা উচিত ছিল। রাস্তার ধারে ক্যানাল বা নালার উপরে ব্রিজ করা উচিত ছিল। কেএমডিএ তা করেনি। করেনি নিকাশির ব্যবস্থাও। এগুলো না হলে ব্যারিকেড খুলে দিলেও রাস্তার জল সরবে না।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE