সল্টলেকের নয়াপট্টির বাসিন্দা দুই যুবকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর ১৪ জুলাই ঝাড়খণ্ডের বোকারোয় লোহা কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হন শুকদেব দাস ও বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে নয়াপট্টির ওই দুই যুবক। তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিধাননগরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়। প্রথমে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ, পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিআইডি তাঁদের সন্ধানে নামে। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, বিষয়টি যেহেতু আন্তঃরাজ্য অপরাধ সম্পর্কিত, তাই সিবিআই ওই দুই যুবকের সন্ধানে এ বার তদন্ত শুরু করবে।
বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, বোকারো যাওয়ার দিন শুকদেব ও বিশ্বজিতের সঙ্গে আরও তিন যুবক ছিলেন। তাঁঁদের মধ্যে এক জনের পরিচয় জানা যায়নি। কিন্তু, বাকি দু’জন যে পরিচয় বিশ্বজিতদের দিয়েছিলেন, তা মিথ্যা বলেই জেনেছে পুলিশ। তাঁদের আসল নাম গৌতম কুমার ওরফে ভোলা সিংহ এবং মহেন্দ্র রাম ওরফে বিকাশ সিংহ। গৌতম বিহারের নালন্দা জেলার বাসিন্দা। বিকাশের বাড়ি পটনায়।
পুলিশ জেনেছে, বোকারো যাওয়ার দিন বিশ্বজিৎ তাঁর মায়ের সঙ্গে রাতে ফোনে কথা বলেছিলেন। সেই শেষ। এর পরে বিশ্বজিতের মোবাইল এবং আর একটি অজানা নম্বর থেকে বিশ্বজিৎদের বাড়িতে ফোন এসেছিল। ওই ফোনে বলা হয়, ‘রুপিয়া দেনে সে ছোড় দেগা।’ এর পরেই বিধাননগরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে ওই দুই যুবকের পরিবার। থানার আইসি পিনাকি রায় এবং তদন্তকারী অফিসার সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তিন বার বিহারে যায়। বিশ্বজিতের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন পরীক্ষা করে দেখা যায়, শেষ বার তিনি জসিডি এলাকার একটি হোটেলে ছিলেন। সেই হোটেল, আশপাশের ১০টি থানা, হাসপাতাল-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ফেসবুক থেকেও বিশ্বজিৎ ও শুকদেবের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা হয়। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও ওই দু’জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও বিশ্বজিতের বাড়িতে ফোন আসছে। কিন্তু ফোনে টাকার কথা বললেও তার পরিমাণ বলা হচ্ছে না। তাই পুলিশের অনুমান, স্রেফ টাকার জন্য এই অপহরণ নয়। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করেছিল বিধাননগর পুলিশ। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও শুকদেব ও বিশ্বজিতের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পাঁচ মাস ধরেও বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ শুকদেব ও বিশ্বজিতের সন্ধান না পাওয়ায় শুকদেবের মা রাধারানিদেবী কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার অবশ্য দুই যুবকের পরিবার কোনও কথা বলতে চায়নি। বিশ্বজিতের মা রাধারানি দাস শুধু বলেন, “ছেলে ফিরে এলে সব প্রশ্নের জবাব দেব।”
তবে বিধাননগর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কোনও ক্ষোভ জানাননি তাঁরা। এমনকী বিশ্বজিতের আইনজীবী সুনীলকুমার চক্রবর্তীও জানান, রাজ্য পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
গত ২২ জানুয়ারি মামলাটি হাইকোর্টে ওঠে। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, আদালত প্রয়োজন মনে করলে ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-কে দিতে পারে। হাইকোর্ট সে দিন নির্দেশ দেয়, ওই দুই যুবকের হদিস পেতে কী করা হল, সে ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট দিতে হবে।
সরকারী আইনজীবী সাবির আহমেদ এ দিন আদালতে জানিয়েছেন, শুকদেব ও বিশ্বজিতের সন্ধান পেতে সিআইডি অফিসারেরা ঝাড়খণ্ডের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন। একাধিক লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নিখোঁজদের মোবাইলের কল ডিটেল্স পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বেশ কিছু জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই দু’জনের খোঁজ মেলেনি।
সরকারি আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সিআইডি-র তদন্তে তেমন কোনও গাফিলতি না মিললেও নিখোঁজের ঘটনায় ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি দুষ্কৃতীদল জড়িত বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি আন্তঃরাজ্য অপরাধমূলক। তাই এ ক্ষেত্রে সিআইডি-র চেয়ে সিবিআই আরও ভাল তদন্ত করতে পারবে। ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই ধরনের তদন্তে পারদর্শী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy