তিনি পরিবহণমন্ত্রী। তিনি আবার তৃণমূলপন্থী ট্যাক্সিমালিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স অ্যাসোসিয়েশনেরও নেতা। এ হেন মদন মিত্র সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই হেফাজতে চলে যাওয়ায় খানিকটা বেকায়দায় শাসক দল। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ট্যাক্সি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, বিএমএস-সহ বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি এবং ট্যাক্সিমালিক সংগঠন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন। নেতাহীন অবস্থায় কী ভাবে ওই ধর্মঘটের মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে খানিকটা ধন্দে শাসক দলের নেতারা।
দলের এক নেতার কথায়, “এ সব ধর্মঘটের আগে আমাদের মদনদার পরিকল্পনার উপরেই ভরসা ছিল। তিনি না-থাকায় খানিকটা বেকায়দায় তো আমরা পড়েইছি। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, যতটা সম্ভব সেই অভাব পূরণ করে ট্যাক্সি ধর্মঘট যাতে ব্যর্থ করা যায়।” এ সব যুক্তি অবশ্য মানছেন না প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শম্ভুনাথ দে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা দু’দিন ধরেই স্ট্যান্ডে-স্ট্যান্ডে সভা করছি। মিলিয়ে নেবেন, ধর্মঘট ব্যর্থ হবে। প্রচুর গাড়ি চলবে।” কারণ হিসেবে ভবানীপুরের ওই তৃণমূল নেতার দাবি, “আগের ধর্মঘটে চালকদের কোনও লাভ হয়নি। সেটা তাঁরা বুঝেছেন। এ বার আর ওঁরা ও-পথ মাড়াবেন না।”
প্রোগ্রেসিভের নেতার যুক্তি উড়িয়ে দিচ্ছেন ধর্মঘটী ট্যাক্সিমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তাঁদের যুক্তি, একে তো মন্ত্রী নেই। তার উপরে শাসক দলের সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। কাজেই ধর্মঘট সর্বাত্মক হবে। সিটু নেতা অনাদি সাহুর কথায়, “প্রোগ্রেসিভের আর কোনও অস্তিত্বই নেই। মদন মিত্রকে সিবিআই গ্রেফতার করায় ওদের হাল আরও খারাপ। চালক এবং মালিক— দু’পক্ষই বুঝে গিয়েছেন, ট্যাক্সির স্বার্থে ওরা কিছুই করে না। সে কারণে, ওই সংগঠনের সঙ্গে কোনও ট্যাক্সিচালক কিংবা মালিক আর নেই। পুজোর আগে আমাদের সঙ্গে ওদের সংগঠনের সদস্যেরাও ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন। এ বারও হবেন।”
মন্ত্রী না থাকায় পরিবহণ দফতরের কাজ চলছে নবান্ন থেকে। তাই ধর্মঘটের পাশাপাশি দুপুর ১টায় হাওড়া স্টেশন থেকে নবান্ন অভিযানের ডাকও দিয়েছে সিটু। অনাদিবাবু বলেন, “এখন তো পরিবহণমন্ত্রী সিবিআই হেফাজতে। তাঁর জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পরিবহণ দফতর সামলাচ্ছেন। সে কারণেই আমরা সিটিসি ভবনের বদলে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছি।”
এই অভিযানে অবশ্য অংশ নিচ্ছে না ট্যাক্সিমালিক সংগঠন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের নেতা বিমল গুহ বলেন, “আমাদের ১৮ হাজার সদস্যের কেউই শুক্রবার গাড়ি রাস্তায় বার করবেন না। ধর্মঘট সফল হবেই। তবে সাধারণ মানুষের জরুরি প্রয়োজনে কেউ ট্যাক্সি নিয়ে বেরোলে আমরা তাঁদের আটকাব না।” বিমলবাবু, অনাদিবাবুদের বক্তব্য, পুজোর আগে পরিবহণমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, পুজোর পরে পুলিশি জুলুম কমবে। ট্যাক্সির ভাড়া বাড়বে। কিন্তু আশ্বাস বাস্তবায়িত হওয়া দূরে থাক, পুজোর পরে ফের পুলিশি জুলুম বেড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই বলেই দাবি ট্যাক্সিচালক এবং মালিক সংগঠনের নেতাদের।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ট্যাক্সি ধর্মঘট রুখতে রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে সরকারি বাস নামানো হবে। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “অন্য দিন অফিসটাইমে যেখানে সিএসটিসি-র সাড়ে চারশো বাস চলে, সেখানে শুক্রবার চলবে প্রায় সাড়ে সাতশো। নিত্যযাত্রীরা যাতে কোনও রকম অসুবিধায় না পড়েন, সে জন্য শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন এবং দমদম বিমানবন্দর থেকে বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থা থাকবে।” মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মদন মিত্র না থাকলেও পরিবহণ দফতর চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy